রাজবাড়ীর ‘রাজা’ গরুর দাম ৮ লাখ

আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজবাড়ীতে কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে প্রায় ২০ মণ ওজনের একটি বিশাল শাহীওয়াল জাতের ষাঁড় গরু। যত্নসহকারে লালন-পালন করা এই গরুর রঙ লাল হওয়ায় মালিক সুবাস এর নাম রেখেছেন রাজবাড়ীর 'রাজা'। গরুটির মূল্য হিসেবে তিনি ৮ লাখ টাকা দাবি করছেন।

ছোট্ট একটি গোয়াল ঘরে রাখা হয়েছে শান্তশিষ্ট স্বভাবের রাজবাড়ীর রাজাকে। গোয়ালঘরটি চারপাশে আটকানো হওয়ায় ভেতরে তেমন আলো নেই।সারাদিন গোয়াল ঘরের মধ্যেই দিনকাটে রাজার। ২৪ ঘণ্টায় রাজার জন্য চালিয়ে রাখতে হয় ফ্যান ও লাইট। রাজার খাদ্য তালিকায় রয়েছে শুকনো খড়। তাছাড়া ভুট্টা, খেসারি ও জবের সংমিশ্রণে তৈরি ভূসী খাওয়ানো হয় রাজাকে। খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন তার কাঁচা ঘাসও রয়েছে। এই গরমের মধ্যে রাজাকে শ্যাম্পু ও সাবান দিয়ে গোসল করানো হয় দিনে দুই থেকে তিনবার।

জানা গেছে, রাজবাড়ী সদর উপজেলার বানিবহ ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের লক্ষ্মনারায়ণপুর গ্রামের বাসিন্দা সুবাস শিকদার (৬১) প্রায় ৪ বছর ধরে নিজ বাড়িতেই লালন-পালন করছে রাজবাড়ীর রাজাকে। ৬ দাঁতের হালকা বাদামি রংয়ের রাজবাড়ীর রাজার ওজন প্রায় ২০ মণ অর্থাৎ ৮০০ কেজি। সুঠাম দেহের রাজার উচ্চতা ৬ ফুট ও লম্বায় প্রায় ৭ ফুট। বুকের চওড়া সাড়ে ৬ ফুট। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে এবার বাজার মাতাবে রাজবাড়ীর এই রাজা। এরই মধ্যে রাজাকে দেখতে খামারি সুবাসের বাড়িতে আশপাশের এলাকা থেকে ভিড় করছেন উৎসুক জনতা।

খামারি ষাটোর্ধ্ব সুভাষ শিকদার গণমাধ্যমকে বলেন, প্রায় চার বছর ধরে রাজাকে আমি সন্তানের মতো লালন-পালন করেছি। এবার ঈদুল আজহা উপলক্ষে বিক্রির জন্য রাজাকে প্রস্তুত করছি। তাকে আমি খাবার দাবার দিয়ে অতি যত্নের সঙ্গে সন্তানের মতো নিজে লালন-পালন করেছি। ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে এটি আমি বিক্রি করতে চাই। রাজার ওজন ১৮ থেকে ১৯ মণ হবে। এটি শাহিওয়াল জাতের গরু।

তিনি বলেন, আমি রাজাকে বিক্রির জন্য ৮ লাখ টাকা দাম হাঁকাচ্ছি। আমরা গ্রামাঞ্চলের মানুষ। শহরের হাট-বাজার খুব বেশি একটা চিনি না। আর চিনলেও আমার দ্বারা এত বড় গরু হাটে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করা সম্ভব না। আমার ইচ্ছা ভালো খরিদদার পেলে বাড়ি থেকে দাম কম/বেশি করে বিক্রি করে দেব।

সুবাস শিকদারের ছেলে প্রশান্ত শিকদার গণমাধ্যমকে বলেন, আমার বাবা ৪/৫ বছর ধরে গরুটা সন্তানের মতো লালনপালন করছে কষ্ট করে। আমরা সবাই এর সঙ্গে সহযোগিতা করেছি। অনেক খরচ হয়েছে এই গরুটার পেছনে। যদি কোনো লোক কিনতে চায়, তাহলে তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কাছে এসে দেখে দাম দর করে বিক্রি করা হবে। আমাদের গরুটা বিক্রি করার টার্গেট সাড়ে ৮ লাখ টাকা। এরকম ভালো দাম ও ভালো খরিদ দর পেলে আমরা গরুটা বিক্রি করব।

রাজবাড়ীর রাজাকে দেখতে আসা সুজন বিষ্ণু বলেন, আমার দেখা এ বছরের সবচেয়ে বড় গরু এটি। দেখতেও যেমন রাজার মতো নামও তার রাজবাড়ীর রাজা। গরুটির খোঁজ পাবার পর আমি একনজর দেখে এসেছি।

জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে জেলায় কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর সংখ্যা রয়েছে মোট ৪৭ হাজার ৯৬৩টি। এর মধ্যে গরু রয়েছে ২৪ হাজার ২৬০টি, মহিষ রয়েছে ২৩২টি, ছাগল ও ভেড়া রয়েছে ২৩ হাজার ৪৭১টি। চলতি বছর জেলায় কোরবানির জন্য গবাদিপশুর চাহিদা রয়েছে ৪১ হাজার ৬০১টি। উদ্বৃত্ত থাকবে ৬ হাজার ৩৬২টি।

রাজবাড়ী সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. ওমর ফারুক গণমাধ্যমকে বলেন, শাহিওয়াল জাতের গরু আকারে অনেক বড় হয়।সাধারণত খরচের কথা বিবেচনা করে খামারিরা সচরাচর গরু এত বড় করতে চান না। এক্ষেত্রে গরুটির মালিক ৪ বছর ধরে লালন-পালন করে গরুটিকে বড় করেছেন। গরুটিকে যেন কোনো প্রকার ক্ষতিকারক খাবার এবং স্টেরয়েড প্রয়োগ করা না হয় এ বিষয়ে গরুর মালিককে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে।

আরএ/এসএন

Share this news on: