প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ইউনূসের ভাষণে ঈদের শুভেচ্ছার পাশাপাশি প্রচ্ছন্ন হুমকির ইঙ্গিত রয়েছে বলে মন্তব্য করেছে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)।
শনিবার (৭ জুন) এক বিবৃতিতে বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ এ মন্তব্য করেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বিচার, সংস্কার, নির্বাচনসহ বিভিন্ন প্রসঙ্গে কথা বলেছেন। সেখানে তিনি বলেন, আগামী বছরের এপ্রিল মাসের প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
বজলুর রশীদ বলেন, ‘আমাদের দল বাসদসহ বাম গণতান্ত্রিক জোট এবং দেশের প্রায় ৫০টির বেশি রাজনৈতিক দল ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়ে আসছিল। অথচ প্রধান উপদেষ্টা বিভিন্ন সময় বলেছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলো যখন চাইবে তখনই নির্বাচন হবে। এবার তিনি একতরফাভাবে এপ্রিল মাসে নির্বাচনের সময় ঘোষণা করলেন।’
তিনি বলেন, ‘একটিমাত্র দলকে সন্তুষ্ট করতে এই তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে বলেই মনে হয়। এতে অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এ ছাড়া এপ্রিল মাসে নির্বাচন হলে আবহাওয়া, এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা, রোজা, তীব্র গরম, বোরো ধান কাটার সময়কাল, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি—সব কিছু মিলিয়ে তা বাস্তবসম্মত নয়। তাই সার্বিক বিবেচনায় ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতেই নির্বাচন হওয়া উচিত ছিল।’
বন্দর বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করে বাসদ জানায়, চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগকে সমর্থন করুন, বিরোধিতা করলে প্রতিহত করুন।
বাসদের ভাষায়, এই বক্তব্য পুরোনো ফ্যাসিবাদের নতুন রূপ বলেই মনে হচ্ছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, চট্টগ্রাম বন্দরের ব্যবস্থাপনা বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেওয়ার বিরোধিতা করেছে বহু রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি ও সামাজিক সংগঠন। এই বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে একতরফা সিদ্ধান্ত গ্রহণ দেশকে গভীর সংকটে ফেলতে পারে।
মায়ানমারের সঙ্গে মানবিক করিডর প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করে বাসদ জানায়, তিনি বিষয়টিকে ‘চিলে কান নিয়েছে’ ধরনের গুজব হিসেবে উড়িয়ে দিয়েছেন। অথচ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের উপদেষ্টা ও জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীও বলেছেন, এটি বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগেই হয়েছে।
বাসদ আরও অভিযোগ করে, প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে শ্রমজীবী মানুষের সংকট, শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি, বন্ধ কারখানা চালুর মতো গুরুত্বপূর্ণ জনজীবন সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয় উঠে আসেনি। বরং বৈদেশিক বিনিয়োগের প্রতি তার আগ্রহ স্পষ্ট।
নির্বাচনের সময় পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়ে ডিসেম্বর ২০২৫ সালের মধ্যেই নির্বাচন আয়োজনের দাবি বাসদ।
আরআর/টিকে
