চৈত্রের শেষ বিকেলের তপ্ত রোদে যেন একটানা বাজছে আনন্দের বাঁশি। চারদিকে বইছে উৎসবের হাওয়া। বাঙালির প্রাণের উৎসব—পয়লা বৈশাখ। বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ বরণ করতে প্রস্তুত গোটা শহর। রাজধানীর পথে পথে করা হয়েছে আলপনা, শোভাযাত্রার সাজসজ্জা, আর ঘরে ঘরে চলছে সাজ-পোশাকের প্রস্তুতি।
এই দিন শুধু রকমারি খাবার আর শোভাযাত্রার মধ্যে সীমাবদ্ধ না। বৈশাখের সাজেও ফুটে ওঠে এক গভীর সাংস্কৃতিক সৌন্দর্য। কেমন হবে এবারের বৈশাখের সাজ? দেখে নিন সাজগোজ, পোশাক আর ত্বকের যত্নের কিছু পরামর্শ। যা আপনাকে রাখবে ঝকঝকে, আরামদায়ক আর পরিপাটি।
পয়লা বৈশাখ মানেই গরম আর ভিড়, দুই-ই নিশ্চিত। তাই সাজে থাকতে হবে স্বস্তি আর স্থায়িত্ব। দিনের শুরুতে মুখ ধুয়ে বরফ ঘষে নিলে ত্বক থাকবে ঠান্ডা ও টানটান।
ওয়াটার-বেইজড ফাউন্ডেশন বা বিবি ক্রিম ব্যবহার করুন। সানস্ক্রিন যেন ভুলেও না বাদ যায়। রোদের তাপে ত্বক পুড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থেকে রক্ষা করবে। চোখে আইলাইনার আর হালকা শেডের আইশ্যাডো—যেমন গোল্ডেন, ব্রোঞ্জ বা ব্রাউন—অনেকক্ষণ ধরে টিকে থাকে।
ঠোঁটে হালকা শিমারি রঙের লিপস্টিক মানাবে গাঢ় পোশাকের সঙ্গে। গরমে মেকআপ গলে পড়া ঠেকাতে সেটিং স্প্রে বা পাউডার রাখতে পারেন হাতব্যাগে।
বৈশাখের দিনে সবার চেনা সেই লাল-সাদার রাজত্ব এবারো থাকছে। তবে এখন এতে যোগ হয়েছে কমলা, খয়েরি, গাঢ় নীল বা ফিউশন মোটিফের রঙ।
মেয়েরা পরতে পারেন জামদানি, তাঁত, বাটিক বা কাটওয়ার্ক শাড়ি। আর যারা সালোয়ার কামিজ বা ওয়েস্টার্ন কম্বিনেশন পছন্দ করেন, তাদের জন্যও আছে অনেক বিকল্প।
ছেলেদের জন্য বেছে নেওয়া যেতে পারে সুতি বা সিল্কের পাঞ্জাবি, সঙ্গে ধুতি, পায়জামা বা এমনকি জিন্সও। মাথায় গামছা বা পাগড়িও এই দিনে মানিয়ে যায় দারুণ।
গরমে খোলা চুলে অস্বস্তি লাগতেই পারে। তাই খোঁপা, পনিটেইল, বা ডোনাট বান করে চুল সামলে নিতে পারেন। চুলের সাজে যোগ করুন ফুলের গর্জিয়াস উপস্থিতি। সাদা রঙের রজনীগন্ধা, লাল জবা, গাঁদা, গোলাপ বা রঙ্গন—সবই এই সাজে মানিয়ে যায়। হাতে ফুলের মালা জড়িয়ে নিতে পারেন।
ছোট চুল হলে একটু কার্ল করে সামনের দিকে পাফ দিয়ে ক্লিপে আটকে দিন। সাজে আসবে বৈচিত্র্য।
যে রঙের পোশাক পরলে গরমে মিলবে আরামযে রঙের পোশাক পরলে গরমে মিলবে আরাম
মাটির গয়না এখনও বৈশাখের ফ্যাশনের মধ্যমণি। সঙ্গে কাঠ, তামা, মুক্তা, রুপা বা ঝিনুকের গয়না। যারা ভারী গয়না পছন্দ করেন না, তারা পরতে পারেন ছোট একজোড়া দুল আর হাতে কাচের চুড়ি।
অ্যান্টিক নেকপিস, মাদুলি, হাঁসুলি এখন শহরের ফ্যাশন-সচেতন নারীদের প্রথম পছন্দ। চারুকলার সামনের রাস্তা, টিএসসি বা দোয়েল চত্বরে পাওয়া যাচ্ছে বাহারি গয়নাগাটি। চাইলে অনলাইন বুটিক থেকেও অর্ডার করতে পারেন।
সারাদিন রোদে হাঁটবেন, তাই পায়ের আরামে ছাড় দেয়া যাবে না। মেয়েদের জন্য ভালো বিকল্প হতে পারে ফ্ল্যাট স্যান্ডেল, হালকা হিল বা কোলহাপুরি শু। ছেলেরা বেছে নিতে পারেন ওপেন স্যান্ডেল বা সুতি স্লিপ-অন। যেন ঘাম না জমে, আর সহজে চলাফেরা করা যায়।
বাড়ি ফিরে কোনোভাবেই মেকআপ নিয়ে ঘুমিয়ে পড়বেন না। মেকআপ রিমুভার বা অলিভ অয়েলে তুলা ভিজিয়ে ভালো করে তুলে ফেলুন মুখের সাজ। এরপর মুখ ধুয়ে ক্লিনজার দিয়ে পরিষ্কার করুন, আর হালকা ময়েশ্চারাইজার দিয়ে শেষ করুন রুটিন।
চুলেও লাগাতে পারেন হালকা অয়েল বা সিরাম, সারাদিনের ধুলাবালির প্রভাব কমাতে।
ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে পয়লা বৈশাখ উদযাপন করে সব বাঙালি। কেউ শাড়ি পরে, কেউ পাঞ্জাবি, কেউ আবার ফিউশন ফ্যাশনে নিজেকে প্রকাশ করেন। সাজে ভিন্নতা থাকতে পারে, কিন্তু হৃদয়ের উৎসবে সবাই মিলে মেতে ওঠে।
সাজপোশাকের বাহার আর হাস্যোজ্জ্বল মুখে নতুন বছরকে বরণ করুন। বাঙালির প্রাণের উৎসবে থাকুক রঙ, রূপ আর ভালবাসার ছোঁয়া।
এসএন