যুক্তরাষ্ট্র বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর বিধিনিষেধ আরও কঠোর করতে যাচ্ছে। এর অংশ হিসেবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন বিশ্বজুড়ে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা কার্যক্রম আপাতত স্থগিত করেছে।
এবার চীনা শিক্ষার্থীদের ভিসা “আগ্রাসীভাবে” অর্থাৎ কঠোরভাবে বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। পাশাপাশি চীন ও হংকং থেকে আসা শিক্ষার্থীদের ভিসা যাচাই প্রক্রিয়া আরও জোরদার করা হবে। বৃহস্পতিবার (২৯ মে) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এই তথ্য জানায়।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, চীনা শিক্ষার্থীদের ভিসা “আগ্রাসীভাবে” বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বুধবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, এই পদক্ষেপে এমন শিক্ষার্থীরাও অন্তর্ভুক্ত হবেন যাদের চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে কিংবা যারা “সংবেদনশীল বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে” পড়াশোনা করছেন।
তিনি আরও জানান, ভবিষ্যতে চীন ও হংকং থেকে আসা শিক্ষার্থীদের ভিসা যাচাইয়ের প্রক্রিয়া আরও কঠোর করা হবে।
বিবিসি বলছে, এই সিদ্ধান্তের পেছনে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার প্রভাব রয়েছে। ট্রাম্পের নেতৃত্বে বাণিজ্যযুদ্ধ, প্রযুক্তি খাত ও ভিসা নীতিতে নানা পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার ফলে দুই দেশের সম্পর্ক বিগত কয়েক মাসে তলানিতে ঠেকেছে।
এর আগে গত সোমবার এক কূটনৈতিক বার্তায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বিশ্বজুড়ে মার্কিন দূতাবাসগুলোকে নতুন শিক্ষার্থী ভিসার জন্য আপয়েন্টমেন্ট কার্যক্রম বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেন। বার্তায় বলা হয়, এই স্থগিতাদেশ পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
আনুমানিক হিসেব অনুযায়ী, গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ২ লাখ ৮০ হাজার চীনা শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছিলেন। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে চীন সবসময় শীর্ষে থাকলেও মহামারি ও কূটনৈতিক টানাপড়েনের কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাদের সংখ্যা কমেছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্দেশনায় পররাষ্ট্র দপ্তর ও স্বরাষ্ট্র দপ্তর মিলে চীনা শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিলের প্রক্রিয়া আরও জোরদার করবে। যারা চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত বা স্পর্শকাতর বিষয়ে পড়ছেন, তাদের ওপর নজরদারি বাড়ানো হবে।”
তিনি আরও বলেন, “চীন ও হংকং থেকে ভবিষ্যতে আসা শিক্ষার্থীদের ভিসার আবেদন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খতিয়ে দেখা হবে।”
ট্রাম্প প্রশাসন এর আগেও হাজার হাজার বিদেশি শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল ও বহিষ্কারের উদ্যোগ নিয়েছে, যদিও আদালত সেগুলোর অনেকটাই আটকে দিয়েছে। এছাড়া দেশের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় বরাদ্দ দেওয়া শত শত মিলিয়ন ডলারের তহবিলও ফ্রিজ করে দেওয়া হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়, বিশেষ করে হার্ভার্ডকে অতিমাত্রায় উদারপন্থি মনে করেন এবং তার অভিযোগ, তারা অভ্যন্তরীণ অ্যান্টিসেমিটিজম বা ইহুদি বিদ্বেষ রুখতে ব্যর্থ হয়েছে।
উল্লেখ্য, বিদেশি শিক্ষার্থীরা তুলনামূলক বেশি ফি দিয়ে থাকেন, ফলে বহু মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়ের বড় অংশই বিদেশি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আসে।
আরএ/টিএ