জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় এখন বাখরখানির দোকান

দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়টি এখন বাকরখানির দোকানে পরিণত হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ শহরের দুই নং রেলগেইট এলাকার কার্যালয়টি এতদিন ধরে ভাসমান মানুষ ও পথচারী শিশুদের আশ্রয়ঘর হিসেবে থাকলেও এবার বাকরখানির দোকান দেয়া হয়েছে। 

রোববার (২০ এপ্রিল) সকাল থেকে এই দোকানে বাকরখানি বানানো ও বিক্রি করতে দেখা যায়।

দোকানের মালিক মো. সুমন মিয়া বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই অফিসটি ময়লা আবর্জনায় ভরপুর ছিলো। সেই সাথে দিন-রাত নেশাখোরদের আড্ডা ছিলো। তাই অফিসের সামনের জায়গাটি পরিস্কার পরিছন্ন করে এই দোকান দেয়া হয়েছে। জাসাসের এক নেতা দোকান বসিয়ে দিয়েছেন। তবে জাসাসের এই নেতার নাম প্রকাশ করতে তিনি অপরাগতা প্রকাশ করেন।

এর আগে গত বছরের ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। আর এই পতনের সাথে সাথে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে চলে যান। আবার কেউ কেউ বিদেশে পাড়ি জমান। এই অবস্থায় একসময় নেতাকর্মীদের দ্বারা সবসময় জমজমাট থাকা শহরের দুই নং রেলগেইট এলাকার আওয়ামী লীগ কার্যালয়টি জনমানবহীন ভুতুরে ভবনে পরিণত হয়।

জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয় পাগল-মাস্তান ও ভবঘুরে নারী পুরুষের বাসস্থান হিসেবে করে আসছিলেন। ছাত্র জনতার অভ্যুত্থান চলাকালে বিক্ষুব্ধ জনতার হামলায় ধ্বংস্তুপে পরিণত হয়েছিলো জায়গাটি। পরবর্তীতে ভাসমান মানুষের আনাগোনা বাড়তে থাকে নারায়ণগঞ্জ শহরের উপকন্ঠে অবস্থিত এই আওয়ামীলীগ কার্যালয়টিতে।

অফিসের দায়িত্বে থাকা মো. সবুজ বলেন, গত বছরের ৫ তারিখের পর পুরা অফিস তছনছ হয়ে গেছে। এর আগেও ভাংচুর হয়েছে। ভেতরের যা ছিল সবই চুরি করে নিয়ে গেছে। এখন শহরের ভাসমান মানুষ দিন-রাত অফিসের সামনে ঘুমিয়ে থাকে। আগে অফিসের ভিততে ঘুমাইতো। একসময় অবৈধ কাজকর্মও হতো। পরবর্তীতে কয়েকজন লোক টিন দিয়ে আটকিয়ে দেয়ায় এখন বাহিরে ঘুমায়। এবার একটি বাকরখানির দোকান দেয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ডাক্তার সেলিনা হায়াৎ আইভীসহ স্থানীয় বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতার অর্থায়ণে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগের দুই তলা বিশিষ্ট কার্যালয়টি কয়েক বছর আগে নতুন ও বড় করে নির্মাণ করা হয়েছিলো। তবে এখন নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগের দলীয় এই কার্যালয়টি যেন ভুতুরে ভবনে পরিণত হয়েছে। আর আওয়ামী লীগ নেতারা বিভিন্ন মামলার আসামি হয়ে পলাতক অবস্থায় রয়েছেন।

নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ বলেন, আওয়ামী লীগ ফ্যাসিবাদী সরকার ব্যবস্থা কায়েম করেছিলো। ফ্যাসিবাদী সরকার ব্যবস্থার সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পর্ক নাই। তারা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে একটি শ্রেণি সৃষ্টি করেছিলো। সেই শ্রেণিটিই ক্ষমতা দখল করে রেখেছিলো। বর্তমানে দলটি জনগণের মাধ্যমে বিতাড়িত হয়ে একটি ময়লা আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। কাজেই তাদের কার্যালয়টি ময়লা আবর্জনার বাগাড়ে পরিণত হওয়াটাই স্বাভাবিক। 

আরএম/টিএ 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
সংস্কার কাজে দেরি না করার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার Apr 20, 2025
img
চট্টগ্রামে পেট্রোলবোমা হামলায় দগ্ধ সিএনজির দুই যাত্রী Apr 20, 2025
img
সুপারহিট তামান্নার‘ওডেলা ২’সিনেমা সুপারফ্লপ Apr 20, 2025
img
অনাথ শিশুকে উদ্ধার, নেটিজেনদের প্রশংসায় ভাসছেন দিশা পাটানির বোন Apr 20, 2025
img
জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন Apr 20, 2025
img
শুনানির জন্য প্রস্তুত এ টি এম আজহারের আপিল, সোমবার উপস্থাপন Apr 20, 2025
img
পিতৃত্বকালীন ছুটির ব্যবস্থা রেখে আইন প্রণয়নের সুপারিশ Apr 20, 2025
img
আইএমএফ’র টাকা নিয়ে যা বললেন গভর্নর Apr 20, 2025
img
বিজয়ের স্বপ্ন পূরণ: ৫০ সেঞ্চুরির মাইলফলকে গড়লেন ইতিহাস Apr 20, 2025
img
নিজের রেকর্ড এবার নিজেই ভাঙতে চলেছেন শাকিব? Apr 20, 2025