নগরের কোতোয়ালি থানার ডিসি হিলে নববর্ষ বরণের প্রস্তুতি চলাকালে রবিবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার মিছিল নিয়ে এসে মঞ্চ ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
চট্টগ্রাম নগরের ডিসি হিলে নববর্ষের অনুষ্ঠান মঞ্চ ভাঙচুরের সময় ঘটনাস্থল থেকে আটক পাঁচ জনকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। সোমবার ভোরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। সেইসঙ্গে এ ঘটনায় কোনও মামলা হয়নি।
পুলিশ বলছে, আটকের পর তাদের বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ দেয়নি। এজন্য কোনও মামলাও হয়নি। তাই সোমবার ভোরে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার পর আটককৃতদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, সাধারণত এ ধরনের ভাঙচুর কিংবা সন্দেহজনক আটকের ঘটনায় থানা পুলিশ সিএমপির ৮৮ ধারায় আদালতে আটকদের চালান দিয়ে থাকে। তবে এই পাঁচ জনের ক্ষেত্রে সেটি হয়নি।
এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে হামলা ও ভাঙচুরের বিচারের দাবিতে সোমবার সকালে সিআরবি সাত রাস্তার মাথায় মানববন্ধন করেছে গণতান্ত্রিক জোট চট্টগ্রাম জেলা শাখার নেতাকর্মীরা।
নগরের কোতোয়ালি থানার ডিসি হিলে নববর্ষ বরণের প্রস্তুতি চলাকালে রবিবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার মিছিল নিয়ে এসে মঞ্চ ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত হয়ে আশপাশ থেকে পাঁচ জনকে আটক করে। তাদের কোতোয়ালি থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সোমবার ভোরে আটকদের ছেড়ে দেয় পুলিশ।
এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল করিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রবিবার সন্ধ্যায় ঘটনাস্থল থেকে পাঁচ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে কেউ কোনও অভিযোগ করেনি। এজন্য মামলা হয়নি। সেজন্য জিডিমূলে জিম্মায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’
জিডিমূলে কাদের জিম্মায় ছেড়ে দিয়েছেন জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘সেটা জিডি দেখে বলতে হবে।’
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদ চট্টগ্রামের ডিসি হিলে গত ৪৬ বছর ধরে বাংলা নববর্ষ বরণ ও বর্ষ বিদায় উপলক্ষে অনুষ্ঠান করে আসছে। এবার ৪৭তম বারের মতো বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের জন্য গত ১৩ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের কাছে অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়।
কিন্তু আয়োজকদের সঙ্গে প্রশাসনের সভায় নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে অনুষ্ঠানের অনুমতি ঝুলিয়ে রাখা হয়। এতে অনুষ্ঠান করা নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়ে যান আয়োজকরা। গত ১০ এপ্রিল জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজক কমিটির সঙ্গে বৈঠকে ডিসি হিলে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত অনুষ্ঠান করার অনুমতি দেওয়া হয়। তবে শর্ত দেওয়া হয়, অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী সংগঠনগুলোর গানের তালিকা প্রশাসনকে আগেই দেখাতে হবে। পহেলা বৈশাখের এ অনুষ্ঠান দেখভাল করার জন্য একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একটি তদারকি কমিটিও করে দেওয়া হয়। আয়োজকরা সকাল ৭টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত অনুষ্ঠান করার অনুমতি চাইলেও তাদের বিকাল ৪টার মধ্যে শেষ করতে বলা হয়। পাশাপাশি ‘বিতর্ক হতে পারে’–এমন কোনও গান বা কবিতা না রাখার অনুরোধ করে প্রশাসন।
সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদ ডিসি হিলে প্রতিবারের মতো এবারও নববর্ষ বরণের আয়োজন করেছিল। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসন অনুমতিও দেয়। রবিবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠানের প্রস্তুতির সময় একটি মিছিল থেকে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটলে পরিষদ অনুষ্ঠান বাতিল করে। ৪৭ বছরে এই প্রথম বাধার কারণে নববর্ষের অনুষ্ঠান হলো না ডিসি হিলে। ১৯৭৮ সাল থেকে ডিসি হিলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান হয়ে আসছে। তবে করোনার কারণে দুই বছর এই আয়োজন বন্ধ ছিল।
সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদের সমন্বয়ক সুচরিত দাশ খোকন বলেন, ‘৩০-৪০ জনের একটি দল মিছিল নিয়ে ফ্যাসিস্ট দোসররা হুঁশিয়ার সাবধান, আওয়ামী লীগের দালালরা, হুঁশিয়ার সাবধান—স্লোগান দিতে দিতে, পুলিশের সামনেই মঞ্চ ভাঙচুর করেছিল। এ ঘটনার প্রতিবাদে আমরা এবারের পহেলা বৈশাখে সব কর্মসূচি বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কোনও প্রোগ্রাম হবে না। সকালে শুনেছি, আটকদের ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ।’
এদিকে, ডিসি হিলের ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার সকালে সিআরবি এলাকায় প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। সমাবেশে সিপিবি চট্টগ্রাম জেলার সহকারী সাধারণ সম্পাদক নুরুচ্ছাফা ভূঁইয়া, বাসদের আল কাদেরি, বাসদ মার্ক্সবাদীর সমন্বয়ক শফিউদ্দিন কবির প্রমুখ বক্তব্য দেন। সমাবেশে বক্তারা বলেন, ডিসি হিলে ঐতিহ্যবাহী বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের মঞ্চ ভাঙচুরের দায় জেলা প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এড়াতে পারে না। এই ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত। প্রশাসন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। বাঙালি সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং জাতিগত অস্তিত্বের জন্য এটা এক অশনিসংকেত। আটক ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়ার প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
এফপি/টিএ