সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হত্যা ও মিথ্যা মামলায় সরকার বিব্রত : মাহফুজ

তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম বলেছেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হত্যা ও মিথ্যা মামলার ঘটনায় সরকার বর্তমানে এক বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন।

রোববার (৪ মে) বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস ২০২৫ উপলক্ষে ধানমন্ডিতে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) আয়োজিত ‘সাহসী নতুন বাংলাদেশ : গণমাধ্যমের স্বাধীনতার রোডম্যাপ সংস্কার’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।

সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা প্রসঙ্গে মাহফুজ বলেন, বাংলাদেশের মানুষের ক্ষোভ আছে। এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। গত ১৫ বছর যে ক্ষোভ আছে, সেটা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ হবে সেটা আমরা এবং পুরো বাংলাদেশের পলিটিক্যাল সিস্টেম ঠিক করতে ব্যর্থ হয়েছি। যার বিরুদ্ধে সঠিক অভিযোগ আছে, সেই অভিযোগে মামলা হয়নি। হয়েছে হত্যা মামলা। এটা নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে আছি। আমরাও বারবার বলার চেষ্টা করছি। আইন মন্ত্রণালয় থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে এটা একটা জায়গায় নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। মামলা হওয়া ও রিগ্যাল প্রসিডিং চলা দুটো ভিন্ন বিষয়। মামলা যে কেউ করতে পারে। সরকার কী ব্যবস্থা নিচ্ছে। সরকার অন্যায়ভাবে কাউকে গ্রেপ্তার করছে কি-না, সেখানে কোনো সীমাবদ্ধতা আছে কি-না সেটা নিয়ে আলাপ আলোচনা করতে পারেন, যোগ করেন তিনি।

মামলা বাণিজ্যকে পুরাতন সংস্কৃতি উল্লেখ করে মো. মাহফুজ আলম বলেন, এখন ক্ষমতার ভর কেন্দ্র অনেকগুলো। অনেক ধরনের রাজনৈতিক দল এখানে ক্ষমতার ভরকেন্দ্রে আছে। শুধু একমাত্র সরকারে নেই। সরকারকে সব ধরনের ভরকেন্দ্র সামলে সরকার চালাতে হচ্ছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল মামলা দেয়। স্থানীয়ভাবে মামলা বাণিজ্য বাংলাদেশে নতুন কোনো সংস্কৃতি না। এটা বন্ধ করতে হলে সংস্কারের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। সেটা না হলে ৬০-৭০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হবে। অজানা লোকের বিরুদ্ধে মামলা হবে। গায়েবি মামলা হয়ে ধরপাকড় চলতে থাকবে। কেবল সাংবাদিক নয়। আমি আপনি এর শিকার হতে পারি। আমরা এর বিরুদ্ধে।

সরকার লিখতে বাধা দিচ্ছে না জানিয়ে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, মানুষ সব কিছু লিখতে পারছে। সম্প্রতি নেত্র নিউজে সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের মেয়ে একটি লেখা লিখেছেন। যেখানে সাবেক সংস্কৃতি মন্ত্রীকে নির্দেশ দাবি করা হয়েছে। সত্য হচ্ছে আসাদুজ্জামান চারজন মানুষ হত্যা ও গুমের সঙ্গে জড়িত। ২০১৩ বা ২০১৪ সালে উনার গাড়িতে হামলা করেছে, ৫ জনকে মেরে ফেলছে আওয়ামী লীগের। ওইখানে ৫ জন লোককে গুম ও খুন করেছে। নেত্র নিউজে লেখা ছাপাতে কোনো বাধা দেওয়া হয়নি, লেখা ছাপাতে বাধা দিচ্ছি না।

তিনি আরও বলেন, আমরা কিছুই করতে চাই না। সংবাদমাধ্যম যা ইচ্ছা লেখার অধিকার রাখে। সংবাদমাধ্যমকে অবশ্যই প্রশ্ন করতে হবে। যত বেশি সংবাদ মাধ্যম প্রশ্ন করে রাষ্ট্রের ভেতর দায়িত্বশীল যারা আছে, তারা আরও বেশি দায়িত্বশীল আচরণ করতে বাধ্য। সংবাদ মাধ্যমকে প্রশ্ন করতে হবে, প্রশ্ন তুলতে হবে। কিন্তু এটার মেট্রিক্স কি, এটা কীভাবে কাজ করবে। জবাবদিহি করাটাই কি মুখ্য নাকি আসলে আরও ১০টা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে। এটা ভাবা দরকার। কিন্তু প্রশ্নটা করা দরকার, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকেও প্রশ্ন করতে হবে। আমাদের সরকার প্রশ্ন নিতে রাজি আছে।

