পাকিস্তানের ডিজিটাল জগতের এক উদীয়মান তারকা ১৭ বছর বয়সী জনপ্রিয় টিকটকার সানা ইউসুফকে সোমবার (২ জুন) রাতে ইসলামাবাদে নিজ বাড়িতে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। টিকটক ও ইনস্টাগ্রামে প্রায় ১৮ লাখ অনুসারী ছিল তার। তরুণ প্রজন্ম, নারীর ক্ষমতায়ন এবং সাংস্কৃতিক গর্বকে তুলে ধরার মাধ্যমে তিনি সামাজিক মাধ্যমে একটি আলাদা পরিচিতি গড়ে তুলেছিলেন। ১৭তম জন্মদিনে তার মর্মান্তিক পরিণতিতে দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে এবং তরুণ নারী কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
২০০৮ সালের একই দিন (২ জুন) খাইবার পাখতুনখোয়ার চিত্রাল অঞ্চলে জন্ম সানার। তার বাবা সরকারি কর্মকর্তা এবং মা ফারজানা ইউসুফ একজন স্থানীয় সমাজকর্মী। ছোটবেলা থেকেই সামাজিক সচেতনতা ও দায়িত্ববোধে বড় হয়েছেন তিনি। টিকটক ও ইনস্টাগ্রামকে ব্যবহার করে বিনোদন, শিক্ষা এবং নারীদের উৎসাহিত করার মাধ্যম হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। খবর গালফ নিউজের।
সানার ভিডিওগুলোতে হাস্যরস থাকলেও সেগুলোয় সাংস্কৃতিক গর্ব, নারীর স্বাধীনতা ও আত্মপ্রকাশের বার্তা স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হতো। তিনি প্রায়ই চিত্রালি ঐতিহ্য তুলে ধরতেন এবং মেয়েদের বলতেন—নিজেকে প্রকাশ করো, অনলাইনে জায়গা করে নাও।
জন্মদিনের সন্ধ্যায় বাড়িতে খালার সঙ্গে অবস্থান করছিলেন সানা। হঠাৎ এক ব্যক্তি পিস্তল হাতে ঢুকে পড়ে। খালার ভাষ্য অনুযায়ী, আততায়ীকে সানা বলেন, 'তুমি এখান থেকে চলে যাও। এখানে চারপাশে ক্যামেরা লাগানো আছে। আমি তোমাকে এক গ্লাস পানি এনে দিচ্ছি।'
এই সংলাপের পরপরই আততায়ী তার বুকে দুটি গুলি করে পালিয়ে যায়।
সানাকে দ্রুত হাসপাতালে নেয়া হলেও বাঁচানো যায়নি। ওই সময় মা কেনাকাটার জন্য বাইরে ছিলেন এবং বাবা অফিসে। তার ১৫ বছরের ছোট ভাই ছিলেন চিত্রালে।
ঘটনার পরপরই পাকিস্তান দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় ইসলামাবাদের সুম্বল থানায় মামলা দায়ের হয়। মাত্র ২০ ঘণ্টার মধ্যে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহসিন নকভি প্রধান অভিযুক্তের গ্রেপ্তারের খবর জানান।
গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তি হলেন ২২ বছর বয়সী উমর হায়াত ওরফে 'কাকা', যিনি নিজেও একজন টিকটকার এবং সানার পরিচিত ছিলেন। তাকে ফয়সালাবাদ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। সিসিটিভি ফুটেজ ও মোবাইল ডেটার সহায়তায় তাকে শনাক্ত ও আটক করা হয়।
হায়াত প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছেন। তার কাছ থেকে হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র, ঘটনাস্থলের পোশাক ও সানার মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে।
ঘটনার পরপরই সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, হায়াত হেঁটে স্থান ছাড়ছেন এবং একইসঙ্গে মোবাইলে টাইপ করছেন। তারপর মোটরওয়ে দিয়ে শহর ছেড়ে পালিয়ে যান। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, সানার সঙ্গে তার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল এবং সেই সূত্রেই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হতে পারে।
সানার ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। গত এক বছরে পাকিস্তানে একাধিক নারী কনটেন্ট নির্মাতা হত্যাকাণ্ড, হুমকি ও সহিংসতার শিকার হয়েছেন।
খুশাবে এক টিকটকারকে তার চাচাতো ভাই হত্যা করেন।পেশোয়ারে এক নারী ইনফ্লুয়েন্সারকে সন্দেহজনক অবস্থায় মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।
কোয়েটায়, বাবা নিজ মেয়েকে কেবল সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয় থাকার কারণে হত্যা করেন। এই ধারাবাহিকতা নারী কনটেন্ট নির্মাতাদের প্রতি সহিষ্ণুতার অভাব ও ডিজিটাল স্বাধীনতার প্রতি সামাজিক প্রতিক্রিয়ার ভয়াবহ রূপ তুলে ধরে।
সম্ভাবনার প্ল্যাটফর্ম নাকি নিরাপত্তা সংকট: পাকিস্তানে টিকটক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫ কোটির বেশি। এই প্ল্যাটফর্ম যেমন নতুন প্রতিভার জায়গা হয়ে উঠেছে, তেমনি একাধিকবার “আপত্তিকর কনটেন্ট” এর অভিযোগে নিষিদ্ধও হয়েছে।
এফপি