সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে কি না, তা পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হবে বিএনপি

সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, তাই সংস্কার ও নির্বাচন প্রক্রিয়া দুটোই একইসঙ্গে চলতে পারে বলে মনে করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তির ও ব্যক্তির অর্থাৎ দল ও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচার প্রক্রিয়া চলমান থাকবে।

খন্দকার মোশাররফ বলেন, যে বিষয়গুলো এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করা হচ্ছে, সে বিষয়গুলো আমাদের আগের প্রস্তাব ও পরামর্শের মতো উপেক্ষিত হলে তা হবে দুর্ভাগ্যজনক। সেক্ষেত্রে অনিবার্যভাবেই বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে কি না, তা পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হবে।

বৃহস্পতিবার (২২ মে) বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থে বিতর্কিত কয়েকজন উপদেষ্টা— যাদের বক্তব্যে এবং কর্মকাণ্ডে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে, এমন বিতর্কিত উপদেষ্টাদের সরিয়ে দেওয়ার দাবি আমরা তুলেছিলাম। অন্তর্বর্তী অস্থায়ী সরকারের একমাত্র ম্যান্ডেট হচ্ছে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। অথচ সরকারের মুখপাত্র হিসেবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেছেন যে, ‘এই সরকারের সবকিছু করার ম্যান্ডেট রয়েছে।’

মানবিক করিডর এবং চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে সরকারের বিভিন্ন বক্তব্য ও কর্মকাণ্ডে জাতীয় স্বার্থ রক্ষিত হচ্ছে কি না সেটা সর্বাগ্রে বিবেচনায় নেওয়া দরকার বলে উল্লেখ করেন মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, এছাড়া এমন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ও দীর্ঘ মেয়াদি নীতি নির্ধারণী কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন অস্থায়ী সরকারের আছে বলে এ দেশের জনগণ মনে করে না।

সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, দেশের নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট স্পর্শকাতর ও জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার বিবেচনায় নিয়ে যাতে দেশে অস্থিতিশীল কোনো পরিবেশ সৃষ্টি না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে এই বিষয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত কেবল জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকার কর্তৃক জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত হওয়াই সমীচীন।

বিএনপি নেতা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের যেসব উপদেষ্টা একটি নতুন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত বলে সবাই জানে ও বুঝে, উপদেষ্টা পরিষদে তাদের উপস্থিতি সরকারের নির্দলীয় নিরপেক্ষ পরিচিতিকে ক্রমাগত প্রশ্নবিদ্ধ করে চলেছে বলেই সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে তাদেরকে অব্যাহতি প্রদান করা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার গতকালের (বুধবার) বক্তব্য আবারও নতুন বির্তকের জন্ম দিয়েছে। সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে তাকে অব্যাহতি প্রদান করতে হবে। ফ্যাসিবাদের দোসর কয়েকজন উপদেষ্টাকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি আমরা ইতোপূর্বে অনেকবার উত্থাপন করেছি।

মোশাররফ হোসেন বলেন, যেহেতু, একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করাই এই সরকারের প্রধান কাজ, তাই মাথাভারী উপদেষ্টা পরিষদ না রেখে শুধু রুটিন ওয়ার্ক পরিচালনার জন্য একটি ছোট আকারের উপদেষ্টা পরিষদ রাখাই বাঞ্ছনীয়।

বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি ‘সংস্কার সনদ’ তৈরির প্রক্রিয়ার মধ্যেই আলাপ-আলোচনা অব্যাহত থাকা সত্ত্বেও একই বিষয়গুলো নিয়ে এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিতে একটি দলের নির্বাচন কমিশন ঘেরাও কর্মসূচি আমাদের এবং সরকারকে বিব্রত করে। সার্চ কমিটির মাধ্যমে আইনানুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠিত হলেও একটি মহল নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন চায়। সরকার সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠনের প্রক্রিয়ায় সবক্ষেত্রে আমাদের মতামত না নিলেও নির্বাচন কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে সব পক্ষকে অন্তর্ভুক্ত করে এই কমিশন গঠন করেছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সংক্রান্ত বিষয়ে আদালতের রায় অনুযায়ী গেজেট নোটিফিকেশন করায় নির্বাচন কমিশনকে অন্যায় ও অযৌক্তিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে বলে দাবি করেন বিএনপির এই নেতা। তার মতে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্যই দেশের জনগণ রক্ত দিয়ে গণঅভ্যুত্থান করেছে। সুতরাং, আমাদের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ থাকতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা আশা করব— নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল এবং উচ্চ আদালতের রায়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে অতি শিগগিরই সরকার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনকে শপথ গ্রহণ করানোর ব্যবস্থা নেবে।

