পলিথিনের বিকল্প পাট ও কাপড়ের ব্যাগ সুলভ মূল্যে ক্রেতাদের দেওয়ার চেষ্টা করব : রিজওয়ানা হাসান

পানি সম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, পলিথিনের ব্যবহার কমাতে পাট ও কাপড়ের ব্যাগ সহজলভ্য দামে সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া হবে, যেন মানুষ ধীরে ধীরে বিকল্প ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়।

মঙ্গলবার (১৩ মে) ঢাকায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের হলরুমে ‘প্লিজ প্রজেক্টের’ ‘ন্যাশনাল নলেজ শেয়ারিং ওয়ার্কশপ’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমরা সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নিয়েছি যে আমরা পাটের ব্যাগ, কাপড়ের ব্যাগ যেগুলো আমরা যুব সম্প্রদায়কে দিয়ে বা পাটকল যারা করেন, তাদেরকে বলে দেব যেন আমাদেরকে ওগুলো বানিয়ে দেন সুলভ মূল্যে ক্রেতাদের দিতে পারি।

উপদেষ্টা বলেন, অনেক বড় বড় শপিং মল একটা যুক্তি দাঁড় করানোর চেষ্টা করে। যুক্তিটা ভ্রান্ত এবং যুক্তিটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। সেটা হচ্ছে- তাদের ক্রেতারা ৪০ টাকা দিয়ে একটা পাটের ব্যাগ কিনতে চায় না। কিন্তু এ ক্রেতারাই যখন বিদেশে যায়, তখন কিন্তু তারা কোনো দিনও একটা ব্যাগ সস্তা পায় না, ফ্রি পায় না। তাদেরকে কিন্তু ৩-৪ ডলার দিয়ে কিনতে হয়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ কিন্তু প্লাস্টিক বর্জ্য অব্যবস্থাপনার দিক দিয়ে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে এক নাম্বারে। সকল বর্জ্য ব্যবস্থাপনাতেই আমাদের অবস্থা করুণ। সেটা আমাদেরকে উন্নত করতে হবে এবং সরকার সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।

সরকার একই সঙ্গে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক বাজার থেকে ধীরে ধীরে তুলে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করছে।

পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, পলিথিন এবং সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক যদি আমরা বন্ধ করতে পারি, তাহলে জাতিগতভাবে যে আমরা দায়িত্বশীল- এটা আমরা প্রতিষ্ঠিত করতে পারব। যদি আফ্রিকার দেশ তানজানিয়া পারে, যদি আফ্রিকার দেশ রুয়ান্ডা পারে, তাহলে আমরা কেন পারব না, শুধু এ পলিথিন শপিং ব্যাগ না আমরা নিষেধাজ্ঞার প্রক্রিয়াটা অন্য সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক যেগুলো খুব প্রয়োজনীয় না, যেগুলোর বিকল্প খুব রেডিলি অ্যাভেইলেবল আছে বাজারে, সেগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছি এবং জুন মাসের পর বাজারে আনার ওপরে একটা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।

তিনি আরো বলেন, যদি আমরা উন্নত বিশ্বের দিকে তাকাই, তাহলে তাদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় তেমন বড় সমস্যা নেই। ইউরোপের কি বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় খুব সমস্যা আছে? তারপরেও ইউরোপ কিন্তু কতগুলো সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ব্যান করে দিয়েছে।

তো আমরা যে বলি আগে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত করেন, তারপরে ব্যান করেন, এটা কিন্তু ঠিক না। কারণ ইউরোপের তো বৈধ ব্যবস্থাপনা উন্নত তারপরেও তারা ব্যান করেছে কারণ এগুলোকে সাইকেল করা আসলে এত সহজ কাজ না। আফ্রিকান দেশগুলোও ব্যান করেছে কারণ তারা জানে অন্য বর্জ্য যাই হোক পচবে, গলবে, নিঃশেষ হবে, কিন্তু প্লাস্টিক ও পলিথিনে সেটা হওয়ার কোনো উপায় নেই।

