প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে লিবিয়ায় বিক্ষোভ, গণঅসন্তোষের ইঙ্গিত

উত্তর আফ্রিকার দেশ লিবিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবদুলহামিদ দেবেইবাহের অপসারণের দাবিতে শুক্রবার (১৬ মে) শতশত মানুষ বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। আন্দোলনকারীদের কয়েকজন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জোরপূর্বক প্রবেশের চেষ্টা করলে সংঘর্ষে এক নিরাপত্তাকর্মীর মৃত্যু হয়। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে খবরটি জানিয়েছে।

রাজধানী ত্রিপোলির শহিদ চত্বরে উপস্থিত জনতার মুখে সরকার উৎখাত এবং নির্বাচনের দাবিতে স্লোগান শোনা যায়। এসব স্লোগানের মধ্যে ছিল- জনগণ সরকারের পতন চায় এবং আমরা নির্বাচন চাই।

চত্বরে স্লোগান দেওয়া শেষে তারা রাজধানীর কেন্দ্রস্থলের দিকে সরকারি ভবনের দিকে মিছিল করে এগিয়ে যেতে থাকেন। এক বিক্ষোভকারী বলেন, দেবেইবাহ যাওয়ার (পদত্যাগ) আগ পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবে।

বিক্ষোভকারীদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে দেবেইবাহ, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ইব্রাহিম এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এমাদ তারবুলসির ছবি সাঁটানো ছিল। সবার ছবিতেই লাল কালিতে ক্রস চিহ্ন এঁকে রেখেছিলেন তারা।

বিক্ষোভকারীদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে তিনজন মন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। তারা হলেন অর্থনীতি ও বাণিজ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ আল-হাওয়িজ, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বদরেদ্দিন আল-তামি এবং আবাসনমন্ত্রী আবু বকর আল-গাওয়ি।

২০২১ সালে জাতিসংঘ সমর্থিত প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসে দেবেইবাহর জাতীয় ঐক্যের সরকার। বিরোধী পক্ষদের মধ্যে ঐকমত্যের অভাবে সে বছর নির্বাচন আয়োজন ব্যর্থ হয়। ফলে এখনও ক্ষমতায় রয়ে গেছেন তিনি।

শুক্রবার বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জোরপূর্বক প্রবেশের চেষ্টা করলে নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। সরকার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে পরে জানানো হয়, বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে এক কর্মী নিহত হয়েছেন। সরকার কর্তৃক প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, ভবনের নিরাপত্তাবেষ্টনী ইট-পাথর দিয়ে নষ্ট করে ফেলা হয়েছে।

চলতি সপ্তাহে ত্রিপলিতে বিরোধী সশস্ত্র দুটি দলের সংঘর্ষের পর দেবেইবাহের পদত্যাগের বিষয়ে জনসমর্থন বৃদ্ধি পায়। দীর্ঘদিন পর সংঘটিত ভয়াবহ ওই সংঘাতে আট জন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।

সহিংসতা কমাতে গিয়ে পরিস্থিতি আরও জটিল করে তোলেন দেবেইবাহ। তিনি মঙ্গলবার সব সশস্ত্র গোষ্ঠীকে বিলুপ্ত করার আদেশ দিলে পরিস্থিতি আরও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। স্থিতিশীলটা আনতে ব্যর্থ হওয়ার পেছনে সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে দেবেইবাহের দহরম মহরমকে দায়ী করে থাকেন লিবিয়ার জনগণ।

সংঘর্ষে আবদুলঘানি কিকলি নামে এক মিলিশিয়া নেতা নিহত হন। এরপরই সরকার পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করলে বুধবার থেকে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হতে শুরু করে।

উল্লেখ্য, ২০১১ সালে ন্যাটো সমর্থিত অভ্যুত্থানে লিবিয়ার দীর্ঘদিনের শাসক মুয়াম্মর গাদ্দাফিকে উৎখাত করা হয়। তবে কথিত স্বৈরশাসককে উৎখাত করে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অগ্রযাত্রায় ২০১৪ সালে দেশে উলটো গৃহযুদ্ধ বেঁধে যায়। ফলশ্রুতিতে দেশটির শাসন পূর্ব ও পশ্চিম অংশে বিভক্ত হয়ে পড়ে। তবে ২০২০ সালে যুদ্ধবিরতির পর বড় ধরনের লড়াই একটু প্রশমিত হয়।

এসএম/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
নির্বাচনের দাবিতে সরকারকে ঘেরাও করা লাগলে, তা হবে দেশের জন্য দুর্ভাগ্যজনক: সালাহউদ্দিন আহমেদ May 18, 2025
img
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী বাংলাদেশ May 18, 2025
img
আইসিইউতে ব্রাজিলের বিশ্বকাপজয়ী কিংবদন্তি ডিফেন্ডার May 18, 2025
img
পরিস্থিতি অযথা ঘোলাটে না করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করুন: তারেক রহমান May 17, 2025
সেই আইনজীবীর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করবো: মারিয়া মিম May 17, 2025
ভিয়েতনাম চালু করতে যাচ্ছে ১০ বছরের গোল্ডেন ভিসা May 17, 2025
‘পুশ-ইনউস্কানিমূলক মনে করেন না স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা May 17, 2025
img
ব্রিজের ওপর ১৩ বগি রেখেই চলে গেল ট্রেন May 17, 2025
পিএসএলে মাঠে নামতে মরিয়া সাকিব আল হাসান May 17, 2025
img
‘বলেন তো, আপনার স্বামী কয়জন’, মমতাজকে পিপি May 17, 2025