স্বৈরাচার সরকারের সময়ের গণমাধ্যমগুলোর কার্যকলাপ নিয়ে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং দরকার বলে মনে করেন উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম। তিনি জানান, গণমাধ্যমগুলোর বিগত ১৫ বছরের কার্যকলাপ নিয়ে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং দরকার। রাজনীতিকরণ করার কারণে হাউসগুলোর সাংবাদিকরাই বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

মাহফুজ বলেন, বাংলাদেশের মিডিয়ায় জবাবদিহিতার প্রয়োজন আছে। সাংবাদিকতার জন্য করা সুরক্ষা আইন প্রণয়ণের কাজ চলছে। বেতার, বিটিভি ও বাসস নিয়ে জাতীয় সম্প্রচার সংস্থা করার পক্ষে আমি, সরকারি বিজ্ঞাপন মূল্য নির্ধারণের পক্ষে আমি। ডিএফপির সঙ্গে টাস্ক ফোর্স গঠন করেছি পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের মূল্য ও লাইসেন্স পুনর্নির্ধারণ করার জন্য। অধিকাংশ হাউসের এই পলিসি নেই যে রাষ্ট্রকে ট্যাক্স দেবে।

অনুষ্ঠানে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন গণমাধ্যম সংস্কারের প্রধান কামাল আহমেদ।

তিনি বলেন, অনেকে বলছেন সংবাদমাধ্যমকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তরের যে প্রস্তাব কমিশন করেছে, তা অবাস্তব। কারণ হিসেবে তারা বলেছেন, বেশিরভাগ সংবাদমাধ্যম লাভ করতে পারছে না বা রুগ্ণ প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এসব গণমাধ্যম কোম্পানির মধ্যে যাদের হিসাব রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানির দপ্তর থেকে পাওয়া গেছে, তার আর্থিক বিবরণী বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রায় দেড় ডজনের বেশি সংবাদমাধ্যম লাভজনক, যা প্রমাণ করে, এ ধরনের রূপান্তর মোটেও অযৌক্তিক নয় এবং তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব।

আরএ/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
এনসিপির সমাবেশে আওয়ামী লীগের হামলায় উদ্বেগ জানিয়ে ফখরুলের বিবৃতি Jul 16, 2025
img
আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে কেউ আটকাতে পারবে না : আব্দুস সালাম Jul 16, 2025
img
রাজবাড়ীতে এনসিপির পদযাত্রা আগামীকাল Jul 16, 2025
img
হাসনাত আব্দুল্লাহকে নিরাপদে সরিয়ে নিলো পুলিশ Jul 16, 2025
img
যদি বেঁচে ফিরি, মুজিববাদের কবর রচনা করেই ফিরব: সারজিস Jul 16, 2025
img
সমাবেশ শেষে ফেরার পথে এনসিপির গাড়িবহরে আবারও হামলা Jul 16, 2025
img
ঢাকার নাগরিক সেবার মান যাচাইয়ে দক্ষিণ সিটির বিশেষ কমিটি Jul 16, 2025
img
বহিষ্কৃত যুবদল নেতাকে পুলিশের হাতে তুলে দিলেন বিএনপি নেতা Jul 16, 2025
img
সারাদেশের মানুষকে গোপালগঞ্জে যাওয়ার আহ্বান সারজিস আলমের Jul 16, 2025
img
বাবার সঙ্গে অমিল ইব্রাহিমের! কোন বিষয়ে সাইফের তুলনায় ছেলেকে এগিয়ে রাখলেন কাজল? Jul 16, 2025
img
এনসিপির গাড়িবহরে হামলা, রণক্ষেত্রে পরিণত গোপালগঞ্জ Jul 16, 2025
img
আ. লীগের হামলা, পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে এনসিপি নেতারা Jul 16, 2025
img
গোপালগঞ্জ যেন মুজিববাদীদের আশ্রয়কেন্দ্র না হয়ে ওঠে : নাহিদ ইসলাম Jul 16, 2025
img
নির্বাচন পিছিয়ে দিতে ষড়যন্ত্র চলছে : ফারুক Jul 16, 2025
img
হাসনাতের স্লোগানে মুখর গোপালগঞ্জ Jul 16, 2025
img
হঠাৎ সাংবাদিককে ঘুম থেকে তুলে সাক্ষাৎকার দিলেন ট্রাম্প Jul 16, 2025
img
লর্ডস টেস্ট জিতেও পয়েন্ট কাটা গেল ইংল্যান্ডের Jul 16, 2025
img
ইসির প্রতীকে যুক্ত হলো দাঁড়িপাল্লা Jul 16, 2025
img
তোমাদের সঙ্গে বেইমানি করা সম্ভব নয় : জামায়াত আমির Jul 16, 2025
img
কিউবায় ‘ভিক্ষুক নেই’ মন্তব্যের পর শ্রমমন্ত্রীর পদত্যাগ Jul 16, 2025