২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে নির্বাচন: প্রেস সচিব

দেশের পরিস্থিতি অনেকটা উন্নতি হয়েছে। ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেছেন, ‘বর্তমান সরকার এখন অনেক গোছানো। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সবাই অনেকটা উদ্বিগ্ন ছিল, সেই পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। পুরো রমজানে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল ছিল। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দিক দিয়েও সরকার এখন অনেকটা প্রতিষ্ঠিত।’
 
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে বেসরকারি টেলিভিশনের এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রেস সচিব শফিকুল আলম। এ সময় সঙ্গে তার স্ত্রী সাবিনা জাহান লুনাও উপস্থিত ছিলেন। তিনি পেশায় একজন শিক্ষক। এ সময় দুজনই তাদের ঈদের পরিকল্পনা জানান। পরিবারের সবার সঙ্গে ঈদের দিন সময় কাটানোই মূল পরিকল্পনা থাকে বলে জানান প্রেস সচিব।

প্রধান উপদেষ্টার বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ‘যদিও স্যার (প্রধান উপদেষ্টা) বলেন, আমরা এখনো একটা যুদ্ধ অবস্থায় আছি। তবে আমরা মনে করি, আগস্টে আমরা যে জায়গায় ছিলাম, সেখান থেকে বড় একটা উত্তরণ হয়েছে।’

পূর্বের সময়ের প্রেস সচিব এবং বর্তমানের দায়িত্বটা ভিন্ন জানিয়ে শফিকুল আলম বলেন, ‘আগে যেসব প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তাদের সঙ্গে যেসব সাংবাদিকের সখ্যতা ছিল, তাদের এই পোস্টটা দেওয়া হতো। প্রেস সচিব খুব বেশি কাজ করতেন না। মাঝেমধ্যে বিদেশি ডিগনিটারি আসলে তাদের জন্য কিছু আয়োজন করাই ছিল তাদের কাজ।’

নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমাকে প্রচুর ইনফর্ম থাকতে হয়। সপ্তাহে তিনটি প্রেস ব্রিফিং করতে হয়, এ জন্য ম্যাটারিয়াল জোগাড় করতে হয়। সব সময় সতর্ক থাকতে হয়।’

কখনো ভেবেছিলেন যে আপনি প্রেস সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন- উপস্থাপিকার এমন প্রশ্নের উত্তরে শফিকুল আলম বলেন, ‘আমার মনে হয়নি। প্রফেসর ইউনূসের সঙ্গে আমার খুব বেশি হৃদ্যতা ছিল, এমনটাও নয়। পেশাগত কারণে আমি তাকে অনেক সময় কাভার করেছি। উনার প্রতি যে অন্যায়-অবিচার চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল, সেটা নিয়ে আমরা কাভার করেছিলাম। সেই সূত্রেই উনি আমাকে চিনতেন। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর হঠাৎ আমি একদিন ফোন পেলাম। জানতে চাওয়া হলো, আমি আগ্রহী কি না?’

প্রেস সচিব হিসেবে শফিকুল আলমকে নিয়ে বিভিন্ন সময় আলোচনা-সমালোচনা ও চর্চা হয়। এটির কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘আগের প্রেস সচিবরা কোনো কাজ করতেন না। আগের কালচারটা ছিল, প্রাইম মিনিস্টারের সঙ্গে যাদের দহরম-মহরম সম্পর্ক ছিল তাদের নিয়োগ দেওয়া হতো। যারা কোনো কাজই করতেন না। কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে প্রেস সচিবের কাজ অনেক। সেগুলোই আমি করে যাচ্ছি। এ জন্য সবার কাছে মনে হচ্ছে, আমি অনেক কাজ করছি। মূলত এটি আমার কাজ।’

ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্পর্কে প্রেস সচিব বলেন, ‘পুরো পৃথিবীতে তো উনি সেলিব্রিটি। এটা আমি আরও জানতে পেরেছি এই গত সাড়ে সাত-আট মাসে। তাকে বাইরে যে মর্যাদার সঙ্গে ট্রিট করা হয়, সেটি অবিশ্বাস্য।’ উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘ডাভোসে আমরা গিয়েছি, ওইখানে গিয়ে আমরা জাস্ট ঢুকছি- এই সময় খবর আসছে যে তার (ড. ইউনূস) সঙ্গে জার্মানির চ্যান্সেলর মানে ওদের প্রাইম মিনিস্টার কথা বলবেন। উনি অ্যাপয়েন্টমেন্ট চাচ্ছেন। উনার যে স্ট্রাকচার এটা তো আনবিলিভেবল।’

অন্তর্বর্তী সরকারের সময় শেষ হয়ে গেলে ‘গন্তব্য’ কী হবে- জানতে চাইলে শফিকুল আলম বলেন, ‘এটি নিয়ে এখনো ভাবিনি। আমাদের এখনো আরো কয়েক মাস তো আছে। মে বি ইলেকশনটা যখন হবে তারপরে আমি ছেড়ে দেব। খুব একান্ত ব্যক্তিগত ইচ্ছা যে বই লেখা কিন্তু এতে তো সংসার চলে না, আমার তো সংসার চলাতে হবে। সেই চিন্তা করে আমার হয়তো জার্নালিজমে আবার ফিরতে হবে। আবার কেউ কেউ বলেন, ভাই- আপনি তো প্রেস কনফারেন্স খুব ভালো করেন, পলিটিকসে আসেন। তবে ওইটাও আমি অতটা দেখি না। দুই-তিনজন বলার কারণে পলিটিকসের বিষয়টি মাথার মধ্যে ঢুকছে, পরে আমি ওয়াইফের সঙ্গে বলছিলাম; তবে সে বলে দিয়েছে, একদম না- কোনোভাবেই এইটা করা যাবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশে যদি আমি কিছু কন্ট্রিবিউট করতে পারি, সেটাও একটা কাজ হবে। কিন্তু আমার প্রাইমারি ইচ্ছা জার্নালিজমে ফিরে যাওয়া, তবে সেটি লোকাল জার্নালিজমে হতে পারে। নিজে যদি কোনো পত্রিকা দিতে পারি, সেটার একটা খুব ইচ্ছা আছে।’

অন্তর্বর্তী সরকারের অর্জন অনেক জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, ‘অর্জনটা আসলে অনেক, তবে দৃশ্যমান নয়। অর্জনটা আমি দেখি, একটা রেভল্যুশন হলে বিপ্লব হলে যেই ধরনের কেওয়াচ তৈরি হয়, সিচুয়েশন তৈরি হয়, সেই জায়গাটা তো বাংলাদেশের মানুষ উইটনেসই করেনি। এটা না করার মূল কারণ হচ্ছে প্রফেসর ইউনূসের লিডারশিপের গুণ। দেখেন, উনি কিভাবে এই পুরো সিচুয়েশনগুলো হ্যান্ডল করলেন। আমরা ম্যাসিভ বিদেশি আউটপোরিং অব সাপোর্ট পেয়েছি, প্রচুর সাপোর্ট আমাদের এসেছে। বাংলাদেশকে নতুন করে সবাই চিনছে। আমাদের ইকোনমি ঘুরে দাঁড়িয়েছে, ল অ্যান্ড অর্ডার আমি বলব যে বেটার দিকে যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের পর নির্বাচিত সরকারের কাছে অন্তর্বর্তী সরকার যে বাংলাদেশকে সমর্পণ করবে, সেটি আমার মনে হয় খুবই বেটার ও হেলদি অবস্থায় থাকবে।’

অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় পুলিশ বাহিনীর মধ্যে কনফিডেন্স যত দ্রুত আনা প্রয়োজন ছিল, সেটি আমরা পারিনি। এই জায়টায় আমাদের অনেক স্ট্রাগল করতে হয়েছে। মাসখানেকের মধ্যে এটিও ঠিক হয়ে যাবে।’

