জাহান্নামের আগুন যে চোখ স্পর্শ করবে না

প্রত্যেক ঈমানদারের একমাত্র উদ্দেশ্য হওয়া উচিত আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও পরকালীন মুক্তি। কারণ পরকালীন জীবন অনন্ত। সেখানে যদি (নাউজুবিল্লাহ) কারো জাহান্নামের ফায়সালা হয়ে যায়, এর চেয়ে দুর্ভাগ্যের আর কিছুই হতে পারে না। কারণ জাহান্নামের আগুন সহ্য করার সাধ্য কার আছে।

সে আগুন দুনিয়ার আগুনের চেয়ে বহুগুণ শক্তিশালী ও ধ্বংসাত্মক।মহান আল্লাহ তাঁর অসীম দয়ার কারণে পবিত্র কোরআনের মাধ্যমে তাঁর বান্দাদের এই আগুন থেকে বাঁচার সূত্র জানিয়ে দিয়েছেন। নবীজি (সা.)-ও তাঁর উম্মতদের সেই আগুনের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন এবং তা থেকে বাঁচার বিভিন্ন ফর্মুলা শিখিয়েছেন। তার মধ্যে একটি হলো, মহান আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করা।

হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করেছে সে ব্যক্তি জাহান্নামে প্রবেশ করবে না, যে পর্যন্ত না দুধ স্তনে পুনঃপ্রবেশ করবে। আর আল্লাহর রাস্তায় ধুলা এবং জাহান্নামের আগুনের ধোঁয়া একত্রিত হবে না।’ (নাসায়ি, হাদিস : ৩১০৮)
মুমিন কোমল হবে, আল্লাহর স্মরণে তাদের মন বিগলিত হবে, এটাই আল্লাহ চান। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ নিজেই বলেছেন, ‘যারা ঈমান এনেছে তাদের জন্য সে সময় কি এখনো আসেনি যে আল্লাহর স্মরণে আর যে প্রকৃত সত্য অবতীর্ণ হয়েছে তাতে তাদের অন্তর বিগলিত হয়ে যাবে? আর তারা যেন সেই লোকদের মতো না হয়ে যায় যাদের পূর্বে কিতাব দেওয়া হয়েছিল, অতঃপর তাদের ওপর অতিবাহিত হয়ে গেল বহু বহু যুগ আর তাদের অন্তর কঠিন হয়ে পড়ল।তাদের বেশির ভাগই পাপাচারী।’ (সুরা : হাদিদ, আয়াত : ১৬)

আল্লাহর স্মরণে মুমিনের অশ্রু এতটাই শক্তিশালী যে তা জাহান্নামে ভয়াবহ আগুনকে নিভিয়ে দিতে সক্ষম। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে আমি বলতে শুনেছি, ‘জাহান্নামের আগুন দুটি চোখকে স্পর্শ করবে না। আল্লাহ তাআলার ভয়ে যে চোখ ক্রন্দন করে এবং আল্লাহ তাআলার রাস্তায় যে চোখ (নিরাপত্তার জন্য) পাহারা দিয়ে ঘুমবিহীনভাবে রাত পার করে দেয়।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৬৩৯)
অর্থাৎ তারা জাহান্নামে যাবে না।

এ জন্য মহান আল্লাহর প্রিয় বান্দারা তাঁর স্মরণে ক্রন্দন করে। বিশেষ করে তাঁর কালামের তিলাওয়াত তাদের হৃদয়কে বিগলিত করে। তাদের চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরে।

মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে তাদের ব্যাপারে বলেছেন, ‘আর কোরআন আমি নাজিল করেছি কিছু কিছু করে, যেন তুমি তা মানুষের কাছে পাঠ করতে পারো ধীরে ধীরে এবং আমি তা নাজিল করেছি পর্যায়ক্রমে। বলো, ‘তোমরা এতে ঈমান আনো বা ঈমান না আনো, নিশ্চয়ই এর আগে যাদের জ্ঞান দেওয়া হয়েছে, তাদের কাছে যখন এটা পাঠ করা হয় তখন তারা সিজদাবনত হয়ে লুটিয়ে পড়ে। আর তারা বলে, ‘আমাদের রব মহান, পবিত্র; আমাদের রবের ওয়াদা অবশ্যই পূর্ণ হবে। আর তারা কাঁদতে কাঁদতে লুটিয়ে পড়ে এবং এটা তাদের বিনয় বৃদ্ধি করে’। (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ১০৬-১০৯)

