যুক্তরাষ্ট্রে সালমান রুশদির ওপর হামলাকারীর ২৫ বছরের সাজা

বিতর্কিত লেখক সালমান রুশদিকে ছুরিকাঘাতের ঘটনায় অভিযুক্ত হাদি মাতারকে ২৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত। শুক্রবার নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের চাটুকোয়া কাউন্টির একটি আদালতে ২৭ বছর বয়সী হাদি মাতারকে হত্যাচেষ্টা এবং হামলার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।

চাটুকোয়া কাউন্টির জেলা অ্যাটর্নি জেসন শ্মিড জানান, দ্বিতীয় ডিগ্রির হত্যাচেষ্টার দায়ে মাতারকে ২৫ বছরের কারাদণ্ড এবং হামলার পৃথক এক মামলায় আরও ৭ বছরের সাজা দেওয়া হয়েছে।

বিচারক ডেভিড ডব্লিউ ফোলি বলেন, “ভবিষ্যতে এ ধরনের হামলা ঠেকাতেই এ সাজা জরুরি।”

ক্যালিফোর্নিয়ায় জন্ম নেওয়া মাতার নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছিলেন। তার আইনজীবীরা বলেন, প্রসিকিউশন পক্ষ ‘ইচ্ছাকৃত হত্যার মানসিকতা’ যথাযথভাবে প্রমাণ করতে পারেনি। তাই মামলাটি সাধারণ শারীরিক হামলার মামলায় রূপান্তরের আবেদন জানিয়েছিলেন তারা।

আসামিপক্ষের আইনজীবী ন্যাথানিয়েল ব্যারোন জানান, “আমার মক্কেল এখন বুঝতে পারছেন তার কাজের ফল কী হয়েছে। অতীতে ফিরে যেতে পারলে তিনি হয়তো এই ঘটনা বদলে দিতে চাইতেন।”

২০২২ সালে নিউ ইয়র্কের চাটুকোয়া ইনস্টিটিউশনে এক বক্তৃতার সময় প্রকাশ্যে রুশদিকে ছুরিকাঘাত করেন মাতার। মাথা ও শরীরে ১২ বারের বেশি ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হন ৭৭ বছর বয়সী রুশদি। আহত হন অন্য এক ব্যক্তি হেনরি রিসও। অস্ত্রোপচারের পর রুশদি একটি চোখ হারান।

উল্লেখ্য, ১৯৮৮ সালে রুশদির উপন্যাস ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ প্রকাশের পর ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটাক্ষের অভিযোগে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। ইরানের তৎকালীন সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লাহ খোমেইনি তার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়া জারি করেছিলেন।

যদিও ইরান সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছে, তবে রুশদিকে ঘিরে বিতর্ক এখনো অব্যাহত। ২০১২ সালে ইরানের এক আধা-সরকারি ধর্মীয় ফাউন্ডেশন রুশদির মাথার দাম বাড়িয়ে ৩.৩ মিলিয়ন ডলার করে। যদিও রুশদি তখন হুমকিগুলোকে গুরুত্ব দেননি।

কাশ্মীরি মুসলিম পরিবারে জন্ম নেওয়া এই লেখক নিজেকে নাস্তিক হিসেবে পরিচয় দিয়ে বারবার তার লেখার পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন। ‘স্যাটানিক ভার্সেস’ অনেক মুসলিমের কাছে ধর্ম অবমাননাকর মনে হওয়ায় এখনো আলোচিত।

রুশদির ওপর হামলার ঘটনাকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত হিসেবে নিন্দা জানিয়েছেন বিশ্বজুড়ে লেখক ও রাজনীতিবিদরা।


এসএস/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প অনুভূত Nov 21, 2025
img
সুরিয়া তেলেগু সিনেমায় নতুন পদার্পণের পথে Nov 21, 2025
img
রাজামৌলীর মেগা প্রজেক্টে নতুন চমক মাধবন Nov 21, 2025
img
শীতের সবজিতে বাজার ভরপুর, তবুও দামে নেই স্বস্তি Nov 21, 2025
img
রাজধানীতে ডিএমপির বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ১১ Nov 21, 2025
img
বিশ্বকাপে ওঠার শেষ সুযোগে ইতালির প্রতিপক্ষ উত্তর আয়ারল্যান্ড Nov 21, 2025
img
চট্টগ্রামে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে থেকে প্রাইভেটকার পড়ে নিহত ১, আটক ২ Nov 21, 2025
img
পূর্ব ইউক্রেনের প্রধান শহরের দখল নিলো রাশিয়া Nov 21, 2025
img
নির্বাচন নিয়ে নাগরিকদের মনে এখনো শঙ্কা : ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য Nov 21, 2025
img
ইতিবাচক ভাবনার বার্তা দিলেন অভিনেতা বিবেক ওবেরয় Nov 21, 2025
img

সংসদ নির্বাচন নিয়ে এক্স ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশন

সশস্ত্র বাহিনীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা দাবি Nov 21, 2025
img
কারও সঙ্গে লড়াই করার ইচ্ছে আমার নেই: জিৎ Nov 21, 2025
img
লড়াইয়ের দিনগুলো মনে পড়লে খুব ভয় করে: মিঠুন চক্রবর্তী Nov 21, 2025
img
আমাদের সময় নায়িকাদের তেমন কিছু করার থাকত না: লাবনী সরকার Nov 21, 2025
img
তত্ত্বাবধায়ক পুনর্বহালে গণতন্ত্র ইতিবাচক ধারায় ফিরবে : জামায়াত Nov 21, 2025
img
তুষারঝড়ে থমকে গেল যুক্তরাজ্য, বন্ধ শত শত স্কুল ও বিদ্যুৎ বিপর্যয় Nov 21, 2025
img
অ্যাশেজে ২ টেস্টের গুরুদায়িত্ব সৈকতের কাঁধে Nov 21, 2025
img
প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক হলেন শিক্ষা ক্যাডারের ১৮৭০ কর্মকর্তা Nov 21, 2025
img
সশস্ত্র বাহিনী জাতির আস্থার প্রতীক : তারেক রহমান Nov 21, 2025
img
শিখা অনির্বাণে ৩ বাহিনী প্রধানদের শ্রদ্ধাঞ্জলি Nov 21, 2025