নামাজ পড়া হারাম যে সময়ে

নামাজ ইসলামের মূল ভিত্তি। নামাজ ইসলামের প্রাণ। মুমিন ও কাফেরের মাঝে বড় পার্থক্য নামাজ। পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ ছাড়াও নফল নামাজ পড়ার বিধান ইসলামি শরিয়তে বিদ্ধমান রয়েছে। নামাজ আদায়ের জন্য নামাজের সময় হওয়া জরুরি। তাই কিছু সময় এমন আছে, যে সময়গুলোতে নামাজ আদায় করা নিষিদ্ধ।

নামাজের নিষিদ্ধ সময়

দিনরাতে তিনটি সময়ে নামাজ পড়া নিষিদ্ধ, মহানবী সা. বলেন, ১. আসরের নামাজের পর সূর্য না ডোবা পর্যন্ত আর কোনও নামাজ নেই। ২. ফজরের নামাজের পর সূর্য না ওঠা পর্যন্ত আর কোন নামাজ নেই। (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত ১০৪১)

হযরত উকবা বিন আমের রা. বলেন, আল্লাহর রসুল সা. আমাদেরকে তিন সময়ে নামাজ পড়তে ও মুর্দা দাফন করতে নিষেধ করতেন। ১. ঠিক সূর্য উদয় হওয়ার পর থেকে একটু উঁচু না হওয়া পর্যন্ত, ২. সূর্য ঠিক মাথার উপর আসার পর থেকে একটু ঢলে না যাওয়া পর্যন্ত। ৩. সূর্য ডোবার কাছাকাছি হওয়া থেকে ডুবে না যাওয়া পর্যন্ত। (মুসলিম, আহমাদ, মুসনাদ, আবু দাউদ, নাসাঈ) যেহেতু এই সময়গুলিতে সাধারণত কাফেররা সূর্যের পূজা করে থাকে তাই। (মুসলিম, মিশকাত ১০৪২)

হযরত সাহাবি উকবা বিন আমের জুহানি রা. বলেন, ‘তিনটি সময়ে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে নামাজ পড়তে ও মৃতের দাফন করতে নিষেধ করতেন। সূর্য উদয়ের সময়; যতক্ষণ না তা পুরোপুরি উঁচু হয়ে যায়। সূর্য মধ্যাকাশে অবস্থানের সময় থেকে নিয়ে তা পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়া পর্যন্ত। যখন সূর্য অস্ত যায়।’ (সুবুলুস সালাম ১/১১১, মুসলিম ১/৫৬৮)
সূর্য উঠার শুরু থেকে হলুদ আলো পুরোপুরি দূর না হওয়া পর্যন্ত সময়টুকুতে সব ধরনের নামাজ পড়া নিষেধ। ফকিহরা গবেষণা করে দেখেছেন সূর্য উঠার পর হলুদ আলো দূর হতে ২০ মিনিট সময় লাগে। অর্থাৎ আবহাওয়া অফিস যদি বলে, সকাল ছয়টায় সূর্য উঠবে, তার মানে ৬টা ২০ পর্যন্ত সব ধরনের নামাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।

সূর্য যখন ঠিক মাথার ওপরে থাকে তখনও সব ধরনের নামাজ এবং সেজদা করা নিষেধ। আরবি ভাষায় এ সময়কে ‘জাওয়াল’ বলে। যখন সূর্য একটু হেলে পড়বে তখন জোহরের ওয়াক্ত শুরু হয়। এ সময় সব ধরনের নামাজ এবং সেজদা করা জায়েজ। সূর্য মাথার ওপর থেকে হেলে পড়তে বেশি সময় লাগে না। ফকিহরা সতর্কতাবশত সূর্য মাথার ওপরে উঠার পাঁচ মিনিট আগে এবং পাঁচ মিনিট পর পর্যন্ত নামাজ থেকে বিরত থাকতে বলেছেন।

সূর্য যখন হলুদ বর্ণ ধারণ করে ডুবতে শুরু করে তারপর সূর্যাস্ত পর্যন্ত সব ধরনের নামাজ পড়া নিষেধ। মাওলানা ইউসুফ লুধিয়ানাভী রহ. বলেন, এ তিন সময়ে জানাজার নামাজ এবং মৃতকে দাফন করাও নিষেধ। তবে মৃতকে তাড়াতাড়ি দাফন করার প্রয়োজন হলে জানাজা পড়িয়ে দাফন করার অনুমতি আছে।

এছাড়াও কেউ যদি কারণবশত আসর নামাজ পড়তে ভুলে যায়, তাহলে সূর্য ডুবতে শুরু করার আগে আগে আসরের নামাজের নিয়ত বাঁধলে আর এর মধ্যে সূর্য ডোবা শুরু হয়ে গেলে নামাজ আদায় হয়ে যাবে। সূর্য ডোবা শুরু হয়ে গেলে আর আসর নামাজ পড়ার সুযোগ থাকে না। তখন আসরের ওয়াক্ত শেষ হয়ে যায়।

সময়ের আগে বা পরে নামাজ পড়া

কেউ হয়ত জোহরের নামাজ পড়ে জানতে পারল, যে সময় সে নামাজ পড়েছে সে সময় জোহরের ওয়াক্ত ছিল না, আসরের ওয়াক্ত হয়ে গিয়েছিল, তবে তার আর দ্বিতীয়বার কাজা পড়তে হবে না। সে ইতিপূর্বে যে নামাজ পড়েছে সেটাই কাজার মধ্যে গণ্য হয়ে যাবে।