খন্দকার মোশাররফ বলেন, নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব হচ্ছে— রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। এমন বাস্তবতায় স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিতে নির্বাচন কমিশন ঘেরাও করার বিষয়টি উদ্দেশ্যমূলক ও রহস্যজনক।

নির্বাচনের রোডম্যাপের দাবি- 
মোশাররফ হোসেন বলেন, জুলাই-ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে মানুষের হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার, মানবাধিকারসহ ভোটাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যথাশিগগির সম্ভব জনআকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করাই এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।

‘তাই, আমরা একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে একটি জাতীয় সংসদ গঠনের জন্য অবিলম্বে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি। এই সর্বোচ্চ জনআকাঙ্ক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানতম এজেন্ডা হওয়া উচিত বলে জনগণ মনে করে। এর অন্যথা হলে জনগণের দল হিসেবে বিএনপির পক্ষে এই সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।’

সংবাদ সম্মেলনে দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি রোধকল্পে, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয় ক্ষমতার নাগালের মধ্যে রাখতে, বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্যে গতিশীলতা আনায়নের লক্ষ্যে নির্বাচন পূর্ব সময় পর্যন্ত সরকার ঐকমত্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বিএনপি।

সংবাদ সম্মেলনে ড. আব্দুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহ উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

এসএন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
‘শুদ্ধ সাদা এক মেয়ের জীবন’- ক্যাপশনে জীবনের গল্প বললেন পরীমণি Jul 19, 2025
img
‘মার্চ টু গোপালগঞ্জে’ রাষ্ট্রের কত অর্থ ব্যয় হয়েছে, প্রশ্ন মাসুদ কামালের Jul 19, 2025
img
ভোলার চরফ্যাশনে সাড়ে ১৪ কোটি টাকার অবৈধ জাল ও পলিথিন জব্দ Jul 19, 2025
img
কেন প্রেম ভেঙেছিল আলিয়া- সিদ্ধার্থের! Jul 19, 2025
img
আগামী পাঁচ দিনে বাড়বে বৃষ্টির প্রবণতা, উত্তরাঞ্চলে ভারি বর্ষণের সতর্কতা Jul 19, 2025
img
বিএনপিকে খেপিয়ে কীভাবে মাঠে টিকে থাকবেন, জানি না : ইলিয়াস হোসেন Jul 19, 2025
img
সিনেমা হলগুলো দর্শক হারানোর কারণ জানালেন পঙ্কজ ত্রিপাঠি! Jul 19, 2025
img
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘ইতিহাস’ গড়ল জামায়াত! Jul 19, 2025
img
‘কৌন বনেগা ক্রোড়পতি’ শো এর মাধ্যমে সবচেয়ে দামি সঞ্চালক হতে যাচ্ছেন অমিতাভ বচ্চন! Jul 19, 2025
img
কুমিল্লার মুরাদনগরে জনসভা করার ঘোষণা দিলেন ইশরাক Jul 19, 2025
img
অবসর ভেঙে আবারও ফিরেছেন ব্রাজিলের কিংবদন্তি ফুটবলার! Jul 19, 2025
img
সৈকতে কারিনার ‘লুঙ্গি ড্যান্স’, নেটদুনিয়ায় ঝড়! Jul 19, 2025
img
জামায়াতের সমাবেশ ঘিরে নিরাপত্তায় ১২ হাজার পুলিশ, রয়েছে র‍্যাব-ডিবিও Jul 19, 2025
img
বাসা থেকে অভিনেত্রীর মরদেহ উদ্ধার Jul 19, 2025
img
গায়ানার কাছে হেরে টানা দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন ভঙ্গ হলো রংপুর রাইডার্সের Jul 19, 2025
img
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের বিরুদ্ধে ১০ বিলিয়ন ডলারের মানহানির মামলা ট্রাম্পের Jul 19, 2025
img
নির্বাচনের জন্য আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ : আব্দুন নূর তুষার Jul 19, 2025
img
মুক্তির এক বছর আগেই শুরু নোলানের 'দ্য ওডিসি'র টিকিট বিক্রি! Jul 19, 2025
img
ঢাকায় সমাবেশে আসার পথে সড়কে প্রাণ গেল জামায়াত নেতার Jul 19, 2025
img
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দিয়ে জাতীয় সমাবেশের প্রথম পর্ব শুরু করল জামায়াত Jul 19, 2025