এর বাস্তব চিত্র সাহাবায়ে কিরামের মধ্যে পাওয়া যায়। উবাইদ ইবনে উমাইর (রহ.) বলেন, একদিন আমাদের সঙ্গে উমর (রা.) নামাজ পড়ছিলেন, যখন তিনি সুরা ইউসুফের ৮৪ নং আয়াত ‘...বলল, ইউসুফের জন্য আফসোস আর দুঃখে তার চক্ষুদ্বয় সাদা হয়ে গিয়েছিল’ তিলাওয়াত করেন, তখন তিনি কাঁদতে শুরু করেন। এবং রুকুতে চলে যান। (ফাজায়েলুল কোরআন লি আবি উবাইদ)

আবু দোহা (রহ.) বলেন, আমি শুনেছি যে একবার আয়েশা (রা.) সুরা আহযাবের ৩৩ নং আয়াতে ‘আর তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করবে...’ তিলাওয়াত করে এমন কেঁদেছিলেন যে তাঁর ওড়না ভিজে গিয়েছিল। (আয-যুহদ; আহমদ ইবনে হাম্বল, পৃ: ৯১১)

তাই আমাদের উচিত পবিত্র রমজান মাসের রাতগুলোতে মহান রবের ইবাদতে মগ্ন থাকার চেষ্টা করা। অশ্রুসিক্ত চোখে মহান রবের কাছে অতীতের পাপের জন্য ক্ষমা চাওয়া, ভবিষ্যতের নিরাপত্তার জন্য মহান রবের আশ্রয় চাওয়া।


এমআর/টিএ



Share this news on:

সর্বশেষ

img
শ্রীলঙ্কায় ভুল জায়গায় অবতরণ করে কাদায় আটকে গেল ভারতীয় বায়ুসেনার হেলিকপ্টার Dec 24, 2025
img
‘দৃশ্যম ৩’ থেকে সরে দাঁড়ালেন অক্ষয় খান্না! Dec 24, 2025
img
ভারতে সয়াবিন ও ভুট্টা রপ্তানিতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র Dec 24, 2025
img
পটুয়াখালী-৩ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেলেন নুরুল হক নুর Dec 24, 2025
ফিফার ট্রান্সফার নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্ত আল-নাসর, স্বস্তিতে রোনালদো Dec 24, 2025
রুদ্ধশ্বাস টাইব্রেকারে জিতে কারাবো কাপের সেমিতে আর্সেনাল Dec 24, 2025
বিএনপি ছে-ড়ে একক নির্বাচনের ঘোষণা কর্ণেল অলির! Dec 24, 2025
img
ভারতে বাংলাদেশি ২ টাকার ৬০ হাজার নতুন নোট উদ্ধার Dec 24, 2025
img
আজ রুপালি পর্দার অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চনের জন্মদিন! Dec 24, 2025
img
বিপিএলে শিরোপা জেতাই লক্ষ্য : লামিচানে Dec 24, 2025
img
এভারকেয়ার হসপিটাল ও সংলগ্ন এলাকার ড্রোন উড়ানো নিষিদ্ধ Dec 24, 2025
img
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত Dec 24, 2025
img
ইসিকে তফসিল সংশোধনের দাবি এনসিপির Dec 24, 2025
img
জনগণের কষ্ট লাঘব করার জন্যই তারেক রহমান দেশে আসছেন: মির্জা আব্বাস Dec 24, 2025
img
দেশে ফিরে নতুন কর্মকাণ্ডে ন্যান্‌সি Dec 24, 2025
img
বিকেলে নির্বাচন কমিশনে যাচ্ছে জামায়াতের ৩ সদস্যের প্রতিনিধি দল Dec 24, 2025
img
নিজের নামে যুদ্ধজাহাজ নির্মাণের ঘোষণা দিলেন ট্রাম্প Dec 24, 2025
জ্যাকসনের জোড়া গোলে জয়ে শুরু সেনেগালের আফ্রিকা কাপ অভিযান Dec 24, 2025
img
লগ্নজিতার পাশে দাঁড়াতেই শো বাতিল পল্লব কীর্তনিয়ার! Dec 24, 2025
img
কেটি পেরির সাবেক স্বামীর বিরুদ্ধে নতুন অভিযোগ Dec 24, 2025