মক্কা থেকে ১৫ মাইল পূর্বে অবস্থিত একটি প্রান্তরের নাম আরাফা বা আরাফাত। ইসলামের ইতিহাসে আরাফা একটি মর্যাদাপূর্ণ স্থান। কেননা এর উত্তর-পূর্ব কোণে রয়েছে ঐতিহাসিক জাবালে রহমত। যেখানে দাঁড়িয়ে মহানবী (সা.) বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন।
এ ছাড়া আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.) পৃথিবীতে আসার পর এই ময়দানেই পরস্পরকে খুঁজে পেয়েছিলেন। কোরআন-হাদিসের আলোকে আরাফাতের দিবসের মর্যাদা তুলে ধরা হলো।
আরাফাতে অবস্থানের নামই হজ
হজের সময় হাজিরা যেসব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন তার মধ্যে আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এটাকেই হজ বলা হয়েছে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের সঙ্গে এই সালাত আদায় করেছে আর এর আগে আরাফায় অবস্থান করেছে—দিনে বা রাতে, তার হজ পূর্ণ হয়েছে এবং সে তার ইহরাম শেষ করেছে।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৩০৪৪)
শ্রেষ্ঠতম দিন
আরাফার দিন বছরের শ্রেষ্ঠ দিন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর কাছে আরাফাতের দিনের তুলনায় উত্তম কোনো দিন নেই।’ (মাজমাউল জাওয়াইদ, হাদিস : ৩/২৫৬)
আনন্দের দিন
আরাফাতের দিন ঈদ বা আনন্দের দিনের অংশ।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আরাফাতের দিন, কোরবানির দিন এবং তাশরিকের দিনগুলো হচ্ছে ইসলামে আমাদের ঈদের দিন। এই দিনগুলো হচ্ছে পানাহারের দিন।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২৪২১)
ইসলাম পূর্ণতা লাভ করে যে দিন
আল্লাহ ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান করেছেন। আরাফাতের দিন পূর্ণতার এই ঘোষণা আল্লাহ দান করেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বিন পূর্ণাঙ্গ করলাম এবং তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত পরিপূর্ণ করলাম এবং ইসলাম তোমাদের দ্বিন মনোনীত করলাম।’ (সুরা মায়েদা, আয়াত : ৩)
জাহান্নাম থেকে মুক্তির দিন
আরাফাতের দিন সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষ জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করে। রাসুলে আকরাম (সা.) বলেন, ‘আরাফার দিনের মতো আর কোনো দিন এত বেশি পরিমাণে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয় না। এই দিন আল্লাহ দুনিয়ার নিকটবর্তী হন এবং বান্দাদের নিয়ে ফেরেশতাদের কাছে গর্ব করেন। আল্লাহ বলেন, কী চায় তারা?’ (মুসলিম, হাদিস : ১৩৪৮)
রোজা রাখলে বিশেষ পুরস্কার
আরাফাতের দিন একটি রোজা রাখলে আল্লাহ বান্দার দুই বছরের পাপ মোচন করেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আরাফার দিনের (৯ জিলহজের) রোজার বিষয়ে আমি আল্লাহর কাছে প্রত্যাশা রাখি যে তিনি আগের এক বছরের এবং পরের এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১১৬২)
শ্রেষ্ঠতম দোয়া
আরাফাতের দিনের দোয়াকে শ্রেষ্ঠতম আখ্যা দিয়ে নবীজি (সা.) বলেন, শ্রেষ্ঠ দোয়া আরাফাতের দোয়া। দোয়া হিসেবে সর্বোত্তম হলো ওই দোয়া, যা আমি এবং আমার পূর্ববর্তী নবীরা করেছেন। তা হলো—‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, লাহুল মুলক ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শায়ইন কাদির।’ (অর্থ) আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো শরিক নেই, রাজত্ব একমাত্র তারই, সমস্ত প্রশংসাও একমাত্র তার জন্য, আর তিনি সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৮৫)
আল্লাহ সবাইকে নেক আমল করার তাওফিক দিন। আমিন
আরএম/এসএন