ভীত কূটনীতির পরিচিত পেয়েছিল বাংলাদেশ, তবে আর নয়: প্রেস সচিব

ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ সদস্য রাষ্ট্রের প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। বৈঠকে নরেন্দ্র মোদির কাছে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ, সীমান্ত হত্যা বন্ধ ও তিস্তার পানির ন্যায় হিস্যা চেয়েছে বাংলাদেশ। যা কূটনীতিতে বাংলাদেশের শক্তিশালী অবস্থান তুলে ধরেছে। এছাড়াও রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বড় অগ্রগতি হয়েছে এই সফরে। ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে মিয়ানমার। যা এই সরকারের অন্যতম বড় সাফল্য।

সরকারের কূটনীতিতে বড় পরিবর্তন আসার পেছনে বিশেষ করে রোহিঙ্গা সমস্যা নিরসনে কাজ করে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টার হাইরিপ্রেজেনটেটিভ ড. খলিলুর রহমান। জাতিসংঘে কাজ করা এই কূটনীতিক বাংলাদেশের কূটনীতিতে যে বড় পরিবর্তন এনেছেন তা জানা গেছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের দেওয়া দীর্ঘ এক ফেসবুক পোস্টে। যেখানে বাংলাদেশের শক্ত কূটনীতি ও ড. খলিলুর রহমানের প্রশংসা করেছেন তিনি।

শফিকুল আলম তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘ডঃ খলিলুর রহমান একজন শান্ত স্বভাবের মানুষ। তিনি ছিলেন জাতিসংঘের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশি কূটনীতিকদের মধ্যে প্রথম বিসিএস নিয়োগপ্রাপ্ত। কয়েক মাস আগে যখন তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে যোগদান করেন, তখন আমি তার সম্পর্কে প্রায় কিছুই জানতাম না। যদিও আমরা বেশ কয়েকবার দেখা করেছিলাম এবং সাক্ষাৎ ছিল অগণিত।’

তিনি আরও লিখেন, ‘তবুও, কয়েক মাসের মধ্যে তিনি আমাদের পররাষ্ট্র নীতির কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিতে ব্যাপক গতিশীলতা সঞ্চার করেছেন। জাতিসংঘ প্রধানকে একটি স্মরণীয় রোহিঙ্গা ক্যাম্প ইফতার সফরে নিয়ে যাওয়ার জন্য তার প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। এমনকি অধ্যাপক ইউনূস তাকে একটি ধন্যবাদ পত্রও দিয়েছেন।’

চীন ও ব্যাংকক সফরের স্মৃতি টেনে শফিকুল আলম লিখেছেন, ‘চীন এবং ব্যাংকক ট্যুরে আমি তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছি। যা খুব আকর্ষণীয় অভিজ্ঞতা ছিল -- যার কিছু অভিজ্ঞতা কেবল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদের পরেই লেখা সম্ভব। শাংরি-লা হোটেলে বিমসটেকের সরকারী নৈশভোজে আমরা যখন সুস্বাদু থাই খাবার খেতে ব্যস্ত তখন তিনি আমাদের কূটনীতির ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুজন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলার জন্য তার পুরো সময় ব্যয় করেছিলেন।’

খলিলুর রহমানের ভূমিকার কথা জানিয়ে তিনি আরও লিখেন, ‘প্রথমে তিনি মায়ানমারের উপ-প্রধানমন্ত্রী তথা পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। তারা ১৫ মিনিট ধরে কথা বলেন। তারপর তিনি ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে পুরো এক ঘণ্টা কথা বলেন এবং খাবার খান। স্পষ্টতই এগুলো ছিল অনানুষ্ঠানিক আলোচনা। কিন্তু মাঝে মাঝে এই আলোচনায় কিছু দীর্ঘ তালাবদ্ধ দরজা খুলে যায়। এবং আপনি গতকাল যার ফলাফল দেখতে পেলেন।’

