বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ফ্যাসিষ্টের বিদায়ের পর আমরা ১৫ দিন মসজিদ, মন্দির ও গির্জা মঠ পাহারা দিয়েছি। আমরা এমন রাষ্ট্র কায়েম করতে চাই যেখানে কোনো প্রতিষ্ঠান পাহারা দিতে না হয়। সংখ্যালঘু নয়, নিরাপত্তা সবাইকে দেয়া হবে। আমরা ওয়ারেন্টি দিচ্ছি। দেশের প্রতিটি মানুষ নিরাপত্তা ও সম্মান নিয়ে বাঁচবে। আমরা আল্লাহকে ভয় করি। যারা আল্লাহকে ভয় করে তারা কখনোই অন্যের সম্পদ, সম্মান ও ইজ্জত নষ্ট করে না। আমরা সৎ লোকের শাসন ও কোরআনের শাসনে বাংলাদেশকে বদলে দিতে চাই। এতে আপনাদের পাশে চাই, আপনাদের বুকে একটু ঠাঁই চাই।
শনিবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে লালমনিরহাট শহরের কালেক্টরেট মাঠে জেলা জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী আমাদের দেশে প্রবেশ করে লালমনিরহাটের ছেলে ভুট্টার পাতা সংগ্রহরত হাসিনুরকে ধরে বুকের ওপর পা দিয়ে গুলি করে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গেছে।
আমার প্রশ্ন, হাসিনুর কি মানুষ নয়? মানুষ হয়ে মানুষের বুকের ওপর পা দিয়ে গুলি করে কীভাবে হত্যা করে? ভারত আমাদের প্রতিবেশী দেশ। তাদের স্বাধীনতাকে আমরা সম্মান করি। আমরা তাদের সাথে সম্মান, শ্রদ্ধা আর সম্প্রীতির সাথে বসবাস করতে চাই। আমরা ভালো না থাকলে তারা ভালো থাকবে কি না সেটা তাদের ভাবতে হবে।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে। আমরা নির্বাচন চাই। নির্বাচনের আগে খুনিদের বিচার ও প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। প্রয়োজনীয় সংস্কার ছাড়া পেশিশক্তির নির্বাচন দেশবাসী মেনে নেবে না।
আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ফ্যাসিস্টরা জনগণের অধিকার ও কর্মসংস্থান কেড়ে নিয়েছিল। গুম খুন আয়না ঘরে বন্দি করে জনগণের কণ্ঠ রোধ করেছিল। জনগণের আন্দোলনে তারা শুধু গদিই ছাড়েনি, দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। সহকর্মীদের পর্যন্ত বলে যেতে পারেনি। যারা দেশকে ভালোবাসে তারা কখনো দেশ ছেড়ে পালায় না, দেশের টাকা চুরি করে বিদেশে বেগম পাড়া বানায় না। জনগণের বিপক্ষে গিয়ে কেউ রক্ষা পায়নি, পাবেও না।
ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, ফ্যাসিবাদীদের পতন হলেও ফ্যাসিবাদের পতন হয়নি। এখনও সড়ক কারখানাসহ সর্বত্র চাঁদাবাজ আর দখলবাজদের অত্যাচারে মানুষ অতিষ্ঠ। এসব চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে শুরু করেছে। এটাকে আমরা সাধুবাদ জানাই।
দুর্নীতি প্রসঙ্গে জামায়াত আমির বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্মানজনক বেতন ভাতা নিশ্চিত করতে হবে। যাতে তারা সন্তোষজনক ভাতা নিয়ে সম্মানের সাথে মানুষের সেবা করতে পারে, নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করতে পারে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি করতে বাধ্য করেছে রাষ্ট্রযন্ত্র। ১৩ হাজার টাকা বেতন পাওয়া কর্মচারীকে বাসা বাড়া যদি ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়। তাহলে সেই কর্মচারী কী করবে? আমরা এমন রাষ্ট্র চাই যেখানে সকল শ্রেণিপেশার মানুষ সম্মান নিয়ে বাঁচতে পারে।
শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আমিরে জামায়াত বলেন, বর্তমানে শিক্ষিতরা নিজেকে রাজা মনে করে। শিক্ষাজীবন শেষ করে কর্মসংস্থানের জন্য দুয়ারে দুয়ারে নিস্ফল ঘুরে আত্মহত্যাও করছে বর্তমান শিক্ষিতরা। আমরা চাই, শিক্ষাজীবন শেষ করে সনদ নিয়ে সোজা কর্মস্থলে যাবে আমাদের সন্তানরা। সেই শিক্ষা ব্যবস্থা ও কর্মস্থল নিশ্চিত করতে হবে।
নিরাপত্তা প্রসঙ্গে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, বিগত ৫৪ বছরের সরকারগুলো নারীদের নিরাপত্তা, সম্মান ও মর্যাদা দিতে পারেনি। অনেকেই বলে, জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীরা চাকরি করতে পারবে না। যা ভুল ধারণা। আমরা আগে নারীদের নিরাপত্তা ও সম্মান নিশ্চিত করে নিরাপদ কর্মস্থল গড়ে তুলব। আমরা এমন বাংলাদেশ গড়তে চাই যেখানে নারীরা স্বাধীনভাবে চলবে, কেউ তাদের দিকে চোখ তুলে তাকানোর সাহস পর্যন্ত পাবে না।
লালমনিরহাট জেলা জামায়াতের আমির অ্যাডভোকেট আবু তাহেরের সভাপতিত্বে জনসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মওলনা আব্দুল হালিম, জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট ফিরোজ হায়দার লাভলু, হাতীবান্ধা উপজেলা হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টের সভাপতি পুস্পজিৎ রায়সহ জামায়াতের কেন্দ্রীয়, আঞ্চলিক ও জেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
জনসভার পর জামায়াতের আমির বিএসএফের গুলিতে নিহত লালমনিরহাটের হাতীবান্ধার যুবক হাসিনুরের বাড়িতে যান। সেখানে তার পরিবারের খোঁজখবর নিয়ে নীলফামারীর উদ্দেশ্যে রওনা করেন।
আরএম/এসএন