তুরিন আফরোজের ডক্টরেট ডিগ্রি ভুয়া : আপিল বিভাগে তথ্য দাখিল

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজের ডক্টরেট ডিগ্রি ভুয়া। তিনি পিএইচডি সম্পন্ন করেননি। সিডনির ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলস থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

রোববার আপিল বিভাগে বাড়ি সংক্রান্ত মামলায় এ তথ্য দাখিল করা হয়েছে। আইনজীবী ব্যারিস্টার সাজ্জাদ হায়দার বিষয়টি জানিয়েছেন।

গত ১৩ মার্চ আপিল বিভাগে বাড়ি সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনীক আর হক বলেছেন, ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর থাকা অবস্থায় ক্ষমতার সব রকম অপব্যবহার করেছেন। তখন সে ছিল পরাক্রমশালী। এক মুহূর্তের মধ্যে তার মাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন। উত্তরার বাড়িতে সেই মায়ের থাকার নির্দেশনা প্রার্থনা করছি।

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আবেদনের শুনানিতে বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগে তিনি এসব কথা বলেন।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর উত্তরায় পাঁচতলা বাড়িতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) সাবেক প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজের মা শামসুন্নাহার বেগম এবং তুরিন আফরোজের ভাই শিশির আহমেদ শাহনেওয়াজ আহমেদের বসবাস করা নিয়ে বিচারিক আদালতের স্থিতাবস্থার আদেশ বাতিল করে দেন হাইকোর্ট। এর ফলে ওই বাড়িতে শামসুন্নাহার বেগম ও শাহনেওয়াজের বসবাসের ক্ষেত্রে আর কোনো আইনগত বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে বিচারপতি মো. সেলিমের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেয়।

আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, আইনজীবী বিএম ইলিয়াস কচি, ব্যারিস্টার মনজুর রাব্বী, ব্যারিস্টার আতিকুল হক। তুরিন আফরোজের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ সাইফুল করিম।

তিনি বলেন, রাজধানীর উত্তরার রেসিডেনন্সিয়াল মডেল টাউনের ১১ নম্বর সড়কের ৩ নম্বর সেক্টরের ১৫ নম্বর প্লটের পাঁচতলা বাড়িতে ২০০২ সাল থেকে বসবাস করে আসছিলেন শামসুন্নাহার বেগম এবং তার ছেলে শিশির আহমেদ শাহনেওয়াজ। তবে নিজের ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে শামসুন্নাহার বেগম ও শাহনেওয়াজকে ওই বাড়ি থেকে ২০১৭ সালে বের করে দেন তুরিন আফরোজ। পরে ওই বাড়ির ভোগ দখল ও মালিকানা দাবি করে শাহনেওয়াজ ও তুরিন আফরোজ ঢাকার যুগ্ম জেলা জজ আদালতে দুটি দেওয়ানী মামলা দায়ের করে। ২০১৮ সালের ১১ অক্টোবর দুই পক্ষের আবেদনের শুনানি নিয়ে ওই বাড়ি ভোগদখলের ক্ষেত্রে স্থিতাবস্থা জারি করে ঢাকার পঞ্চম যুগ্ম জেলা জজ আদালত। এরপর যুগ্ম জেলা জজ আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে জেলা জজ আদালতে আবেদন করে শাহনেওয়াজ। পরে ২০২৩ সালের ১৯ জানুয়ারি যুগ্ম জেলা জজ আদালতের আদেশ বহাল রাখেন জেলা জজ আদালত। এরপর ২০২৩ সালের মার্চে জেলা জেজ আদালতের স্থিতাবস্থার আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে সিভিল রিভিশন দায়ের করে শাহনেওয়াজ।

২০২৩ সালের ২ এপ্রিল বিচারপতি মো. জাকির হোসেনের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ উত্তরায় ওই বাড়ি ভোগদখলের ক্ষেত্রে স্থিতাবস্থার আদেশ কেন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হবে, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। পরবর্তী সময়ে আদালত পরিবর্তিত হয়ে মামলাটি বিচারপতি মো. সেলিমের একক হাইকোর্ট বেঞ্চে আসে। ওই রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ১৯ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি মো. সেলিমের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল যথাযথ (অ্যাবসুলেট) ঘোষণা করে স্থিতাবস্থা বাতিল করে রায় দেন। এর ফলে ওই বাড়িতে শাহনেওয়াজ ও তার মা শামসুন্নাহার বেগমের বসবাসের ক্ষেত্রে আইনগত কোনো বাধা নেই।

