শেখ হাসিনা-কাদের-আসাদুজ্জামানসহ ৪০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা

রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানখানাপুর এলাকার বাসিন্দা মো. আব্দুল গণি শেখ (৪৫) বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ১৯ জুলাই ঢাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। ওই ঘটনায় গত ২৭ সেপ্টেম্বর তার বাবা মো. আব্দুল মজিদ শেখ বাদী হয়ে ঢাকার গুলশান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
 
ওই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ১ নম্বর আসামি করে ৪২ জনের নাম উল্লেখ করে ও ৩৫০ থেকে ৪০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। এরপর গত ৬ এপ্রিল রাত সাড়ে ১০টার দিকে সাবেক সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী গ্রেপ্তার হওয়ার পর এই মামলার বিষয়টি সামনে আসে।

মামলার আসামিরা হলেন—সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক পরিবেশমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সাবেক আইসিটি মন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত, সাবেক তথ্যমন্ত্রী ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, সাবেক রেলমন্ত্রী ও রাজবাড়ী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. জিল্লুল হাকিম, সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও রাজবাড়ী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী, সাবেক বিচারপতি ও যুদ্ধ অপরাধ ট্রাইবুনালের কো-অর্ডিনেটর মোহাম্মদ শামসুল হক, ঢাকা-১১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াকিল উদ্দিন, সাবেক এমপি শাহজাহান খান, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আতিকুল ইসলাম আতিক, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য খন্দকার এনায়েতুল্লাহ, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিএমপির সাবেক যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, গুলশান থানার সাবেক ডেপুটি কমিশনার মো. আব্দুল আহাদ মিয়াসহ ৪২ জন। এ ছাড়া মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ৩৫০ থেকে ৪০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
 
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত ১৯ জুলাই বেলা ১১টার দিকে মো. আব্দুল গণি শেখ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মিছিলে অংশগ্রহণ করে গুলশান থানার শাহজাদপুর বাঁশতলা ফুটওভার ব্রিজের পশ্চিম পাশে রাস্তার ওপর অবস্থানকালে তার মাথার ডান ও বামে গুলিবিদ্ধ হন। এরপর পথচারীরা দ্রুত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বেলা সাড়ে ১২টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
 
মামলার এজাহারে উল্লেখ আছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এবং বর্ণিত অন্যান্য আসামিদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নির্দেশনায় এবং তাদের অনুসারী আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সন্ত্রাসীরা তাদের কাছে থাকা অবৈধ অস্ত্র দ্বারা এলোপাতাড়ি গুলি করে গণিকে হত্যা করে। পুলিশ মরদেহের সুরতহাল ও অন্যান্য কার্যক্রম শেষে গত ২১ জুলাই দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। ওইদিন বাদ আসর রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানখানাপুর নিজ বাড়িতে তার মরদেহ দাফন করা হয়

মামলার বিষয়ে জানতে মোবাইলে রাজধানীর গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহমুদুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় আব্দুল গণি শেখ হত্যার ঘটনায় তার বাবা আব্দুল মজিদ শেখ বাদী হয়ে গুলশান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি র‍্যাব তদন্ত করছে।

রাজবাড়ী কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) মো. জসিম উদ্দিন বলেন, বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় রাজিব মোল্লার দায়ের করা মামলায় সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলীকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। এ ছাড়া গোয়ালন্দ মোড়ে গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় রাজবাড়ী থানায় জিসান খানের দায়ের করা মামলার তদন্তেও প্রাপ্ত আসামি হিসেবে তাকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়েছে।

এর আগে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় রাজবাড়ীতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার মামলায় গত ৬ এপ্রিল রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিশেষ অভিযান চালিয়ে রাজধানীর ঢাকার মহাখালী থেকে সাবেক সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলীকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। তাকে দুই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রাজবাড়ীতে আনা হয়। পরদিন ৭ এপ্রিল দুপুর পৌনে ১২টায় তাকে আদালতে তোলা হয়। এ সময় রাজবাড়ী সদর আমলি আদালতের বিচারক জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. তামজিদ আহমেদ তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।


এমআর/এসএন


Share this news on:

সর্বশেষ

img
হাসিনা আগেই টাকার বস্তা নিয়ে আত্মীয়-স্বজনকে ভাগিয়ে দিয়েছে : এ্যানি Nov 14, 2025
img
রাতে মাত্র দুই ঘণ্টা ঘুমান জাপানের প্রধানমন্ত্রী! Nov 14, 2025
img
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে আর কিছু পাওয়া যাবে না : রাজ্জাকী Nov 14, 2025
img
নিজেদের প্রতিষ্ঠানে নারী কর্মীদের ৫ মিনিট আগেও ছাড়েন না: নিলুফার চৌধুরী মনি Nov 14, 2025
img
কিশোরগঞ্জের নিকলীতে যাত্রীবাহী ট্রলারে দুর্বৃত্তদের আগুন Nov 14, 2025
img
খুশকি ও চুল পড়ার পেছনে কারণগুলো Nov 14, 2025
img
সরকারের তিন উপদেষ্টাকে অপসারণ করতে হবে: ডা. তাহের Nov 14, 2025
img
এবার বিবিসিকে সাক্ষাৎকার দিলেন শেখ হাসিনা Nov 14, 2025
img
নারীদের ঘরে ঢুকিয়ে দিতে ৫ ঘণ্টা কর্মঘণ্টার কথা বলছে: সেলিমা রহমান Nov 14, 2025
img
আকর্ষণীয় হতে গিয়ে বিপদের মুখে অভিনেত্রী শার্লিন Nov 14, 2025
img
নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না আওয়ামী লীগ: প্রধান উপদেষ্টা Nov 14, 2025
img
মুরাদ-তাইজুলের ঘূর্ণিতে ইনিংস ব্যবধানে জিতল বাংলাদেশ Nov 14, 2025
img
একই দিনে সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের সিদ্ধান্ত ইতিবাচক : নুরুল হক নুর Nov 14, 2025
img

প্রেস সচিব শফিকুল আলম

পত্রিকা, টিভি চ্যানেল, অনলাইনগুলো ইচ্ছেমতো বানিয়ে বানিয়ে খবর ছাপিয়ে পার পেয়ে যায় Nov 14, 2025
img
মিরসরাইয়ে পদ ফিরে পেলেন বিএনপি-যুবদলের ৩ নেতা Nov 14, 2025
img
স্পটিফাই-এ এবার দেখা যাবে ভিডিও গানও! Nov 14, 2025
img

তিন উপদেষ্টার অপসরণের দাবি আট দলের

একই দিনে গণভোট-নির্বাচন সংস্কারকে গুরুত্বহীন করবে : ডা. তাহের Nov 14, 2025
img
পৃথিবী ও সূর্যের দিকে ধেয়ে আসছে রহস্যময় ধূমকেতু Nov 14, 2025
img
জুলাই সনদ যেভাবে স্বাক্ষরিত হয়েছে বিএনপি অক্ষরে অক্ষরে সেটি পালনে প্রস্তুত: সালাহউদ্দিন আহমদ Nov 14, 2025
img
গাজার দিকে ধেয়ে আসছে ভয়াবহ ঝড়, বড় ঝুঁকিতে ৯ লাখ ফিলিস্তিনি Nov 14, 2025