‘চাকরি খেয়ে ফেলব’ বলে হুমকি আওয়ামী লীগ নেতার

‘চাকরি খেয়ে ফেলবো, চেনো আমি কে?’ কারাবন্দি কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজু (৪৯) কারারক্ষীকে এভাবে হুমকি প্রদর্শন করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

গত মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় দেখতে স্বজনদের সামনে ২ জন কারারক্ষীকে হুমকি দেন ওই আওয়ামী লীগ নেতা।

গ্রেফতার সাজু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কুড়িগ্রামে সংঘটিত সংঘর্ষের ঘটনা ও শিক্ষার্থী আশিক হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলার এজাহারভুক্ত আসামি।

গত মঙ্গলবার কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে দেখতে যান তার কয়েকজন স্বজন। কারা নিয়মানুযায়ী সাক্ষাৎ কক্ষে বেঁধে দেওয়া সময়ে কথা শেষ করার কথা থাকলেও তিনি দীর্ঘ সময় কথা বলতে চাইলে সাক্ষাৎ কক্ষে দায়িত্বরত নারী কারারক্ষী পপি রানী কারাবন্দি নেতার স্বজনদের সময়ের মধ্যে কথা শেষ করতে বলেন। এতে কারাগারের ভিতর থেকে ক্ষিপ্ত হন আওয়ামী লীগ নেতা সাজু।

তিনি হুংকার দিয়ে বলেন, ‘এই আপনি কে? ডিস্টার্ব করছেন কেন? চিনেন আমাকে? চাকুরি খেয়ে ফেলবো।’

এসময় সাক্ষাৎ কক্ষে সাজুর স্বজনরাও পপি রানীর সঙ্গে আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। পপি রানীকে নিরাপদ করতে সুমন নামের আরেকজন কারারক্ষী এগিয়ে এলে তাকেও পিছনে (পাছায়) লাথি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি প্রদর্শন করেন সাজু। উত্তেজনার এক পর্যায়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত হন প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি সাজুর স্বজনদের সাক্ষাৎ কক্ষ থেকে অনুরোধ করে বের করে দেন এবং চলে যেতে বলেন। তারাও চলে যাওয়ার সময়ে কারারক্ষীদের গালিগালাজ করেন।

এ ব্যাপারে কথা হলে পপি রানী জানান, ডিউটিরত অবস্থায় তিনি আমাকে প্রভাব দেখিয়ে চাকরি খাওয়ার হুমকি প্রদর্শন করে গালিগালাজ করেন। আমি জেলার স্যারের কাছে বিচার প্রার্থনা করছি।

কারারক্ষী সুমন জানান, আমরা তো ছোট পদে চাকরি করি। আমাদের নানান নির্যাতন সহ্য করতে হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আর কিছু বলতে পারব না।

প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক জানান, সাক্ষাৎ কক্ষের ভিতরে কারারক্ষীকে গালিগালাজ ও উত্তেজনা চলছিল। পরে আমি গিয়ে পরিবেশ শান্ত করি।

এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার এ জি মামুদ গণমাধ্যমকে বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। বন্দিরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলেও আমরা মানবিকতা প্রদর্শন করি। কেউ অতিরিক্ত কিছু করলে জেলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রংপুর শহরের সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের কাছ থেকে গ্রেফতার করেন পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।

মোস্তাফিজুর রহমান সাজু কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও ব্যবসায়ী। সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ কয়েকটি কার্যালয়ে তার শক্ত বিচরণ ছিল। এ ছাড়া তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমান উদ্দিন আহমেদ মঞ্জুর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত।

আরএম/টিএ 


Share this news on:

সর্বশেষ

img
নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে শ্রমিক-মালিকদের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক দরকার: শ্রম সচিব May 01, 2025
img
বান্ধবীদের সঙ্গে মিলে মুরগি চুরি করেছিলেন অপু বিশ্বাস! May 01, 2025
img
কী করলে সবচেয়ে বেশি খুশি হন সানি লিওন? May 01, 2025
img
আগামী ৫ দিন যেসব অঞ্চলে বৃষ্টি হতে পারে May 01, 2025
img
খাকি’র সাফল্যের পর নতুন হিন্দি ছবিতে জিত? May 01, 2025
img
মালিকরা যেন শ্রমিকদের সন্তানের মতো রাখে: শ্রম উপদেষ্টা May 01, 2025
নিহত ছাত্রলীগ নেতাকে বহিষ্কার করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় May 01, 2025
img
‘পাকিস্তান অস্ত্র জাদুঘরে রাখবে না’ May 01, 2025
পাল্টা জবাবে পা'কিস্তানের জন্য ভারতের আকাশসীমা বন্ধ ঘোষণা May 01, 2025
img
সরকার পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বিশৃঙ্খলা মেরামতে ব্যস্ত : টাফ May 01, 2025