অন্তর্বর্তী সরকারের শক্তিশালী কূটনৈতিক অবস্থান তুলে ধরে শফিকুল আলম লিখেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একটি অত্যন্ত শক্তিশালী কূটনৈতিক দল রয়েছে, যার নেতৃত্বে আর কেউ নন, অধ্যাপক ইউনূস। তিনি তিক্ত এবং কঠিন বিষয় উত্থাপন করতে কখনও পিছপা হন না। তিনি এফডিআই আকর্ষণের ক্ষেত্রে দেশের সিইও এবং প্রধান বিপণন কর্মকর্তাও। এবং তারপরে আমাদের তৌহিদ হোসেন আছেন, যিনি তার মনের কথা বলেন। দলে ডঃ খলিলের অন্তর্ভুক্তি মেকআপে কিছুটা শক্তি যোগ করেছে।’

বাংলাদেশ আগের সেই নতজানু কূটনীতি থেকে বেরিয়ে এসেছে বলেও জানান শফিকুল আলম, ‘বাংলাদেশ ভীতু এবং নতজানু কূটনীতির জন্য পরিচিত ছিল। বহু বছর ধরে আমাদের কূটনীতিকরা কঠিন বিষয় এড়িয়ে যাওয়ার জন্য পরিচিত ছিলেন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা ও গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলি মেনে নিতেন। তা আর নয়!’

এফপি/এসএন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ফজলুর রহমানের বক্তব্যের প্রতিবাদ ছাত্রদল নেত্রীর Jul 07, 2025
img
নারী নিয়ে রেস্ট হাউজে যাওয়ায় মহেশপুর থানার ওসি প্রত্যাহার Jul 07, 2025
img
সারজিসের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদনের আদেশ ২০ জুলাই Jul 07, 2025
বীর সন্তানদের ভুলে গেলে জাতি এগোতে পারে না: চিফ প্রসিকিউটর Jul 07, 2025
img
জুলাইকে ভুলিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে নব্য মিরজাফর হিসেবে চিহ্নিত হবে: চিফ প্রসিকিউটর Jul 07, 2025
img
'দুদক সংস্কারে এনবিআরের নথি সংক্রান্ত বিএনপির অবস্থান হতাশাজনক' Jul 07, 2025
img
নারী ছাড়া কোনো আন্দোলন-বিপ্লব সফল হতে পারে না : সামান্তা শারমিন Jul 07, 2025
img
নিবন্ধন পেলে চমক সৃষ্টি করতে চাই : রফিকুল আমিন Jul 07, 2025
img
আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রভিশন সংরক্ষণের নতুন নির্দেশনা জারি Jul 07, 2025
img
প্রিয়াঙ্কা ভট্টাচার্জী এবার 'গৌরী' চরিত্রে! প্রথম লুক ও টিজার পোস্টার প্রকাশ Jul 07, 2025
img
আমার মেয়ের মনে হয়েছে, মায়ের একজন জীবনসঙ্গী দরকার: বাঁধন Jul 07, 2025
img
এইচএসসি পরীক্ষায় নকলের অভিযোগ, বহিষ্কার ৪৩ শিক্ষার্থী ও ৪ শিক্ষক Jul 07, 2025
img
"আপনারা বেনজীর বা হারুন হবেন না"- ডিসি-এসপিদের হাসনাতের সতর্কবার্তা Jul 07, 2025
img
হংকংকে ৩-০ গোলে হারিয়ে সেমিফাইনালে বাংলাদেশ Jul 07, 2025
img
‘ধুরন্ধর’-এর টিজার, আর তাতেই শুরু হয়েছে চর্চা, তুলনা আর তীব্র উত্তেজনা Jul 07, 2025
img
মুক্তির ৩য় দিনেই অনুরাগের বড় সাফল্য, 'মেট্রো ইন দিনো’ ছাড়িয়ে গেল ‘লাইফ ইন এ মেট্রো’ কে Jul 07, 2025
‘কালা জাহাঙ্গীর’ চরিত্রে শাকিব! প্রশ্ন নৈতিকতার Jul 07, 2025
img
মঙ্গলবার থেকে ৬ দফা দাবিতে সিলেটে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট Jul 07, 2025
img
‘জগ্গা যাসুস’ কেবল ছবি নয়, ছিল রণবীর-অনুরাগের ভালোবাসার এক প্রকল্প Jul 07, 2025
img
১১ বছর বয়সেই বন্ধুর সঙ্গে পালাতে চেয়েছিলেন কাজল! Jul 07, 2025