স্পেনে অভিবাসীদের বৈধকরণ, যা এতদিন রাজনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দৃষ্টিতে অনাকাঙ্ক্ষিত পদক্ষেপ বলে বিবেচিত হতো, সেটিই এখন সরকারের জন্য একটি জরুরি সমাধানে রূপ নিচ্ছে। কংগ্রেসে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আটকে থাকা এ প্রস্তাব সম্প্রতি নতুন গতি পেয়েছে। আর এর পেছনে রয়েছে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিবর্তন, শ্রমবাজারে চাহিদা এবং সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ।
এ উদ্যোগটি এসেছে একটি ইনিসিয়াটিভা লেজিস্লাটিভা পপুলার, আইএলপি (জনপ্রস্তাব) আকারে, যার মাধ্যমে প্রায় ৪ লাখ অনিয়মিত অভিবাসীকে বৈধতা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। ৬ লাখের বেশি স্বাক্ষর এবং ৯০০টিরও বেশি সামাজিক সংগঠনের সমর্থন পাওয়া এ প্রস্তাব ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে কংগ্রেসে উপস্থাপিত হয়েছিল। তখন থেকেই এটি কার্যত অচল অবস্থায় ছিল।
সংসদের সব রাজনৈতিক দল এ প্রস্তাবের পক্ষে ছিল, তবে ডানপন্থি ভক্স ব্যতীত। তবে স্পেনের প্রধান দুটি দল পিপলস পার্টি ও সোশ্যালিস্ট পার্টি শুরুতে বিষয়টি নিয়ে অনাগ্রহী ছিল। কিন্তু এপিস্কোপাল সম্মেলন ও সরকারি জোট সঙ্গীদের চাপের মুখে পড়ে তারা প্রক্রিয়াটি আটকে না দিয়ে আলোচনায় বসতে রাজি হয়।
গত কয়েক সপ্তাহে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ অভিবাসন ইস্যুকে ব্যক্তিগতভাবে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। সরকারি একাধিক সূত্র জানিয়েছে, তিনি সরাসরি মন্ত্রীদের নির্দেশ দিয়েছেন, নতুন রেগলামেন্ত দে এক্সত্রানখেরিয়া (অভিবাসন আইন) দ্রুত কার্যকর করতে হবে এবং বৈধকরণ প্রক্রিয়ার দিকে নজর দিতে হবে।
অভিবাসন বিষয়ক রাষ্ট্রমন্ত্রী পিলার কানসেলা জানিয়েছেন, গত ১ এপ্রিলের এক সভায় সানচেজ স্পষ্ট বলেন যে, ‘এটি একটি অগ্রাধিকারমূলক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এবং যত দ্রুত সম্ভব কার্যকর করতে হবে।’
এদিকে ২০ মে থেকে কার্যকর হতে যাওয়া নতুন অভিবাসন আইন কাজের অনুমতি ও বসবাসের অনুমোদন সহজ করবে। তবে একইসঙ্গে এটি হাজার হাজার অভিবাসী বিশেষ করে আশ্রয়প্রার্থীদের মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
বর্তমানে স্পেনে ২.৭৫ লাখের বেশি মানুষ আশ্রয় প্রার্থনা করে অপেক্ষায় আছে। অনেকের আবেদন খারিজ হলেও আগে তারা সহজেই ‘আররাইগো’ পদ্ধতিতে বৈধ হতেন। নতুন নিয়মে তাদের ৬ মাস থেকে ২ বছর পর্যন্ত অনিয়মিত অবস্থায় থাকার বাধ্যবাধকতা আসছে। তাছাড়া অপ্রাপ্তবয়স্ক বা পূর্বে হেফাজতে থাকা তরুণ অভিবাসীদের জন্যও অনুমোদন পাওয়ার শর্ত কঠিন করা হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে আইএলপি প্রস্তাবটি এখন রাজনৈতিক ও মানবিক উভয়দিক থেকেই এক গুরুত্বপূর্ণ সমাধান হিসেবে দেখা হচ্ছে। পিএসওইর একাধিক সূত্র বলছে, এ প্রস্তাবটি পাস না হলে সমস্যা হবে। গ্রীষ্মের আগেই এটি পাস করাতে হবে, কারণ তারপর রাজনৈতিক সময়সূচি জটিল হয়ে পড়বে।
সরকার এমন একটি নতুন খসড়া প্রস্তাব দিয়েছে, যা সর্বোচ্চ সংখ্যক অভিবাসীকে অন্তর্ভুক্ত করে বৈধতার জন্য শূন্য থেকে গণনা শুরু করতে চায়।
বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে যেখানে অভিবাসনবিরোধী মনোভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেখানে স্পেনের এ উদ্যোগ কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকেও কঠোর প্রতিক্রিয়া আসতে পারে।
তবে সরকার বলছে, এ উদ্যোগটি সরকারের নয়, সংসদের। এটি একটি জনগণের প্রস্তাব এবং এই জনপ্রিয় বৈশিষ্ট্যই আন্তর্জাতিক সমালোচনার বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী প্রতিরক্ষা হতে পারে।
প্রস্তাবটি বর্তমানে সরকার ও পোডেমোস দলের মধ্যে আলোচনাধীন। যদিও পোডেমোস সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থানে রয়েছে, রাজনৈতিক বাস্তবতায় এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা তাদের জন্য সহজ হবে না। শিগগিরই এটি প্রস্তাব আকারে অন্য দলগুলোর কাছেও যাবে।
তথ্যসূত্র: এল পাইস