স্বপ্নের দেশ ইতালি যাওয়ার পথে লিবিয়ায় ট্রলারডুবিতে নিখোঁজ হন মাদারীপুর শিবচরের যুবক রিফাত তালুকদার। গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার সময় ভূমধ্যসাগরে ডুবে যায় ট্রলার। এ ঘটনার প্রায় ৫ মাস পর রিফাতের মরদেহ ফিরল বাংলাদেশে। নিহত রিফাত মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার দ্বিতীয়খণ্ড ইউনিয়নের তালুকদার কান্দি গ্রামের হুমায়ুন তালুকদার ও শিল্পী বেগম দম্পতির একমাত্র সন্তান।
জানা যায়, ইতালি যাওয়ার জন্য ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে দেশ ছাড়েন তিনি। লিবিয়া গিয়ে দুই মাস অপেক্ষার পর ডিসেম্বর মাসের ১৮ তারিখ সাগর পথে রওনা হন রিফাত। তবে ভাগ্য সহায়ক হয়নি তার। ট্রলারের ইঞ্জিন বিস্ফোরণে ডুবে যায় ট্রলার।
গুরুতর আহত হয় রিফাত। লিবিয়ার কোস্ট গার্ড উদ্ধার করে লিবিয়ার একটি হাসপাতালে ভর্তি করেন। তবে মারা যায় রিফাত। প্রায় ৭ মাস পর শনিবার (১০ মে) বিকেলে রিফাতের মরদেহ ফিরেছে নিজ বাড়িতে।
রিফাতের পারিবারিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। শনিবার বিকেলে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় তাকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইতালি যাওয়ার উদ্দেশ্যে গত বছরের অক্টোবর মাসের দিকে দালালের মাধ্যমে লিবিয়ায় পৌঁছায় রিফাত তালুকদার। সেখানে দুই মাসের মতো অপেক্ষার পর ডিসেম্বর মাসের ১৮ তারিখে রিফাতসহ অভিবাসন প্রত্যাশীদের একটি ট্রলার ইতালির উদ্দেশ্যে রওনা দিলে ট্রলারের ইঞ্জিন বিস্ফোরণ হয়ে ডুবে যায়। এসময় মারা যায় অনেকে।আহতও হয়।
গুরুতর আহতাবস্থায় লিবিয়ার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন রিফাত। এদিকে ট্রলারে উঠার পর রিফাতের সঙ্গে পরিবারের সকল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। নানাভাবে খোঁজ নিয়েও পরিবারের লোকজন রিফাতের কোন খোঁজ করতে পারেনি। বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে এই আশার মধ্য দিয়ে চলতি বছর ২৫ রমজানে রিফাতের খোঁজ পায় তার পরিবার। তারা জানতে পারেন তার মরদেহ লিবিয়ার একটি হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। এর আগে চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি রিফাতের সন্ধানের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন রিফাতের পরিবার।
প্রতিবেশী কামরুল ইসলাম বলেন, অবশেষে রিফাতের লাশ বাড়িতে এসে পৌঁছেছে। ইতালি যাওয়ার পর দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়। লাশ লিবিয়ার একটি হাসপাতালের মর্গে ছিল। লিবিয়ায় থাকা এলাকার প্রতিবেশীরা খোঁজ করলে রিফাতের সন্ধান পায়। পরে পরিবারকে জানালে রিফাতের পরিবার মারা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়।
নিহত রিফাতের মামা হাবিব মুন্সী বলেন, অনেক দিন রিফাতের কোনো খোঁজ ছিল না। গত রমজানে আমরা জানতে পারি, ওর লাশ লিবিয়ায় আছে। এরপর লাশ আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়। শনিবার বিকেলে লাশ আসে বাড়িতে।
তিনি আরও বলেন, আমার একটাই ভাগিনা ছিল। ওরে কোন ভাবেই বিদেশ যেতে দিতে রাজি ছিল না ওর বাবা-মা। এক রকম পাগলামি করে ও লিবিয়ায় যায়। বাড়িতে সম্পত্তির অভাব নাই। তার পরও লিবিয়া হয়ে ইতালি যেতে পাগল হয়ে ওঠে।
নিহতের বাবা হুমায়ুন তালুকদার বলেন, ‘গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর ওর সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তখন সাগরে ট্রলারডুবির কথা শুনি। রিফাতের কোনো খোঁজ পাই না। আশায় ছিলাম, হয়তো বেঁচে আছে! এরপর গত রমজানে শুনি লাশ মর্গে।’
শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পারভীন খানম বলেন, ‘দুঃখজনক ঘটনা। আমি খোঁজখবর নিচ্ছি ওই পরিবারের।’
এমআর/টিএ