ফিলিস্তিনিদের সাথে সংহতি: পাকিস্তানের রাস্তায় বিক্ষোভে লাখো মানুষ

ফিলিস্তিনের গাজাবাসীর প্রতি সমর্থন ও দখলদার ইসরায়েলের আগ্রাসনের নিন্দা জানাতে সম্প্রতি মার্চ ফর গাজা নামে র‌্যালি ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষ। এরপরই ফিলিস্তিনিদের সাথে সংহতি প্রকাশে পাকিস্তানের রাস্তায় নেমেছেন লাখো জনতা।

ফিলিস্তিনের পতাকার পাশাপাশি হামাস নেতাদের ছবি নিয়ে রাস্তায় নেমে ইসরায়েলি আগ্রাসনের নিন্দা জানান তারা। সোমবার (১৪ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।

বার্তাসংস্থাটি বলছে, রোববার করাচির রাস্তায় হাজার হাজার পাকিস্তানি গাজায় ইসরায়েলি যুদ্ধের নিন্দা জানাতে এবং অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনিদের সাথে সংহতি প্রকাশ করতে জড়ো হয়েছিলেন। আয়োজকরা জানিয়েছেন, এদিনের বিক্ষোভে লক্ষাধিক মানুষ অংশ নিয়েছেন।

“গাজা সংহতি মার্চ” শিরোনামে আয়োজিত এই বিশাল বিক্ষোভে করাচির প্রধান শাহরা-এ-ফয়সাল সড়ক মানুষে ভরে যায়। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেও অংশগ্রহণকারীরা ফিলিস্তিনের পতাকা উড়িয়েছেন এবং হামাসের দুই নিহত শীর্ষ নেতার — ইসমাইল হানিয়া ও ইয়াহিয়া সিনওয়ারের — ছবি বহন করেছেন।
অনেক বিদ্যুৎ খুঁটির গায়েও তাদের ছবিতে বিজয়ের চিহ্নসহ পোস্টার টানানো হয়। এছাড়া গাজায় নিহত শিশুদের স্মরণে রাস্তায় সারি সারি সাদা কাফনে মোড়ানো পুতুল রাখা হয়, যা উপস্থিত জনতাকে আবেগতাড়িত করে।

এই বিক্ষোভে হাজার হাজার নারী, অনেকে বোরকা পরা অবস্থায় এবং অনেকেই তাদের শিশু সন্তান নিয়ে অংশ নিয়েছেন। শুধু মুসলমান নয়, খ্রিস্টান ও হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যরাও এই সমাবেশে যোগ দিয়েছেন।

বিক্ষোভের সময় সড়কজুড়ে ছিল “গাজায় বোমাবর্ষণ বন্ধ করো”, “ইসরায়েল নিপাত যাক” এবং “গাজায় গণহত্যা – মুসলিম বিশ্ব লজ্জিত হও” লেখা বিশাল ব্যানার। শিক্ষার্থীদের কাঁধে ছিল একটি ১০০ ফুট দীর্ঘ ফিলিস্তিনি পতাকা, যা বিক্ষোভের অন্যতম আকর্ষণ হয়ে দাঁড়ায়।

জনতা স্লোগান দিচ্ছিল— “লাব্বাইক ইয়া গাজা” ও “লাব্বাইক ইয়া আকসা”, যার অর্থ: “গাজা, আমরা আছি” ও “আল-আকসা, আমরা আছি”। এই সময় জামায়াতে-ইসলামি দলের প্রধান নেতা হাফেজ নাঈম-উর-রহমানসহ শীর্ষ নেতারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

তিনি বলেন, “ফিলিস্তিনিদের কখনোই দমিয়ে রাখা যাবে না”। আয়োজকরা দাবি করেন, এক লাখের বেশি মানুষ এই বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন।

বিক্ষোভকারী আলি মোস্তাফা — যিনি “মুক্তি না হলে শহীদ” লেখা পোস্টার বহন করছিলেন — বলেন: “করাচি এবং গোটা পাকিস্তান সবসময় ফিলিস্তিনিদের পাশে থাকবে”। খ্রিস্টান নেতা ইউনাস সোহান বিশ্ব শক্তিগুলোর সমালোচনা করে বলেন, তারা ইসরায়েলের পক্ষে দাঁড়িয়ে সাধারণ মানুষ, হাসপাতাল এবং আশ্রয়কেন্দ্রে হামলা চালাতে সুযোগ করে দিচ্ছে।

অন্যদিকে একইদিনে ইসলামপন্থি দল জমিয়াতে উলামা ইসলাম (জেইউআই)-এর আয়োজনে একটি ফিলিস্তিন সংহতি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। দলটির প্রধান মাওলানা ফজল-উর-রহমান ইসরায়েলকে “সন্ত্রাসী রাষ্ট্র” বলে অভিহিত করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশকে ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধে সহযোগিতার অভিযোগ তোলেন।

২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধ শুরু করে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৫১ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অনেকেই নারী ও শিশু।

এসএন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
এলডিসি উত্তরণে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দিলেন প্রধান উপদেষ্টা Apr 15, 2025
img
সাংবাদিক নূরুজ্জামান লাবুকে প্রাণনাশের হুমকিতে ডিআরইউ-ক্র্যাবের নিন্দা ও প্রতিবাদ Apr 15, 2025
img
বাদামের সঙ্গে যেসব খাবার খেলে ভালো থাকবে মস্তিষ্ক Apr 15, 2025
img
রাজধানীতে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল Apr 15, 2025
img
‘ডন থ্রি’তে রণবীরের নায়িকা হতে যাচ্ছেন কে? Apr 15, 2025
img
যে কারণে আমিরের সিনেমা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন রণদীপ হুদা Apr 15, 2025
img
২০ জুলাইযোদ্ধার দৃষ্টিশক্তি ফেরালেন ব্রিটিশ চিকিৎসকেরা Apr 15, 2025
img
সাবধান হয়ে যান, শিষ্টাচারবহির্ভূত আচরণ শুরু করলে নিতে পারবেন না: হাসনাত আব্দুল্লাহ Apr 15, 2025
img
শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ৮ বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার Apr 15, 2025
img
মিরপুরে বিএনপি নেতাদের হামলার প্রতিবাদে এনসিপির বিক্ষোভ Apr 15, 2025