দুর্নীতিবাজদের জব্দ অর্থ বাজেটে যুক্ত হলে তা হবে অভিনব অর্থের উৎস: ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

বিগত সরকারের আমলে দুর্নীতি, ব্যাংক জালিয়াতি, করফাঁকি ও পাচার হওয়া অর্থ জব্দ করে তা বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করা গেলে, এবারের বাজেটের জন্য তা হতে পারে একটি অভিনব অর্থের উৎস-এমন মন্তব্য করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য


তিনি বলেন, গত সরকারের রেখে যাওয়া বৈদেশিক ঋণের চাপ ছিল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ পর্যায়ে। বর্তমান সরকারের উল্লেখযোগ্য একটি সাফল্য হলো ৫ বিলিয়ন ডলার পরিশোধের মাধ্যমে সেই চাপ কিছুটা কমিয়ে আনা। কারণ যা বিলিয়ন ডলার করে বছর বছর বাড়ছিলো।

শনিবার (৩১ মে) রাজধানীর এফডিসিতে ‘ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’-এর আয়োজনে ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট ছায়া সংসদে তিনি এসব কথা বলেন।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, সরকারের সাফল্যের জায়গাটি হলো- সরকার মজুদ বাড়াতে পেরেছে এবং টাকার মূল্যমানও তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল রাখতে সক্ষম হয়েছে। তবে দুঃখজনকভাবে এবারের বাজেটও হতে যাচ্ছে গতানুগতিক। খেলাপি ঋণ আদায়, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা কিংবা করের আওতা বাড়ানোর মতো কোনো নতুন উদ্যোগ না থাকায় এবারের বাজেটে তেমন কোনো চমক থাকছে না।

তিনি বলেন, সরকারি প্রকল্পগুলোর বড় অংশই অতিমূল্যায়িত। এর মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ ব্যয়ই ভুয়া। আগের যেসব প্রকল্প থেকে অর্থের অপচয় বা ‘রক্তক্ষরণ’ হতো, সেগুলো এখনো অব্যাহত আছে। যতদিন না রাজস্ব ব্যয় সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করা যাবে, ততদিন করদাতাদের মধ্যে কর দেওয়ার উৎসাহ জন্মাবে না। আমাদের কর কাঠামো এখনো বৈষম্যনির্ভর। যদিও বৈদেশিক খাতে কিছুটা স্থিতিশীলতা এসেছে, ব্যক্তিখাতে কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ ও স্থিতিশীলতা এখনও আশানুরূপ অর্জিত হয়নি।

কর ব্যবস্থায় দুর্বলতা, বৈষম্য ও দুর্নীতি দূর না হলে বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।

তিনি বলেছেন, বাজেট বাস্তবায়নের বড় চ্যালেঞ্জ দুর্নীতি, আর রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া সেটি সম্ভব নয়।

হাসান কিরণ বলেন, বিগত সরকারের আমলে রাজনীতিবিদ, আমলা ও ব্যবসায়ীদের একটি নেক্সাস বাজেটকে লুটপাটের হাতিয়ার বানিয়েছিল।

আজ জাতিকে সেই লুটপাটের বোঝা বইতে হচ্ছে। তারা ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি বৈদেশিক ঋণের বোঝা দিয়ে দেশ ছেড়েছে, যার ফলে প্রতিবছর গড়ে ২ থেকে ২.৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ পরিশোধ করতে হচ্ছে। মাফিয়া ইকোনমির শাসনে দেশের অর্থনীতি চৌর্যবৃত্তির ওপর দাঁড় করানো হয়েছিল।

তিনি বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন সময়মতো না হলে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়বে, যার ফলে বিনিয়োগ বিঘ্নিত হবে এবং বাজেট বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে পড়বে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে কিরণ বলেন, অর্থপাচারকারী, দুর্নীতিবাজ ও ঋণ খেলাপিদের নাম প্রকাশ করে দৃশ্যমান শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে কেবল ক্ষমতার পালাবদল ঘটবে, শোষণ ও দুর্নীতির ধরন বদলাবে না।

তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, চলমান পরিস্থিতিতে আসন্ন বাজেট জনআকাঙ্ক্ষা পূরণে কতটা সক্ষম হবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন বর্তমান কর কাঠামোর মাধ্যমে কঠিন হবে। করজালের পরিধি না বাড়িয়ে কেবল পুরোনো করদাতাদের ওপর চাপ বাড়ালে অর্থনীতির ভারসাম্য বিঘ্নিত হবে।

তিনি সতর্ক করে বলেন, এনবিআরের অস্থিরতা আয় বৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ না দিলে এবারের বাজেটও হয়ে উঠবে আগের গল্পের পুনরাবৃত্তি।

ছায়া সংসদ প্রতিযোগিতায় ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজকে পরাজিত করে বিজয়ী হয় ঢাকার বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির বিতার্কিক দল।

প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, প্রফেশনাল একাউন্টেন্ট আবুল বশির খান, সাংবাদিক উম্মন নাহার আজমী, আবুল কাশেম এবং মো. আতিকুর রহমান।

আরএম/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
দীর্ঘ ৯ মাস পর পর্যটকদের জন্য সেন্টমার্টিন খুলছে আগামীকাল Oct 31, 2025
img
আজকের মধ্যে সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারির আহ্বান মুজিবুর রহমানের Oct 31, 2025
img

সংবাদ সম্মেলনে এহসানুল হক মিলন

‘বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞার কারণ জানতে চেয়ে সদুত্তর পাইনি’ Oct 31, 2025
img
সৌদি প্রবাসীদের আইনি সুরক্ষা দিতেই চুক্তি: আইন উপদেষ্টা Oct 31, 2025
img
বন্যায় তলিয়ে গেছে নিউইয়র্ক, প্রাণ হারাল দুইজন Oct 31, 2025
img
তামান্নাকে নিয়ে নির্মাতা অনন্য মামুনের পোস্ট, নতুন সিনেমার জল্পনা Oct 31, 2025
img
নেত্রকোণায় অটোরিকশা-ট্রাকের সংঘর্ষে প্রাণ গেল ২ জনের Oct 31, 2025
img
লম্বা সময়ের জন্য মাঠের বাইরে জ্যোতি-মারুফারা Oct 31, 2025
img
ফিফার নিষেধাজ্ঞার জালে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব Oct 31, 2025
img
মানবতার প্রতি বিশ্ব উদাসীন হয়ে পড়েছে : রাষ্ট্রদূত তালহা Oct 31, 2025
img
মাত্র ৩ মাসে ১০ লাখের বেশি ই-রিটার্ন দাখিল, এনবিআরের ডিজিটাল সাফল্য Oct 31, 2025
img
শরণার্থী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় পাওয়ার সুযোগ প্রায় শেষ Oct 31, 2025
img
আমরা প্রতারণাকে ‌‌‘না’ বলছি : রুমিন ফারহানা Oct 31, 2025
img
রোববার সভায় বসছে বিসিবি, জানা গেলো আলোচনার বিষয় Oct 31, 2025
img
ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আজ Oct 31, 2025
img
সরকারি ব্যাংকের পরিচালকদের কর্মক্ষমতার বার্ষিক মূল্যায়ন হবে Oct 31, 2025
img
অভিনেতা মন্টুর বাড়িতে মিলল মাদকসহ বিদেশি অস্ত্র, আটক ৪ Oct 31, 2025
img
আজ সন্ধ্যায় সম্মান রক্ষার লড়াই বাংলাদেশের Oct 31, 2025
img
শনিবার মাঠে নামবে সালমান ভক্তরা Oct 31, 2025
img
শেষ হলো ইলিয়াস কাঞ্চনের প্রথম ধাপের কেমো থেরাপি Oct 31, 2025