পাকিস্তানে তেলবাহী ট্যাংকারে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। দেশটির বেলুচিস্তানের নোশকি জেলায় পার্ক করা একটি তেলবাহী ট্যাংকারে আগুন লেগে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ৬০ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক আমজাদ সুমরো। তাদের মধ্যে ২০ জনের অবস্থা গুরুত্বর।
এ ঘটনায় তেলবাহী ট্যাংকারের চালক নিহত হয়েছেন।
জেলা প্রশাসক আমজাদ সুমরো জানান, ‘ট্যাংকারটি ট্রাক ডিপোতে পার্ক করা ছিল এবং ওয়েল্ডিংয়ের কাজ চলাকালে আগুন ধরে যায়। এরপর ফায়ার ব্রিগেড আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে তখনই ট্যাংকারটি বিস্ফোরিত হয়।’
ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ট্রাকটি মূল বাস ও ট্রাক স্ট্যান্ডে পার্ক করা ছিল।
চালক জ্বালানি ট্যাংকে লিকেজ দেখতে পান। লিকেজ বন্ধ করার ব্যর্থ চেষ্টার পর, চালক ট্রাকটিকে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে দূরে একটি খোলা জায়গায় নিয়ে যান। জ্বালানি ট্যাঙ্কে ঝালাই করার সময় আগুন লেগে যায়, যার ফলে একটি বড় বিস্ফোরণ ঘটে। বিশাল অগ্নিকাণ্ডের ফলে চালক ঘটনাস্থলেই দগ্ধ হয়ে মারা যান এবং ঘটনাস্থলে উপস্থিত ৬০ জনেরও বেশি লোক দগ্ধ হন।
এই ঘটনায় ফায়ার ব্রিগেড কর্মীরাও গুরুতর আহত হন। এ ছাড়া ঘটনাস্থলে উপস্থিত চার পুলিশ সদস্য এবং ট্যাংকারের আশেপাশে থাকা সাধারণ মানুষ ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত পুড়ে গেছে বলে ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
গুরুতর আহতদের হেলিকপ্টারের মাধ্যমে কুইটায় স্থানান্তরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক আরো জানান, ‘ট্যাংকারের জ্বালানির ট্যাংকে শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগে এবং বিস্ফোরণের ফলে আশেপাশে থাকা মানুষ আগুনে পুড়ে যায়।’
প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে, ২৮ জন আহতকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে এবং ১০ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
২৩ জনকে গুরুতর অবস্থায় কুইটার হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে এবং সেখানে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।
বেলুচিস্তান সরকারের মুখপাত্র শাহিদ রিন্দ বলেন, ‘আগুন এতটাই তীব্র ছিল যে ঘটনাস্থলে থাকা ফায়ার ব্রিগেডের গাড়িটিও আগুনে পুড়ে যায়।’ তিনি জানান, আহতদের সিভিল হাসপাতাল ও বোলান মেডিকেল কলেজে (বিএমসি) নেওয়া হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট হাসপাতালগুলোতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে।
বেলুচিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী মীর সরফরাজ বুগতি এই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং দ্রুত উদ্ধার কার্যক্রম চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আহতদের সর্বোচ্চ মানের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা হবে এবং প্রাদেশিক স্বাস্থ্য মন্ত্রী পুরো চিকিৎসা কার্যক্রম তদারকি করছেন।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, ‘নোশকির এই ঘটনায় পূর্ণাঙ্গ ও স্বচ্ছ তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা এড়াতে তাৎক্ষণিক ও ব্যাপক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছি।’
প্রসঙ্গত, পাকিস্তানে তেলবাহী ট্যাংকার বিস্ফোরণের ঘটনা নতুন নয়। গত বছর করাচির শিরিন জিন্নাহ কলোনিতে এক ট্যাংকারে ওয়েল্ডিংয়ের সময় গ্যাস জমে বিস্ফোরণ ঘটে, যাতে একজন নিহত ও পাঁচজন আহত হন। এ ছাড়া ২০১৭ সালে পাঞ্জাবে এক তেলবাহী ট্যাংকার উল্টে পড়ার পর আগুন লেগে ২১২ জনের প্রাণহানি ঘটে। সেসময় অনেকেই ট্যাংকার থেকে তেল সংগ্রহ করতে গিয়ে আগুনে পুড়ে মারা যান। এই ধরণের দুর্ঘটনা থেকে সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
আরআর/এসএন