কিন্তু যদি কেউ নামাজ পড়ে জানতে পারে, ওয়াক্ত হবার পূর্বেই নামাজ পড়েছে, তবে সেই নামাজ আদৌ আদায় হবে না, পুনরায় পড়তে হবে। নামাজ শুদ্ধ হওয়ার জন্য ওয়াক্ত বা সময় হওয়া জরুরি। ওয়াক্তের আগে কখনই নামাজ আদায় হবে না।

বিতির নামাজের সময়

বিতির নামাজের ওয়াক্ত এশার পর হতেই শুরু হয়। সুবহে সাদেকের পূর্ব পর্যন্ত থাকে। কিন্তু রাত দ্বিপ্রহরের পরও বেতর নামাজের ওয়াক্ত মাকরুহ হয় না। যারা তাহাজ্জুদ পড়ার অভ্যাস আছে, যদি শেষ রাতে উঠার দৃঢ় বিশ্বাস থাকে, তবে তার বিতির নামাজ শেষ রাতে পড়াই উত্তম। যদি শেষ রাতে ঘুম ভাঙার সম্ভাবনা না থাকে, তবে এশার পর ঘুমাবার পূর্বে বিতির পড়ে নেয়া উচিত।

যে সময়ে নামাজ পড়া উচিত নয়

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ যেনও সূর্যোদয় বা সূর্যাস্তের সময় নামাজ পড়ার চেষ্টা না করে। হযরত আবু সাঈদ আল-খুদরি থেকে বর্ণিত আমি আল্লাহর রসুলকে বলতে শুনেছি, সকালের নামাজের পর সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত কোনও নামাজ নেই। আসরের নামাজের পর সূর্যাস্ত পর্যন্ত কোনও নামাজ নেই।

সূর্যোদয়ের পর ফজরের নামাজ পড়া যাবে কি?

সূর্যোদয়ের পর ফজরের নামাজ পড়া যাবে। সুবহে সাদিক হলো শেষ রাতে পূর্ব আকাশে লম্বা আকৃতির যে আলোর রেখার আভাস দেখা যায়। তা দেখা যাওয়ার পর থেকে সূর্য ওঠার বেশ কয়েক মিনিট (২০-২২) আগে ফজরের নামাজ পড়া শেষ করতে হয়। এরপর সূর্যোদয়ের সময় ১০-১৫ মিনিট নামাজ পড়া যায় না। সূর্য উঠে গেলে আবার নামাজ আদায় করা যাবে।

সূর্য অস্ত যাওয়া বলতে কী বুঝায়?

সূর্যাস্ত। এটার মানে হলো সূর্য ডুবে যাওয়া। নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে দেখা হিসাবে, বিষুব রৌদ্রটি বসন্ত ও শরৎ উভয়দিকে ঠিক পশ্চিমে সেট করে। ঠিক তখনই পৃথিবী সূর্যের আলো পায় না। এটাকেই আমরা সূর্যাস্ত বলি।

আরএম/এসএন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
দেশে অন্তর্ভুক্তির পরিবর্তে বিভক্তির রাজনীতি চলছে : মাসুদ কামাল Sep 15, 2025
img
নারায়ণগঞ্জে গাড়ির ধাক্কায় প্রাণ হারাল ১ Sep 15, 2025
img
গত ১৭ বছর কোনো কাজ করতে পারিনি : বেবী নাজনীন Sep 15, 2025
img
ম্যাচ শেষে হ্যান্ডশেক না করার কারণ জানালেন সূর্যকুমার Sep 15, 2025
img
বিশেষ সাংবিধানিক আদেশে সনদ বাস্তবায়নে আদালতের মত চায় বিএনপি Sep 15, 2025
img
জাপানে ১০০ বছর বয়সী মানুষের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ Sep 15, 2025
img
জুলাই সনদ না মানলে প্রার্থিতা বাতিলের প্রস্তাব জামায়াতের Sep 15, 2025
img
দেশের শান্তি বড় শান্তি : প্রধান উপদেষ্টা Sep 15, 2025
img

কাতারের প্রধানমন্ত্রী

দ্বৈত নীতি বন্ধ করে ইসরায়েলকে শাস্তি দিন Sep 15, 2025
img
হেসে খেলেই পাকিস্তানকে হারাল ভারত Sep 14, 2025
img
লুৎফুজ্জামান বাবরকে স্যার স্যার করে জড়িয়ে ধরলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Sep 14, 2025
img

পাপিয়া

আমরা কি বাংলাদেশে রোহিঙ্গা! Sep 14, 2025
img
সিলেটের ডিসি সারওয়ার আলমকে শোকজ Sep 14, 2025
img
পড়ার সুযোগ পেয়েও যুক্তরাষ্ট্রে যেতে পারছেন না হাজার হাজার শিক্ষার্থী Sep 14, 2025
img
দীর্ঘ নয় বছর পর শিবচরে কমিটি ঘোষণা করলো বিএনপি Sep 14, 2025
ব্যাপক অভিযানে সৌদিতে গ্রেপ্তার ২১ হাজারেরও বেশি প্রবাসী Sep 14, 2025
img
৬ বিভাগে ভারি বর্ষণের সতর্কতা জারি, পাহাড়ি এলাকায় পাহাড়ধসের শঙ্কা Sep 14, 2025
img
নাইজেরিয়ায় বিয়ের বাস নদীতে পড়ে প্রাণ গেল ১৯ জনের Sep 14, 2025
img
রানীরা কাউকে অনুসরণ করে না : অপু বিশ্বাস Sep 14, 2025
img
খুনি হাসিনার এমন বিচার হবে, পৃথিবীর সব স্ট্যান্ডার্ড আইন তা মেনে নেবে : সারজিস আলম Sep 14, 2025