আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মেহমানদারি

মেহমানের সমাদর করা মুমিনের ভূষণ। মুমিন মেহমানের আগমনে খুশি হয়। মেহমানকে সাদরে গ্রহণ করে। কেননা নবীজি (সা.) মেহমানকে সম্মান করার প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন।এখানে মেহমানের আপ্যায়নের গুরুত্ব ও আদব সম্পর্কে আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ।

মেহমান আপ্যায়নের গুরুত্ব : ইসলামে মেহমান আপ্যায়নের গুরুত্ব অপরিসীম। এটি শুধু সামাজিকতা নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় করলে এক ধরনের ইবাদতও বটে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়, অতিথিকে সমাদর করে, আর ভালো কথা বলে অথবা চুপ থাকে।’ (বুখারি, হাদিস : ৬০১৮)

এই হাদিসে মেহমানের সমাদরকে ঈমানের দাবি হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। যে ঈমান রাখে, তার উচিত মেহমানকে সম্মান করা। তার আগমনে বিরক্ত না হওয়া।

মেহমানের হক : প্রতিটি মুসলমানের ওপর তার কাছে আসা মেহমানের হক রয়েছে।
তাইতো নবীজি (সা.) আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.)-কে লাগাতার রোজা রাখতে নিরুৎসাহ করার সময় বলেন, কয়েক দিন রোজা পালন করো, আর কয়েক দিন ইফতার করো (রোজা ভঙ্গ করো)। তোমার ওপর তোমার শরীরের হক আছে। তোমার ওপর তোমার চোখের হক আছে, তোমার ওপর তোমার মেহমানের হক আছে, আর তোমার ওপর তোমার স্ত্রীরও হক আছে। নিশ্চয়ই তুমি তোমার আয়ু দীর্ঘ হওয়ার আশা করো। (বুখারি, হাদিস : ৬১৩৪)

আপ্যায়নের সময়সীমা : বাড়িতে কোনো মেহমান এলে মেজবানের দায়িত্ব তার মেহমানদারি করা, মেহমানের হক আদায় করা।
প্রশ্ন হলো, এর কি কোনো সময়সীমা আছে, নাকি মেহমান যত দিন ইচ্ছা থাকতে পারবে, মেজবান সামর্থ্য না থাকলেও তার মেহমানদারি করে যাবে? এর উত্তরও পবিত্র হাদিসেই রয়েছে। আবু কারিম (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এক রাত মেহমানদারি করা প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য। যার আঙিনায় মেহমান নামে, এক দিন মেহমানদারি করা তার ওপর ঋণ পরিশোধের সমান। সে ইচ্ছা করলে তার ঋণ পরিশোধ করবে বা ত্যাগ করবে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৭৫০)

তবে তিন দিন পর্যন্ত মেহমানদারি করা সুন্নত। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু শুরাইহ খুযাঈ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মেহমানদারি তিন দিন এবং উত্তমরূপে মেহমানদারি এক দিন ও এক রাত। কোনো মুসলিম ব্যক্তির জন্য বৈধ নয় যে সে তার ভাইয়ের নিকট অবস্থান করে তাকে পাপে নিপতিত করবে। তখন সাহাবারা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! কিভাবে সে তাকে পাপে নিপতিত করবে? তিনি বললেন, সে (মেহমান) তার নিকট (এমন বেশি দিন) থাকবে, অথচ তার (মেজবানের) এমন সম্বল নেই, যা দ্বারা সে তার মেহমেনদারি করবে। (মুসলিম, হাদিস : ৪৪০৬)

মেহমানদারির ফজিলত

সম্মানজনক জীবন লাভ : কিছু গুণ এমন আছে, যেগুলো কারো মধ্যে থাকলে মহান আল্লাহ তাকে সর্বাবস্থায় সাহায্য করেন, সম্মানিত করেন। তিনি কোথাও তাঁকে অপমানিত হতে দেন না। যেমন—খাদিজা (রা.) রাসুল (সা.)-কে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, আল্লাহর কসম! তিনি কখনো আপনাকে অপমানিত করবেন না। আল্লাহর কসম! আপনি স্বজনদের খোঁজখবর রাখেন, সত্য কথা বলেন, দুঃখীদের দুঃখ নিবারণ করেন, দরিদ্রদের বাঁচার ব্যবস্থা করেন, মেহমানের সেবা করেন এবং প্রকৃত দুর্দশাগ্রস্তদের সাহায্য করেন। (মুসলিম, হাদিস : ২৯৩)

জান্নাতে প্রবেশের মাধ্যম : আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় সাধ্যমতো মেহমানের আপ্যায়ন করা জান্নাতে যাওয়ার মাধ্যম হতে পারে। হাদিস শরিফে জান্নাতে যাওয়ার যে আমলগুলো বাতলে দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে একটি হলো মানুষকে খাওয়ানো। নবীজি (সা.) মদিনায় পৌঁছে সর্বপ্রথম যে নসিহত করেছেন তা ছিল, ‘হে মানুষ! তোমরা সালামের প্রসার ঘটাও, খাদ্য দান করো এবং মানুষ ঘুমিয়ে থাক অবস্থায় (তাহাজ্জুদ) নামাজ আদায় করো। তাহলে নিশ্চয়ই তোমরা সহিহ-সালামতে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (তিরমিজি, হাদিস : ২৪৮৫)

জান্নাতে প্রাসাদ লাভ : যেসব অভ্যাসে জান্নাতে বিশেষ প্রাসাদ পাওয়া যাবে, তার মধ্যে একটি কাজ হলো মেহমানদারি করা, মানুষকে খাওয়ানো। আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জান্নাতের মধ্যে একটি বালাখানা (প্রাসাদ) আছে। এর ভেতর থেকে বাইরের এবং বাইরে থেকে ভেতরের দৃশ্য দেখা যায়। এক বেদুইন (গ্রাম্য লোক) দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! এই বালাখানা কোন ব্যক্তির জন্য? তিনি বলেন, যে লোক মানুষের সঙ্গে উত্তমভাবে কথা বলে, ক্ষুধার্তকে খাদ্য দেয়, সর্বদা রোজা পালন করে এবং মানুষ যখন রাতে ঘুমিয়ে থাকে, তখন আল্লাহ তাআলার উদ্দেশে নামাজ আদায় করে। (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৮৪)

আল্লাহর সন্তুষ্টি : মেহমানদারির দ্বারা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়া যায়। নবীজি (সা.)-এর যুগে এক আনসারি দম্পতি নিজেদের অভাব থাকা সত্ত্বেও মেহমানের সমাদর করেছিল। এতে মহান আল্লাহ এতটাই খুশি হয়েছিলেন যে তিনি এ ব্যাপারে কোরআনে আয়াত নাজিল করেছেন।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, এক লোক নবী (সা.)-এর খিদমতে এলো। তিনি (সা.) তাঁর স্ত্রীদের কাছে লোক পাঠালেন। তাঁরা জানালেন, আমাদের কাছে পানি ছাড়া কিছুই নেই। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, কে আছ যে এই ব্যক্তিকে মেহমান হিসেবে নিয়ে নিজের সঙ্গে খাওয়াতে পারো? তখন এক আনসারি সাহাবি [আবু ত্বলহা (রা.)] বললেন, আমি। এই বলে তিনি মেহমানকে নিয়ে গেলেন এবং স্ত্রীকে বললেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মেহমানকে সম্মান করো। স্ত্রী বললেন, বাচ্চাদের খাবার ছাড়া আমাদের ঘরে অন্য কিছুই নেই। আনসারি বললেন, তুমি আহার প্রস্তুত করো, বাতি জ্বালাও এবং বাচ্চারা খাবার চাইলে তাদের ঘুম পাড়িয়ে দাও। স্ত্রী বাতি জ্বালালেন, বাচ্চাদের ঘুম পাড়ালেন এবং সামান্য খাবার যা তৈরি ছিল তা উপস্থিত করলেন। বাতি ঠিক করার বাহানা করে তিনি উঠে গিয়ে বাতিটি নিভিয়ে দিলেন। তারপর স্বামী-স্ত্রী দুজনই অন্ধকারের মধ্যে আহার করার মতো শব্দ করতে লাগলেন এবং মেহমানকে বোঝাতে লাগলেন যে তাঁরাও খাচ্ছেন। উভয়েই সারা রাত অভুক্ত অবস্থায় কাটালেন। ভোরে যখন তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে গেলেন, তখন তিনি (সা.) বললেন, আল্লাহ তোমাদের গত রাতের কাণ্ড দেখে হেসে দিয়েছেন অথবা বলেছেন খুশি হয়েছেন এবং এই আয়াত নাজিল করেছেন—‘তারা অভাবগ্রস্ত হওয়া সত্ত্বেও নিজেদের ওপর অন্যদের অগ্রগণ্য করে থাকে। আর যাদের অন্তরের কৃপণতা থেকে মুক্ত রাখা হয়েছে, তারাই সফলতাপ্রাপ্ত।’ [সুরা : হাশর, আয়াত : ৯] (বুখারি, হাদিস : ৩৭৯৮)