এখন বাড়ির ভোগ দখল ও মালিকানা দাবি করে দায়ের করা দুটি মামলায় বিচারিক আদালতে স্বাভাবিক নিয়মে চলবে বলে জানান আইনজীবী আতিকুল হক।

উল্লেখ্য, বিচারিক আদালতের মামলার আরজিতে তুরিন আফরোজ দাবি করেছেন, তুরিনের মা শামসুন্নাহার ১৯৯১ সালে ক্রয়সূত্রে উত্তরার সম্পত্তির মালিক হন। পরের বছর ১৯৯২ সালে শামসুন্নাহার তার স্বামী তসলিম উদ্দিনকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি নিযুক্ত করেন। পরে ১৯৯৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর তসলিম উদ্দিন মেয়ে তুরিন আফরোজকে হেবা (দানপত্র) করেন। তবে শামসুন্নাহার ও তার ছেলে শাহনেওয়াজ আদালতে লিখিত জবাব দিয়ে বলেছেন, তসলিম উদ্দিন কখনো তার মেয়ে তুরিন আফরোজকে উত্তরার সম্পত্তি দান করেননি। বরং শামসুন্নাহার তার ছেলে শাহনেওয়াজকে উত্তরার সম্পত্তি ১৯৯৭ সালে হেবা করে দেন। পরে ওই জমি শাহনেওয়াজের নামে নামজারি করে ১৯৯৯ সালে হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের কাছ থেকে ২৫ লাখ ঋণ নেওয়া হয় এবং রাজউকের অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী নির্মাণ করা বাড়িতে তারা ২০০২ সাল থেকে বসবাস করে আসছিলেন।

এসএন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
রাশমিকা-শ্রীলীলাকে ছাড়িয়ে দক্ষিণের সবচেয়ে ব্যস্ত নায়িকা এখন মামিতা Jul 14, 2025
img
কাজলের চোখে ডিডিএলজে: পাগলামি, প্রেম আর ইতিহাস Jul 14, 2025
img
টোলপ্লাজায় ৬ জনের প্রাণহানিতে দেড় কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে রুল জারি Jul 14, 2025
রাজনীতি ক্রিকেটারদের জন্য নয়: জয়াসুরিয়া Jul 14, 2025
অন্যের স্ত্রীকে বিয়ে! আত্মপক্ষ শুনানিতে নাসির-তামিমার জবাব Jul 14, 2025
img
বক্স অফিসে ঝিমিয়ে পড়েছে শানায়ার প্রথম সিনেমা Jul 14, 2025
img
প্রথমবারের মতো নিলামে ১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক Jul 14, 2025
img
পুরনো বিশ্বাস আর আতঙ্কে তৈরি এক অন্যরকম হরর জগত Jul 14, 2025
ক্যান্সার থেকে বাঁচাবে ৩ পানীয়, দাবি বিশেষজ্ঞদের Jul 14, 2025
আ.লীগের নিবন্ধন স্থগিত হলেও থাকবে নৌকা: ইসি Jul 14, 2025
নয়াপল্টনে ছাত্রদলের কর্মসূচিতে যে দৃশ্য দেখা গেলো Jul 14, 2025
img
সাকিবকে জাতীয় দলে ফেরানোর বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি : বিসিবি সভাপতি Jul 14, 2025
img
চার গুণ বেড়েছে অনলাইন বিদ্বেষমূলক বার্তা, টেনিস তারকারা মানসিক চাপে Jul 14, 2025
img
১০ মাসে অপরাধের পরিসংখ্যান প্রকাশ করল সরকার Jul 14, 2025
img
স্বাস্থ্য কর্মকর্তার অপসারণ চেয়ে বরিশালে মহাসড়ক অবরোধ Jul 14, 2025
img
প্রতিরোধের মুখে ফ্যাসিবাদী সরকার পালাতে বাধ্য হয় : আলী রীয়াজ Jul 14, 2025
img
আবু সাঈদ-মুগ্ধদের জাতীয় বীর ঘোষণা করতে হাইকোর্টের রুল Jul 14, 2025
img
শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় কেবিনে নেওয়া হলো ফরিদা পারভীনকে Jul 14, 2025
img
১৫ বগি ফেলে ইঞ্জিন নিয়ে চলে গেল ট্রেন Jul 14, 2025
যে চারটা গুণ থাকলে আপনি ভাগ্যবান | ইসলামিক টিপস Jul 14, 2025