প্রধান উপদেষ্টার বিভিন্ন দেশে সফর নিয়ে প্রেস সচিব বলেন, প্রধান উপদেষ্টা যেখানেই যাচ্ছেন, সেখানে নতুন বাংলাদেশের কথা বলছেন, উনাদের লিডারদের সঙ্গে এবং যেখানেই যাচ্ছেন উনি ওই সব দেশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলছেন। কেননা তারাই তো এসে বিনিয়োগ করে। যেসব জায়গায় উনি গিয়েছেন, প্রত্যেক জায়গায় উনার মেসেজটা হচ্ছে যে বাংলাদেশ হচ্ছে ‘রেডি ফর বিজনেস’। তোমরা আসো, বিনিয়োগ করো।” এই ডাকে সাড়াও পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

বাংলাদেশ নিয়ে স্বপ্নের কথা জানিয়ে শফিকুল আলম বলেন, ‘আমি মনে করি, বাংলাদেশটা একদিন অনেক অনেক বড় হবে। আমি মনে করি, ২০ থেকে ৪০ বছর মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের একটি ধনী দেশ হবে। খুব সমৃদ্ধ একটি সভ্যতার অংশ হবে।’


এমআর/এসএন


Share this news on:

সর্বশেষ

img
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও আসন সীমানা নির্ধারণে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য : অধ্যাপক আলী রীয়াজ Jul 02, 2025
img
পাকিস্তানে বিস্ফোরণে সহকারী কমিশনারসহ নিহত অন্তত ৫, আহত ১১ Jul 02, 2025
img
‘জুলাই শহীদ’ স্বীকৃতি পাচ্ছেন এক রোহিঙ্গা যুবক Jul 02, 2025
img
চলতি মাসে সর্বোচ্চ পাঁচটি তাপপ্রবাহের পূর্বাভাস Jul 02, 2025
img
পরের জন্মে প্রিয়াংকার স্বামী হতে চান শাহরুখ Jul 02, 2025
img
বড় দল হিসেবে বিএনপির স্যাক্রিফাইসটাও বেশি , দাবি তারেক রহমানের Jul 02, 2025
img
অনুমোদন ছাড়া আমদানিকৃত মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন করলে আইনানুগ ব্যবস্থা Jul 02, 2025
img
প্রধান উপদেষ্টাকে নিয়ে বিতর্কিত স্ট্যাটাস দেয়ায় সহকারী কমিশনার চাকরিচ্যুত Jul 02, 2025
img
২৭১ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ, এস আলমের সাইফুল-পিকে হালদারসহ আসামি ১৫ Jul 02, 2025
img
বিপিএলের নিলাম অক্টোবরের আগে হবে না : মাহবুব আনাম Jul 02, 2025
img
সীমানা পুনর্নির্ধারণে স্বচ্ছতার জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটি হবে: জামায়াতের নায়েবে আমির Jul 02, 2025
img
দলীয় প্রতীক শাপলা চেয়ে ইসিতে আবেদন নাগরিক ঐক্যের Jul 02, 2025
img
২৪ ঘন্টায় করোনায় আরও ১ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ২৭ Jul 02, 2025
img
শেখ রেহানার স্বামী ও দেবরের ১৫ কোটি টাকার সম্পদ জব্দের আদেশ Jul 02, 2025
img
সব কিছুতে ঐকমত্য হয়ে যাওয়াটা বাস্তবসম্মত সম্ভব নয়: জোনায়েদ সাকি Jul 02, 2025
img
নতুন মাইলফলক স্পর্শ করলেন শান্ত Jul 02, 2025
img
মিয়ানমারকে হারিয়ে এশিয়ান কাপের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ Jul 02, 2025
img
চট্টগ্রামে ডিআইজি কার্যালয় ঘেরাও করল বৈষম্যবিরোধীরা Jul 02, 2025
img
ঋতুপর্ণার জোড়া গোল, জয়ের আরও কাছে বাংলাদেশ Jul 02, 2025
img
‘হাতপাখার সমাবেশ’ বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রমাণ : ফারুক Jul 02, 2025