পাহাড়ের কোলের শঙ্খ নদী

একটি বাঁক পেরিয়ে আরেকটি বাঁক মানেই নতুন সৌন্দর্যের সংজ্ঞা খোঁজা। যেন নদীর গতিপথ এখানেই শেষ, তবে সেটি নিছক মরীচিকা। আরেকটি বাঁক নিয়ে যাবে নিরুদ্দেশের দিকে। এটিই ‘শঙ্খ’ নদী। যার অপর নাম সাঙ্গু নদী। এ নদীকে নিয়ে চট্টগ্রামে অনেক গান ও গীতিকাব্য রচিত হয়েছে।

শঙ্খ নদী কর্ণফুলীর পর চট্টগ্রাম বিভাগের দ্বিতীয় বৃহত্তম নদী। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যে কয়টি নদীর উৎপত্তি তার মধ্যে সাঙ্গু নদী অন্যতম। মিয়ানমার সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের বান্দরবান জেলার মদক এলাকার পাহাড়ে এ নদীর জন্ম। নদীটি বান্দরবান জেলা থেকে উৎপত্তি হয়ে অনেক উঁচু উঁচু দুর্গম পাহাড়, গহীন বনাঞ্চল ও অসংখ্য পাহাড়ি জনপদ ছুঁয়ে এঁকেবেঁকে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে চট্টগ্রামের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মিশেছে। উৎস মুখ হতে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত এই নদীর দৈর্ঘ্য ২৭০ কিলোমিটার।

এই নদীর দুপাড়ে বসবাসকারী ৯০ শতাংশই মারমা নৃ-গোষ্ঠীর আদিবাসী। যাদের অধিকাংশের পেশা জুম চাষ।

শঙ্খ নদীর অপার রূপ দেখে মুগ্ধ হবেন না এমন মানুষ পাওয়া ভার। অপূর্ব এই নদীর দুইদিকে পাহাড়ের সারি। বর্ষায় পাহাড় বেয়ে নামে ছোট বড় অসংখ্য ছড়া। ছলছল শব্দে ছড়ার চঞ্চল জল এসে মেশে নদীতে। পাহাড়ের ওপরে ভেসে বেড়ায় মেঘ। মনে হয়, ওই চূড়ায় উঠলেই বুঝি ছোঁয়া যাবে, ধরা যাবে, মেঘের মাঝে ভেসে বেড়ানো যাবে। বান্দরবানে এমনটা মনে হওয়াটা মোটেও বেশি নয়। সাঙ্গুর তীরবর্তী পাহাড়ের চূড়ায় সত্যিই জমে থাকে মেঘ। গাছের ফাঁকে আটকে যায়। সেখানেই ঝরে যায় বৃষ্টি হয়ে।

দেশের সব নদীই বয়ে আনে পলিমাটি। কিন্তু এক্ষেত্রে কিছুটা বৈচিত্র্যপূর্ণ বান্দরবান পার্বত্য জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া শঙ্খ নদী। পলিমাটির পরিবর্তে এ নদীর পুরোটাই নানা ধরনের পাথরে ভর্তি।

প্রকৃতির উদার সৌন্দর্য যেমন মুগ্ধ করবে আপনাকে তেমনি মনে এনে দেবে শান্তি। তবে বড় দলবল নিয়ে ঘুরতে যাওয়াটা সাশ্রয়ী হবে।সেক্ষেত্রে পুরো নৌকা রিজার্ভ নিয়ে বড় পথ পাড়ি দিতে পারবেন ইচ্ছেমত। মাঝিরা বেশ বন্ধুবৎসল।

১৮৬০ সালে তৎকালীন ইংরেজ সরকার এ নদীটিকে গেজেটভূক্ত করেন। তখন এ নদীটির নাম করা হয় সাঙ্গু রিভার। তবে বান্দরবানের আদিবাসীরা এ নদীটিকে রিগ্রাই খিয়াং অর্থাৎ ‘স্বচ্ছনদী’ বলে ডাকে।

তবে সাঙ্গু নদীর প্রকৃত নাম কীভাবে শঙ্খ হলো এটা এখনো অনাবিষ্কৃত। ‘শঙ্খ’ বলতে যে ধরণের সামূদ্রিক শামুকের কথা বোঝায়, নদীর দুপাড়ে যুগযুগ ধরে বংশ পরম্পরায় বসবাসকারী আদিবাসী পাহাড়িরা জানিয়েছেন, এ নদীতে আদৌ সে ধরণের শঙ্খের অস্তিত্ব কখনো ছিলোনা।

কিভাবে যাবেন:

