সংঘবদ্ধ ধর্ষণে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে হাসপাতালে স্কুলছাত্রী

মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলায় দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক ছাত্রীকে (১৮) ঘরে আটকে রেখে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার পর ওই কিশোরী মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে। তাকে জেলা সদরের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে চিকিৎসকরা তাকে ঢাকার জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দিয়েছেন।

চিকিৎসকরা বলছেন, একাধিকবার ধর্ষণ এবং ভয়ভীতি দেখানোর কারণে মেয়েটি মানসিক বিকারগ্রস্ত হতে পড়েছে। এমন অবস্থায় যে কেউ মানসিক ভারসাম্যও হারিয়ে ফেলতে পারেন।
আটকে রেখে একাধিকবার ধর্ষণ ও ভয়ভীতির কারণে মেয়েটি মানসিক বিকারগ্রস্ত হতে পারে। এমন অবস্থায় যে কেউ মানসিক ভারসাম্যও হারিয়ে ফেলতে পারেন।

জানা গেছে, মেয়েটির বাবা নেই। স্থানীয় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। তার চিকিৎসার ব্যয় নিয়েও দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছেন স্বজনরা। এ ঘটনায় মেয়েটির ভাই বাদী হয়ে জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছেন। মামলায় উপজেলার একটি গ্রামের বাসিন্দা তিন ভাই হৃদয় হোসেন (২৫), জসিম উদ্দিন (৩৩) ও সুজন মিয়াকে (৩০) আসামি করা হয়েছে।

মামলায় সংক্ষিপ্ত এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসার পথে মেয়েটিকে উত্ত্যক্ত করতেন হৃদয় হোসেন। হৃদয় বিবাহিত এবং সন্তান আছে। বোনকে উত্ত্যক্তের বিষয়ে বাদী হৃদয়ের বড় দুই ভাইকে জানালেও তারা কর্ণপাত করেননি। ১৩ মার্চ রাতে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে মেয়েটি ঘরের বাইরে গেলে হৃদয় হোসেন চেতনানাশক ওষুধ ছিটিয়ে তাকে অচেতন করে অজ্ঞাত স্থানের একটি কক্ষে নিয়ে আটকে রাখে।

মেয়েটির জ্ঞান ফিরলে একটি কক্ষে দেখতে পেয়ে সে কান্নাকাটি শুরু করে। এ সময় মেয়েটির গলায় ছুরি ধরে ধর্ষণ করা হয় এবং মুঠোফোনে ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করা হয়। ওই কক্ষ থেকে পালানোর চেষ্টা করলে হত্যা করে লাশ গুম এবং ধর্ষণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন হৃদয়। এভাবে প্রায় এক সপ্তাহ আটকে রেখে মেয়েটিকে একাধিকবার ধর্ষণ করা হয়।

১৯ মার্চ দুপুরে হৃদয়ের বড় ভাই জসিম মেয়েটির ভাইকে মোবাইল ফোনে কল করে বোনকে নিয়ে যেতে বলেন। এরপর হৃদয়দের বাড়ি থেকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় মেয়েটিকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন স্বজনরা। পরে চিকিৎসকদের পরামর্শে মেয়েটিকে জেলা সদরের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ বিষয়ে ভুক্তভোগীর পরিবার থানা-পুলিশকে জানালেও “আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে” বলে কালক্ষেপণ করার অভিযোগ ওঠে। পরে গত রবিবার আদালতে মামলার আবেদন করেন মেয়েটির ভাই।

বাদীপক্ষের আইনজীবী খন্দকার সুজন হোসেন সংবাদমাধ্যম প্রথম আলোকে বলেন, “স্কুলছাত্রীকে অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগ আমলে নিয়ে শিবালয় থানা-পুলিশকে মামলা হিসেবে রেকর্ড করার নির্দেশ দেন আদালত। পরে আসামি হৃদয়কে গ্রেপ্তার করা হয়।”

মঙ্গলবার দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, প্রসূতি ওয়ার্ডের আলাদা একটি কক্ষে মেয়েটিকে তালাবদ্ধ অবস্থা রাখা হয়েছে। মেয়েটির মা ও বোন কক্ষের বাইরে বসে আছেন। তাদের চোখেমুখে অসহায়ত্বের ছাপ।

মেয়েটির মা বলেন, “আমার মেয়ের এত বড় সর্বনাশ করলো। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে মেয়েটা এখন পাগল হয়ে গেছে। যারা আমার মেয়েরে নির্যাতন (ধর্ষণ) করছে, ওদের ফাঁসি চাই।” এরপর কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

প্রসূতি ওয়ার্ডের কর্তব্যরত নার্সরা বলেন, “মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলায় মেয়েটি পাগলের মতো আচরণ করছে এবং অন্য রোগীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছে। এ কারণে মেয়েটিকে আলাদা একটি কক্ষে তালাবদ্ধ অবস্থায় রাখা হয়েছে।”

প্রসূতির ওয়ার্ডের চিকিৎসক রুমা আক্তার বলেন, “মেয়েটিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য হাসপাতালে স্থানান্তরের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।”হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা তৌহিদুর রহমান বলেন, “মেয়েটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা এখনো হয়নি। যেহেতু মামলা হয়েছে, কাজেই পুলিশই স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য আবেদন করবে। এরপর পরীক্ষা করা হবে।”

এ ব্যাপারে শিবালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন সংবাদমাধ্যম প্রথম আলোকে বলেন, “আজ সকালে আসামি হৃদয়কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য দুই আসামি পালিয়েছে। কাল বুধবার ভুক্তভোগী মেয়েটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে।”

এমআর

Share this news on:

সর্বশেষ