আদব ও নিয়ম-কানুন

মেহমানকে স্বাগত জানানো : আল্লাহর রাসুল (সা.) আগত মেহমানদের স্বাগত জানাতেন। তাদের আগমনে আনন্দ প্রকাশ করতেন। (বুখারি, হাদিস : ৬১৭৬)

আন্তরিকতা প্রদর্শন করা : মেজবানের উচিত নিজ হাতে তার মেহমানদের সেবা করা, আন্তরিকভাবে তাদের হাসিমুখে গ্রহণ করা, তাদের আগমনে খুশি হয় এমন কথা বলা, যা তাদের মনকে আকর্ষণ করে। আল্লাহ তাআলা ইবরাহিম (আ.)-এর মেহমানদারি প্রসঙ্গে বলেন, ‘অতঃপর তিনি (খাবারটি) তাদের সামনে রেখে বললেন, তোমরা কি খাচ্ছ না?’ (সুরা : জারিয়াহ, আয়াত : ২৭০)
অন্তত তিন দিন পর্যন্ত মেহমানদারি করা : তিন দিন পর্যন্ত মেহমানের আপ্যায়ন করা সুন্নত। (মুসলিম, হাদিস : ৪৪০৬)
অতিথির জন্য বাড়তি চাপ নেওয়া নিষেধ : রাসুল (সা.) মেহমানদারি করতে গিয়ে সাধ্যের বাইরে অহেতুক খরচ করে আপ্যায়নের কৃত্রিমতা প্রদর্শন করতে নিষেধ করেছেন। সালমান (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি তাঁর কাছে প্রবেশ করল (মেহমান হলো)। তখন তিনি (সালমান) যা তাঁর কাছে ছিল তা দিয়ে তার আপ্যায়ন করলেন। তারপর বললেন, যদি না রাসুল (সা.) আমাদের নিষেধ করতেন, (অথবা বলেছেন) যদি না আমাদের নিষেধ করা হতো যে আমাদের কেউ যেন তার সাথির জন্য কষ্ট স্বীকার না করে, তাহলে আমরা অবশ্যই তোমার জন্য কষ্ট স্বীকার করতাম (অর্থাৎ মেহমানদারিতে অহেতুক খরচ করতাম)। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৩৭৭৪)

হাফেজ ইবন রজব (রহ.) জামি‘উল উলুম ওয়াল হিকাম’-এ বলেছেন, ‘এটি এ বিষয়ে প্রমাণ যে মেহমানকে আতিথেয়তা দেওয়ার দায়িত্ব কেবল তখনই বাধ্যতামূলক, যখন কারো কাছে কিছু অতিরিক্ত থাকে। যদি তার কাছে অতিরিক্ত কিছু না থাকে, তাহলে তার ওপর কিছুই আবশ্যক নয়। আর কেউ যদি নিজেকে অগ্রাহ্য করে (অর্থাৎ নিজের প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও) অন্যকে প্রাধান্য দেয়, যেমন—সেই আনসারি সাহাবি করেছিলেন, যাঁর সম্পর্কে আল্লাহ নাজিল করেছেন—‘তাহলে সেটা উত্তম মর্যাদা ও ইহসানের স্তরে পড়ে, কিন্তু তা ফরজ নয়।’

নিজ হাতে অতিথিদের আপ্যায়ন করা : সাহাবায়ে কেরাম মেহমানকে নিজ হাতে আপ্যায়ন করতেন। খাবার পরিবেশন করতেন। (বুখারি, হাদিস : ৫১৮৩)

