যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে আটকে গেল ট্রাম্পের শুল্কনীতি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চলতি বছরের এপ্রিলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর ব্যাপকহারে শুল্ক আরোপের যে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, সেটি আটকে দিয়েছে দেশটির এক আদালত।

আদালতের এই রায়কে ট্রাম্পের অর্থনৈতিক নীতির ওপর একটি বড় ধাক্কা বলে মনে করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (২৯ মে) এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

কোর্ট অব ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড রায় দিয়েছে, যে জরুরি আইনের অজুহাত দেখিয়ে হোয়াইট হাউস এই শুল্ক আরোপ করেছে, সেই আইন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে একচেটিয়াভাবে বিশ্বের প্রায় সব দেশের পণ্যে শুল্ক বসানোর এখতিয়ার দেয় না।

ম্যানহাটন-ভিত্তিক এই আদালত আরও বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের একচেটিয়া ক্ষমতা কংগ্রেসের হাতে। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে রক্ষা করার জন্য প্রেসিডেন্টের হাতে যে ক্ষমতা, কংগ্রেসের ক্ষমতা তার চেয়ে বেশি।

একইসঙ্গে চীন, মেক্সিকো ও কানাডার ওপর ট্রাম্প প্রশাসন পৃথকভাবে যে শুল্ক আরোপ করেছিল, সেটিকেও স্থগিত করেছেন আদালত। তখন হোয়াইট হাউস বলেছিল, অগ্রহণযোগ্য মাদক প্রবাহ ও অবৈধ অভিবাসন ঠেকানোই এই শুল্ক আরোপের প্রধান কারণ।

এদিকে, আদালতের ওই রায়ের বিরুদ্ধে কয়েক মিনিটের মধ্যেই আপিল করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।
আদালতের এই রায়ের পর হোয়াইট হাউসের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি কুশ দেশাই এক বিবৃতিতে বলেন, “কোনও জাতীয় জরুরি অবস্থা কীভাবে যথাযথভাবে মোকাবিলা করা হবে, তা নির্ধারণ করা অনির্বাচিত বিচারকদের কাজ নয়।”

তিনি আরও বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমেরিকাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। আর ট্রাম্প প্রশাসন প্রতিটি নির্বাহী ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে সমস্ত সংকট মোকাবিলা ও আমেরিকান মহত্ব পুনরুদ্ধারের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

মূলত বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পণ্য আমদানিকারক পাঁচটি ক্ষুদ্র ব্যবসার পক্ষে মামলাটি দায়ের করেছিল রাজনৈতিক সংস্থা লিবার্টি জাস্টিস সেন্টার। যে দেশগুলো থেকে তারা পণ্য আমদানি করে, ওই দেশগুলোর পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

এই মামলাই হলো ডোনাল্ড ট্রাম্পের তথাকথিত “লিবারেশন ডে” ট্যারিফের বিরুদ্ধে প্রথম বড় ধরনের কোনো আইনি চ্যালেঞ্জ। এই মামলাটি ছাড়াও ট্রাম্প প্রশাসনের বাণিজ্য নীতির বিরুদ্ধে আরও ছয়টি মামলা চলছে। আর এগুলো করেছে ১৩টি মার্কিন অঙ্গরাজ্য এবং আরও অনেক ছোট ব্যবসায়ী গোষ্ঠী।

সর্বশেষ রায়ে তিন বিচারকের প্যানেল থেকে বলা হয়েছে, ট্যারিফ বা শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তকে ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্প ১৯৭৭ সালের “ইন্টারন্যাশনাল ইমার্জেন্সি ইকোনমিক পাওয়ারস অ্যাক্ট” (আইইইপিএ)-এর দোহাই দিলেও ওই আইন মার্কিন প্রেসিডেন্টকে একচেটিয়াভাবে এই ধরনের বিস্তৃত ট্যারিফ আরোপের ক্ষমতা দেয় না।

বিচারকরা লিখেছেন, “আইইইপিএ আইনে শুল্ক আরোপের বিষয়ে প্রেসিডেন্টকে যে ক্ষমতা দেওয়া আছে, ডোলান্ড ট্রাম্প আরোপিত ‘বিশ্বব্যাপী ও প্রতিশোধমূলক শুল্ক আদেশগুলো’ সেই ক্ষ্মতার পরিধিকে ছাড়িয়ে গেছে। ‘ট্রাফিকিং ট্যারিফ’ ব্যর্থ, কারণ এগুলো আদেশে উল্লিখিত হুমকির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।”

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের এপ্রিলের ২ তারিখে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। আর সেই ট্যারিফ ঘোষণার পর থেকে বিশ্ববাজারে টালমাটাল পরিস্থিতি দেখা দেয়। যদিও এরপর ওই ঘোষণা পুনর্বিবেচনা করা হয় এবং কিছু শর্ত তুলে নিয়ে অন্যান্য দেশের সাথে দর কষাকষিও করে হোয়াইট হাউস।

টিকে/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
আমরা আর ‘ভারতের দাদাগিরি’ মানব না : রাশেদ খান Nov 19, 2025
img
নতুন অ্যাকশন ছবিতে টাইগার শ্রফ Nov 19, 2025
img

বরের বেশে মাঠে হাজির ভক্ত

হবু বউ বলেছিল ভারতকে না হারালে বিয়ে করবে না Nov 19, 2025
img
বিএনপি-জামায়াত-এনসিপির সঙ্গে আজ সংলাপে বসছে ইসি Nov 19, 2025
img
সিএনএনের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের মামলা খারিজের সিদ্ধান্ত বহাল আদালতের Nov 19, 2025
img
প্রীতি ম্যাচে তিউনিসিয়ার বিপক্ষে পিছিয়ে পড়ার পর ১-১ ড্র ব্রাজিলের Nov 19, 2025
রাজধানীর ৭ আসনে প্রার্থী নেই বিএনপির, কারা পাচ্ছেন জোটের টিকিট! Nov 19, 2025
কুমিল্লা নগরীতে বিএনপির প্রার্থী মনিরুল হকের গণমিছিল Nov 19, 2025
'বিএনপি চাপ প্রয়োগ করায় শেখ হাসিনা দূর্বল হয়ে গিয়েছে' Nov 19, 2025
img
ডেনমার্ককে ৪-২ গোলে হারিয়ে ২৮ বছর পর বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ড Nov 19, 2025
এএফ এশিয়া কাপে কোয়ালিফায়ার করা নিয়ে যা বললেন ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ | Nov 19, 2025
হামজা-মোরসালিনদের হাত ধরে ঐতিহাসিক জয় বাংলাদেশের Nov 19, 2025
ঢাকায় ফেরত আসছে পাকিস্তানের ব্যান্ড কাভিশ Nov 19, 2025
নতুন টিভিসিতে ফিরলেন ঢালিউড কিং শাকিব খান Nov 19, 2025
img
জিম্বাবুয়েকে ৫ উইকেটে হারিয়ে ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু করল পাকিস্তান Nov 19, 2025
img
চাঁদাবাজি ও জুলুম থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে চাই : নুরুল হক নুর Nov 19, 2025
img
মধ্যরাতে সাংবাদিক সোহেলকে তুলে নিল ডিবি Nov 19, 2025
img

হামজা চৌধুরী

আমরা ১৮ কোটি মানুষকে খুশি করেছি Nov 19, 2025
img
গাজীপুরে ঝুটের গুদামে ভয়াবহ আগুন Nov 19, 2025
img
হামজাদের প্রশংসায় ভাসালেন তারেক রহমান, অভিনন্দন জানালেন জামায়াত আমির Nov 19, 2025