উপদেষ্টা আরো বলেন, আপনাদের সকলের প্রতি আহ্বান থাকবে সরকারি উদ্যোগগুলোতে নিজ নিজ জায়গা থেকে অংশ নেন। আমাদের দৈনন্দিন অভ্যাসকে আমাদের একটু বদলাতে হবে। যখন মানুষ নিজে থেকে বুঝতে শিখবে, একইভাবে সরকার ও আইন প্রয়োগ করতে এগোবে, তখন কিন্তু পরিবর্তনটা আসবে। কাজেই সুপারশপগুলোতে পলিথিনের ব্যাগ না থাকা, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে অভ্যাস পরিবর্তন হওয়া এগুলোকে আমরা অবশ্যই সফলতা হিসেবে দেখব।

উপদেষ্টা বাংলাদেশ ফরেস্ট রিসার্চ ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনকে (বিফিআইডিসি) একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের বিকল্প পণ্য উৎপাদনে যেতে, রাবার থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে বাঁশ ও বেতের পণ্য তৈরির দিকে অগ্রসর হওয়ার জন্য নির্দেশনা দেন।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বাংলাদেশের নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস, ইউএনওপিএস বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার সুধীর মুরলীধরন, পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. ফাহমিদা খানম প্রমুখ।

আরএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
হিলি স্থলবন্দর দিয়ে বেড়েছে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি, কমেছে দাম Dec 15, 2025
img
অস্ট্রেলিয়ায় বন্দুক হামলার ঘটনায় প্রাণহানি বেড়ে ১৬ Dec 15, 2025
img

চানখারপুলে ছয় হত্যা

হাবিবুর রহমানসহ ৮ আসামির বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু আজ Dec 15, 2025
img
ওসমান হাদির ঘটনায় মেহেরপুর সীমান্তে বিজিবির নিরাপত্তা জোরদার Dec 15, 2025
img
এমবাপে ও রদ্রিগোর গোলে আলাভেসের বিপক্ষে স্বস্তির জয় রিয়াল মাদ্রিদের Dec 15, 2025
img
এলাকার উন্নয়নে ঐক্যের আহ্বান হাবিবুর রশিদ হাবিবের Dec 15, 2025
img
শব্দদূষণকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে হবে: রিজওয়ানা হাসান Dec 15, 2025
img

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ

হলান্ডের জোড়া গোলে ক্রিস্টাল প্যালেসকে বড় ব্যবধানেই হারাল ম্যানচেস্টার সিটি Dec 15, 2025
img
আজ ওসমান হাদিকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে নেওয়া হবে সিঙ্গাপুর Dec 15, 2025
img
১৫ ডিসেম্বর: ইতিহাসের এই দিনে আলোচিত যত ঘটনা Dec 15, 2025
img

বুন্ডেসলিগা

টেবিলের তলানির দলের বিপক্ষে কোনোমতে হার এড়াল বায়ার্ন মিউনিখ Dec 15, 2025
img
ভোটাধিকার প্রয়োগ করে প্রবাসীদের দেশ গড়ায় অবদান রাখার আহ্বান Dec 15, 2025
img
সিডনির ঘটনায় প্রশংসায় ভাসছেন মুসলিম ফল ব্যবসায়ী Dec 15, 2025
img
বৃহস্পতিবারের মধ্যে চূড়ান্ত হচ্ছে বিএনপির শরিকদের আসন Dec 15, 2025
img
ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় মামলা Dec 15, 2025
img
তুরস্কে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত Dec 15, 2025
img
অস্ত্রসহ সাবেক রেলমন্ত্রীর সহচর গ্রেপ্তার Dec 15, 2025
img
প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভে উত্তাল হাঙ্গেরি Dec 15, 2025
রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ নিয়ে ন্যাটোপ্রধানের মন্তব্য দায়িত্বজ্ঞানহীন: মস্কো Dec 15, 2025
ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে যা বললেন ইনকিলাব মঞ্চের জাবের Dec 15, 2025