খাবার পরিবেশনে বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রাধান্য দেওয়া : খাবার পরিবেশনের সময় তুলনামূলক বয়স্কদের প্রাধান্য দেওয়া, এরপর ডান দিক থেকে পরিবেশন করাও সুন্নত। কারণ রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন কোনো কওমকে পান করাতেন, তখন বলতেন, ‘বড় থেকে শুরু করো।’ (মুসনাদে আবি ইয়া‘লা)

মেহমানকে এগিয়ে দেওয়া : বিদায়ের সময় মেহমানকে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দেওয়াও মেহমানদারির গুরুত্বপূর্ণ আদব। (ফাতহুল বারি : ৯/৫২৮)
মেহমানের আদব
আবুল লায়স সমরকন্দী বলেন, মেহমানের ওপর চারটি বিষয় রয়েছে—
প্রথমত, তাকে যেখানে বসানো হয়, সেখানেই বসবে।
দ্বিতীয়ত, মেজবান যা কিছু দেয়, তাতে সে সন্তুষ্ট থাকবে।
তৃতীয়ত, মেজবানের অনুমতি ছাড়া সে উঠবে না।
চতুর্থত, বিদায়ের সময় সে মেজবানের জন্য দোয়া করবে।
কোরআন-হাদিসে মেহমানের পালনীয় আরো কিছু আদব পাওয়া যায়—
খাবার শেষ হলে সেখানে আর দেরি না করা। (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৫৩)
দাওয়াতের বাইরে অতিরিক্ত কোনো মেহমান সঙ্গে এলে মেজবানের অনুমতি নেওয়া। (বুখারি, হাদিস : ৫৪৩৪)


এমআর/টিএ


Share this news on:

সর্বশেষ

img
বগুড়ায় জামায়াতের ২০ নেতাকর্মীর বিএনপিতে যোগদান Dec 23, 2025
img
কোনো চাপের কাছে নতিস্বীকার করবে না সরকার: শিক্ষা উপদেষ্টা Dec 23, 2025
img
ডাকসুর জিএস ও এজিএসের বাগদান কাল Dec 23, 2025
img
এজেন্ট সন্দেহে উত্তর কোরিয়ার ১৮০০ চাকরির আবেদন বাতিল করল আমাজন Dec 23, 2025
img
আমার ছেলেকে আমি তারকা হতেই দেব না : শাহরুখ খান Dec 23, 2025
img
ফের রেকর্ড ভাঙলো সোনার দাম Dec 23, 2025
img
বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ভারতের পাল্টা তলব Dec 23, 2025
img
স্কোয়াড ঘোষণা করল বাংলাদেশ, অধিনায়ক সাবিনা Dec 23, 2025
img
ভারতের বিরুদ্ধে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় অভিযোগ চীনের Dec 23, 2025
img
বৈষম্যহীন ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনে গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট দিতে হবে: মিয়া গোলাম পরওয়ার Dec 23, 2025
img
যুক্তরাজ্যে ভারতীয় যুবক গ্রেপ্তার Dec 23, 2025
img
ভারতকে হারিয়ে প্রি-কোয়ার্টারে বাংলাদেশ Dec 23, 2025
img
করণ জোহরের বিরুদ্ধে ‘হোমবাউন্ড’ সিনেমা নকলের অভিযোগ! Dec 23, 2025
img
ধর্মেন্দ্রর শেষকৃত্যে কেন যাননি মমতাজ? Dec 23, 2025
img
ফারহান আখতারের ‘ডন থ্রি’ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন রণবীর সিং Dec 23, 2025
img
তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে ঢাকায় কোটি জনতার মহামিলন ঘটবে : প্রিন্স Dec 23, 2025
img
আল নাসরের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিল ফিফা Dec 23, 2025
img
ঢাবির বিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা, শনিবার চলবে অতিরিক্ত মেট্রোরেল Dec 23, 2025
img
জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি নেতা হেলাল Dec 23, 2025
img
রুক্মিণীর চরিত্রে ‘ককপিট’ ছবিতে প্রথমে অভিনয়ের কথা ছিল ফারিন খানের! Dec 23, 2025