শঙ্খ নদীর সৌন্দর্য চট্টগ্রাম থেকেই উপভোগ করা যাবে। তবে আরও বেশি উপভোগ করতে চাইলে এবং নদীটির উৎসে যেতে চাইলে বান্দরবান যেতে হবে। বদ্দারহাট থেকে বান্দরবানের উদ্দেশ্যে পূবালী ও পূর্বানী পরিবহনের বাস যায়। এসব বাসে জনপ্রতি ২২০ টাকা ভাড়া রাখা হয়।

ঢাকা থেকে বান্দরবানগামী শ্যামলি, হানিফ, ইউনিক, এসআলম, ডলফিন ইত্যাদি বাসে চলে যেতে পারেন বান্দরবান। রাত ১০ টায় অথবা সাড়ে ১১টার দিকে কলাবাগান, সায়েদাবাদ বা ফকিরাপুল থেকে এসব বাস বান্দরবানের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। পৌঁছে যাবেন সকাল ৬টা অথবা ৭টার মধ্যে। ননএসি বাসে জনপ্রতি ভাড়া ৫৫০টাকা। এসি ৯৫০ টাকা।

কোথায় থাকবেন:

বান্দরবানে বিভিন্ন মানের হোটেল রয়েছে। ভাড়া শুরু ৪০০ টাকা থেকে। দরদাম করে উঠবেন।

কি খাবেন:

খাওয়ার জন্য চট্টগ্রাম এবং বান্দরবানে অনেক হোটেল আছে। নদীতে নৌকা দিয়ে ভ্রমণ করতে চাইলে সঙ্গে করে খাবার নিয়ে যেতে হবে।

ভ্রমণ টিপস:

ভ্রমণের সর্বক্ষেত্রে পরিবেশ ও প্রকৃতি সচেতনতার কথা মাথায় রাখবেন। ভ্রমণে নদীতে কোন আবর্জনা ফেলবেন না। আদিবাসীদের সাথে কোনো প্রকার ঝামেলায় যাওয়া যাবে না। ক্যাপ, সানগ্লাস, গামছা এবং মশা থেকে রক্ষার জন্য অডোমস, প্রয়োজনীয় সব ওষুধ সঙ্গে রাখবেন।

 

টাইমস/এএস/এইচইউ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
নিউ ইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন জোহরান মামদানি Nov 05, 2025
img
২ বছরে যুদ্ধে ইসরায়েলের বিপুল ব্যয় Nov 05, 2025
img
মেয়াদোত্তীর্ণ-অনুমোদনহীন ওষুধ বিক্রি, ৪ লাখ টাকা জরিমানা Nov 05, 2025
img
জলবায়ু তহবিলের অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে ’২ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ: ড. ইফতেখারুজ্জামান Nov 05, 2025
img

অ্যাশেজ

নতুন চমকসহ প্রথম টেস্টের জন্য দল ঘোষণা করল অস্ট্রেলিয়া Nov 05, 2025
img
বিপিএল ১২তম আসর, ৫ ফ্র্যাঞ্চাইজির নাম চূড়ান্ত Nov 05, 2025
img
নভেম্বরের শুরুতেই ইরাকে ১১৪ ভূমিকম্প Nov 05, 2025
img
যুদ্ধবিরতি চললেও ত্রাণ প্রবেশে বাধা, গাজায় ক্ষুধায় কাতর ফিলিস্তিনিরা Nov 05, 2025
img
শিগগির চট্টগ্রাম নগরীতে শতভাগ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা হবে : চসিক মেয়র Nov 05, 2025
img
কুমিল্লায় ডেঙ্গুতে প্রাণ গেল এক Nov 05, 2025
img
একটি দল অংশ না নিলেও নির্বাচন অংশগ্রহণমূলকই হবে : পুতুল Nov 05, 2025
img
আশুলিয়ার ঘটনায় ১৭তম দিনের সাক্ষ্য আজ Nov 05, 2025
img
আজ দেশে কত দামে বিক্রি হচ্ছে স্বর্ণ? Nov 05, 2025
img
ঢাবিতে ভবঘুরে উচ্ছেদ অভিযান ঘিরে সমালোচনা Nov 05, 2025
img

সামরিক বিশেষজ্ঞদের অভিমত

নির্বাচন বিঘ্নিত করতে সশস্ত্র বাহিনীর মনোবল দুর্বলের অপচেষ্টা চলমান Nov 05, 2025
img
মব সহিংসতা, গণপিটুনি ও বাকস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপে উদ্বেগ : এইচআরএসএস Nov 05, 2025
img
আজ মেঘলা থাকবে ঢাকার আকাশ, নেই বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনা Nov 05, 2025
img
ভারতে দুই ট্রেনের মধ্যে সংঘর্ষ, প্রাণ হারালো ৮ Nov 05, 2025
img
আজ দেখা যাবে বছরের সবচেয়ে বড় সুপারমুন Nov 05, 2025
img
সরকার সব ধর্ম ও সম্প্রদায়ের প্রতি সমান শ্রদ্ধাশীল : উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা Nov 05, 2025