শেখ মুজিব তার পরিবারের হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়েছে: মাহফুজ আলম

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম বলেছেন, ফ্যাসিজম মোকাবেলায় আমাদের প্রথম দায়িত্ব হলো অতীতের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতাগুলো স্মৃতিতে জাগ্রত রাখা। তিনি জানান, এই উদ্দেশ্যেই মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে শর্ট ফিল্ম, ডকুমেন্টারি এবং অন্যান্য মাধ্যমের মাধ্যমে সচেতনতা তৈরির কাজ চলছে।

এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, ফ্যাসিজমের বিরোধিতা শুধু রাজনৈতিক বিষয় নয়, এটি ব্যক্তি ও সামষ্টিকভাবে আমাদের স্মৃতির অংশ।

তিনি জানান, একজন মানুষের যেমন ব্যক্তি জীবনের অভিজ্ঞতা থাকে, তেমনি একটি জনগোষ্ঠীরও সম্মিলিত স্মৃতি থাকে, যা জাতি হিসেবে আমাদের ভবিষ্যতের পথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

মাহফুজ আলম আরও বলেন, ইতিহাসে দেখা গেছে, অতীতে যে ভয়ঙ্কর অধ্যায়গুলো ছিল, তা যদি আমরা আলোচনার মধ্যেই না রাখি, তাহলে এক সময় এগুলো আমাদের কাছে স্বাভাবিক মনে হতে শুরু করবে। এ প্রসঙ্গে তিনি সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলেন, ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সালের শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনকাল এবং ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত শেখ হাসিনার শাসনকাল বাংলাদেশের অন্য কোনো সময়ের সঙ্গে তুলনীয় নয়।

তিনি বলেন, “ফ্যাসিজম মানে শুধু একজন স্বৈরাচার নয়, বরং পুরো জনগোষ্ঠীকে আদর্শিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা। শেখ হাসিনার শাসনকালে যেমন বিরোধী দলের ওপর পাড়া-মহল্লা পর্যায় থেকে শুরু করে সাংস্কৃতিক ও সুশীল শ্রেণির অংশগ্রহণে সহিংসতা চালানো হয়েছে, সেটাই প্রকৃত ফ্যাসিজম।”

তিনি দাবি করেন, এই ধরনের রাজনৈতিক সংস্কৃতি এরশাদের আমলেও দেখা যায়নি, কারণ তার পেছনে আদর্শিক জনগণের সমর্থন ছিল না। “একজন গুণ্ডা থেকে শুরু করে একজন সুশীল ব্যক্তিও যদি একটি নির্দিষ্ট আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রকে দমন-পীড়নের জন্য ব্যবহার করেন, সেটিই ফ্যাসিজম,” বলেন মাহফুজ আলম।

তিনি আরও বলেন, “শেখ মুজিব তাজউদ্দিন আহমেদকে সরিয়ে দিয়ে পরিবারকেই দলের নিয়ন্ত্রণ দিয়েছেন। তার মেয়ে শেখ হাসিনাও সেই পথ অনুসরণ করেছেন। একটি পরিবার কিভাবে একটি দল এবং একটি রাষ্ট্রকে ধ্বংস করতে পারে, বাংলাদেশে তার একটি অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি হয়েছে।”

আওয়ামী লীগের বর্তমান অবস্থা প্রসঙ্গে মাহফুজ আলম বলেন, “আজকে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী পলাতক। তাদের নিজেদের প্রশ্ন করা উচিত— আমি পলাতক কেন? এর দায় শেখ হাসিনা এবং তার পরিবারের একচ্ছত্র রাজনৈতিক দখল ও দুর্নীতির নেটওয়ার্কের ওপরই বর্তায়।”

তিনি দাবি করেন, ৫ আগস্টের আগেই শেখ পরিবারের অধিকাংশ সদস্য দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন এবং শেখ হাসিনা ছিলেন সর্বশেষ ব্যক্তি যিনি দেশ ত্যাগ করেন।

মাহফুজ আলম বলেন, “একটি পরিবার প্রথমে ১৯৭৪–৭৫ সালে বাকশাল গঠন করে দল ও রাষ্ট্রকে ধ্বংস করেছিল, আরেকবার ধ্বংস করল ২০০৯–২০২৪ সময়ে। এই দুটি সময়কাল বাংলাদেশের ইতিহাসে একেবারেই অনন্য ঘটনা।”

এফপি

Share this news on:

সর্বশেষ

img
পুলিশের পোশাকে জামায়াত প্রার্থীর পথসভায় বক্তব্য দেওয়ায় এএসআই বরখাস্ত Dec 15, 2025
img
ডিসেম্বরের ১৩ দিনেও কোনো রেমিট্যান্স আসেনি দেশের ১০ ব্যাংকে Dec 15, 2025
img
কলম্বিয়ায় বাস দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল অন্তত ১৭ জনের, আহত ২০ Dec 15, 2025
img
স্বর্ণ কিনবেন? জেনে নিন আজকের বাজারদর Dec 15, 2025
img
৩ দাবিতে আজ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা ডাকসুর Dec 15, 2025
img
রাজধানী ঢাকায় কমবে দিনের তাপমাত্রা Dec 15, 2025
img
হিলি স্থলবন্দর দিয়ে বেড়েছে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি, কমেছে দাম Dec 15, 2025
img
অস্ট্রেলিয়ায় বন্দুক হামলার ঘটনায় প্রাণহানি বেড়ে ১৬ Dec 15, 2025
img

চানখারপুলে ছয় হত্যা

হাবিবুর রহমানসহ ৮ আসামির বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু আজ Dec 15, 2025
img
ওসমান হাদির ঘটনায় মেহেরপুর সীমান্তে বিজিবির নিরাপত্তা জোরদার Dec 15, 2025
img
এমবাপে ও রদ্রিগোর গোলে আলাভেসের বিপক্ষে স্বস্তির জয় রিয়াল মাদ্রিদের Dec 15, 2025
img
এলাকার উন্নয়নে ঐক্যের আহ্বান হাবিবুর রশিদ হাবিবের Dec 15, 2025
img
শব্দদূষণকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে হবে: রিজওয়ানা হাসান Dec 15, 2025
img

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ

হলান্ডের জোড়া গোলে ক্রিস্টাল প্যালেসকে বড় ব্যবধানেই হারাল ম্যানচেস্টার সিটি Dec 15, 2025
img
আজ ওসমান হাদিকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে নেওয়া হবে সিঙ্গাপুর Dec 15, 2025
img
১৫ ডিসেম্বর: ইতিহাসের এই দিনে আলোচিত যত ঘটনা Dec 15, 2025
img

বুন্ডেসলিগা

টেবিলের তলানির দলের বিপক্ষে কোনোমতে হার এড়াল বায়ার্ন মিউনিখ Dec 15, 2025
img
ভোটাধিকার প্রয়োগ করে প্রবাসীদের দেশ গড়ায় অবদান রাখার আহ্বান Dec 15, 2025
img
সিডনির ঘটনায় প্রশংসায় ভাসছেন মুসলিম ফল ব্যবসায়ী Dec 15, 2025
img
বৃহস্পতিবারের মধ্যে চূড়ান্ত হচ্ছে বিএনপির শরিকদের আসন Dec 15, 2025