‘আপাতত আর কোনও প্লট বরাদ্দ দেবে না রাজউক’

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) চেয়ারম্যান মো. রিয়াজুল ইসলাম বলেছেন, আপাতত আর কোনও প্লট বরাদ্দ দেবে না।

সোমবার (২১ এপ্রিল) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরাম বাংলাদেশ (ইউডিজেএফবি) আয়োজিত ‘সমস্যার নগরী ঢাকা: সমাধান কোন পথে?’ শীর্ষক নগর সংলাপে এসব কথা বলেন তিনি।

মো. রিয়াজুল ইসলাম বলেন, আমাদের আপাতত কোনও জমি অ্যাকুইজিশন করে প্লট বরাদ্দ দেওয়ার কোনও টার্গেট নেই। অনেকে আমাকে বলে যে কোনও প্লট বরাদ্দ দেওয়া হবে কিনা। আমি বলে দেই ‘নো বরাদ্দ’। আমরা আপাতত কোনও প্লট বরাদ্দ দেবো না। আমাদের যে জায়গাগুলো আছে, সেগুলো আমরা আমাদের নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণীর জন্য আবাসন ব্যবস্থা করবো। এটা কিস্তিতে বা অন্য পদ্ধতিতে দেওয়া হতে পারে।

তিনি বলেন, আমাদের তিলোত্তমা বাদ, সব বাদ। আমরা এখন একটা বাসযোগ্য নগরী চাই। কারণ আমরা এখন অতীতে যেতে পারবো না। আমরা ঢাকাকে ডেমোলিশের (ধ্বংস) জন্য আর কিছু করতে পারবো না। আমরা যে জায়গায় আছি, তা নিয়ে সামনে এগোতে হবে। আর এটাকে যদি আমরা বাসযোগ্য করতে পারি তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে কিছুটা দায়মুক্ত থাকবো।

রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, আমরা সবাই একত্রিত হয়ে যদি একটা সিটি গভর্নমেন্ট হয়। ঢাকা শহরের উন্নয়নের জন্য যতগুলো সংস্থা আছে সবার এক ছাতার নিয়ে যদি আমরা একটা প্রোপার প্ল্যানিং করতে পারি এবং সে প্ল্যান যদি আমরা বাস্তবায়ন করতে পারি তাহলে সমস্যা সমাধান হবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।

তিনি বলেন, আমাদের জনঘনত্ব একটা সমস্যা। আর আমাদের সবার আইন না মানার একটা প্রবণতা রয়েছে। এ টু জেড সবার আইন না মানার প্রবণতা আছে। অনেকে বাড়ির দেয়াল দেয় রাস্তা ঘেঁষে। কিন্তু বাড়ির কলাম ঠিকই রাস্তা থেকে পাঁচ ফুট ভেতরে দেয়। কারণ তারা জানে কোন একদিন তাদের দেয়াল ভাঙা পড়বে। তারা কিন্তু আইন জানে, জেনেই ওরকম করে।

রাজউক চেয়ারম্যান আরও বলেন, নগরে বস্তি তৈরি হওয়ার জন্য মানুষ দায়ী। আমরা কাজের লোকে অভ্যস্ত। উন্নত বিশ্বে কয়টি বাড়িতে কাজের লোক আছে? কাজের মানুষদের আমরাই ঢাকা শহরে এনেছি। বস্তিগুলো তৈরি হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছি। তাই আমরা নিজেরাই নিজেদের কাজগুলো কীভাবে করতে পারি, এ বিষয়েও পরিকল্পনা থাকা উচিত।

সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান। প্রবন্ধে তিনি বলেন, ঢাকা নগরের সমস্যাগুলো সমাধানে মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া হয় না। ঢাকার বেশির ভাগ সমস্যা সমাধানে স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ফলে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পরিকল্পনাগুলোও শেষ হয়ে যায়, সমাধান আসে না।

থাইল্যান্ডের একটি প্রকল্পের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, মহল্লাভিত্তিক উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হলে আগামী পাঁচ বছরে ঢাকা শহরের ৫০ ভাগ সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। এসময় ঢাকার সমস্যাগুলো সমাধানে মহল্লাভিত্তিক প্রকল্প গ্রহণের পরামর্শও দেন তিনি।

বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) চেয়ারম্যান আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ঢাকা শহর এখন একটা তাপের শহর হয়ে গিয়েছে। এটা একটা হিট চেম্বার হয়ে গেছে। ধারণ ক্ষমতার বেশি মানুষ এখানে রয়েছে। পৃথিবীর কোনও শহরে এতো মানুষ নেই। এতো মানুষ নিয়ে কখনও আমরা এই শহরকে একটা বসবাসযোগ্য করতে পারবো না। এখানে একটা সিলিং দিতে হবে। আর কত মানুষ এলে এখানে সিলিং দেওয়া হবে।

সংলাপে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নগর পরিকল্পনাবিদ মো. ফজলে রেজা সুমন। স্বাগত বক্তব্য দেন নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি মতিন আব্দুল্লাহ। সংলাপে আরও বক্তব্য দেন রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী (বাস্তবায়ন-চলতি দায়িত্ব) মো. নুরুল ইসলাম, প্রকৌশলী ও পরিকল্পনাবিদ মো. নুরুল্লাহ, স্থপতি সুজাউল ইসলাম খান প্রমুখ।

সংলাপ শেষে নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরামের পক্ষ থেকে ঢাকাই ম্যাগাজিনের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

এসএম/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বিলম্ব সিদ্ধান্তে দেশীয় অর্থনীতির ক্ষতি Sep 19, 2025
img
ড্রোন তদারকি করবে এআই, কিম জং উনের নতুন নির্দেশ Sep 19, 2025
img

ট্রাম্পের হুমকি

আমার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া টিভি নেটওয়ার্কের লাইসেন্স বাতিল হতে পারে Sep 19, 2025
img
স্বাধীনতা বিরোধিতাকারী একটি দল বিএনপির বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে : প্রিন্স Sep 19, 2025
img
ইন্দিরা রোডে অভিযানে গাজীপুর আ. লীগ নেতা গ্রেপ্তার Sep 19, 2025
img
জয় দিয়ে মৌসুম শুরু বার্সেলোনা-ম্যানচেস্টার সিটির Sep 19, 2025
img
জামালপুরে হাসপাতালে দুদকের অভিযান, খাবারের তালিকা দেখাতে ব্যর্থ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ Sep 19, 2025
img
ঢাকায় বৃষ্টির আভাস, তাপমাত্রা থাকবে অপরিবর্তিত Sep 19, 2025
img
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাজার থেকে ৬০০ কেজি সরকারি চাল জব্দ Sep 19, 2025
img
সাতক্ষীরায় পতাকা বৈঠকে ৮ বাংলাদেশিকে বিজিবির কাছে হস্তান্তর Sep 19, 2025
img
সৌদি-পাকিস্তান প্রতিরক্ষা চুক্তি যেভাবে বদলে দেবে ভূরাজনীতি Sep 19, 2025
img
৪৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি আজ, পরীক্ষায় বসবেন পৌনে ৪ লাখ Sep 19, 2025
img
ট্রাম্প-স্টারমার বৈঠকে ৫টি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা Sep 19, 2025
img
৩ মাসে বৈদেশিক ঋণ বাড়লো ৭ বিলিয়ন ডলার Sep 19, 2025
img
গাজায় নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো, এ নিয়ে ৬ বার Sep 19, 2025
img
বাংলাদেশি টাকায় আজকের বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হার Sep 19, 2025
img
রাজধানীতে ১২তম এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ার শুরু Sep 19, 2025
img
লক্ষ্মীপুরে ফার্মেসির আড়ালে মদের ব্যবসা, আটক ৩ Sep 19, 2025
img
প্রতিটি বিভাগীয় শহরে বিকেএসপি প্রতিষ্ঠা করা হবে : আমিনুল হক Sep 19, 2025
img
৯ দিনের সফরে পাকিস্তানে স্বরাষ্ট্রসচিব Sep 19, 2025