জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেছেন, “এক-এগারোর সময় আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসানোকে এ দেশের সিভিল সোসাইটি ও বুদ্ধিজীবী সমাজ ‘ঐতিহাসিক জরুরত’ হিসেবে হাজির করেছিল।
সমালোচনা করে করে আওয়ামী লীগকে তারা পথচ্যুত হতে দেবেন না, এ রকমই টগবগে প্রত্যয় ছিল তাদের। বাকিটা ইতিহাস। এখন ওই একই মানসিকতার অ্যাক্টিভিস্ট সমাজ তাদের ‘মৌলবাদ নিধন’ রাজনৈতিক প্রকল্পের অংশ হিসেবে বিএনপিকে ‘ঐতিহাসিক জরুরত’ হিসেবে তার কাঁধে ভর করেছে।
বিএনপির অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে, আমরা সমালোচনা করে ঠিক রাখব বিএনপিকে, এই হলো তাদের সরল প্রত্যাশা।”
আজ শনিবার (১৪ জুন) বিকেলে নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এসব কথা বলেন।
সারোয়ার তুষার তার পোস্টে বলেন, “খেয়াল করার মতো বিষয়, বাংলাদেশের সিভিল সোসাইটি মূলত ক্ষমতাপন্থী। তারা খুব দ্রুত ক্ষমতার হাওয়াটা ধরতে পারেন।
এখনো পারছেন। বিএনপির পক্ষে তাদের লজিক হচ্ছে, খুন-খারাবি, চাঁদাবাজি যা-ই করুক না কেন, তারা ব্যবস্থা তো নিচ্ছে! সুতরাং ভরসা রাখুন! (খোদার ওয়াস্তে তাদের ‘ভরসারা খুন’ না হোক আবার!)।”
তিনি বলেন, “এক-এগারো থেকে গত ১৭ বছর বিএনপিকে বলা হয়েছে ‘মৌলবাদী’ দল। বিএনপি-জামায়াত।
এক পর্যায়ে হয়ে গেল জামায়াত-বিএনপি। বিএনপিকে জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষক, মৌলবাদী কি বলা হয়নি! কিন্তু সেই একই সিভিল সোসাইটি ও অ্যাক্টিভিস্ট সমাজ এখন বিএনপিকে প্রগতিশীলতার ভ্যানগার্ড না বানিয়ে ক্ষান্ত হবে না। এমন না যে তারা তাদের পূর্বতন রাজনৈতিক অবস্থানের থিসিস পরিবর্তন করেছে। তারা তাদের ‘মৌলবাদ দমন’ রাজনৈতিক প্রকল্পের অংশ হিসেবেই বিএনপিকে ঢাল বানাতে চাচ্ছে। আল্লাহ না করুক, এরা যেন বিএনপিকে না ডোবায়।”
তিনি আরো বলেন, ‘বুদ্ধিজীবীদের সাধারণত রাজনৈতিক দলের চেয়ে এগিয়ে থাকতে হয়। বাংলাদেশে দেখা যাচ্ছে উল্টো ঘটনা। বুদ্ধিজীবীরা রাজনৈতিক দলগুলোর চেয়েও পশ্চাৎপদ ও আপসকামী। বুদ্ধিজীবীদের কথা শুনলে দেশ স্বাধীন হতো না, এখন যা বলছেন শুনলে দেশে কোনো আমূল পরিবর্তন হবে না। বলেছিলেন আহমদ ছফা। এখন আমাদের বলতে হয় : বুদ্ধিজীবীদের কথা শুনলে এ দেশে গণ-অভ্যুত্থান হতো না। এখন যা বলছেন তা শুনলে দেশে মৌলিক সংস্কার হবে না। তারা নিজেদের সঙ্গে সঙ্গে বিএনপিকে নিয়ে না ডুবলেই হয়।’
এনসিপির এ নেতা বলেন, ‘সিভিল সোসাইটি ও বুদ্ধিজীবীদের যে অংশ চব্বিশের ৭ জানুয়ারির আগে বিএনপিকে স্যাংশন মুখাপেক্ষী করেছিল, যার ফলে বিএনপির সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছে; সেই একই বুদ্ধিজীবীরা এখন বিএনপিকে সংস্কার বিমুখ করে নির্বাচনবাদী রাজনীতির লাইনে নিয়ে গেছেন।’
তিনি বলেন, ‘গত ১০ মাসে বাংলাদেশে নির্বাচন নিয়ে এক সেকেন্ডের জন্যও কোনো অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়নি। পুরোটাই মিডিয়ার বানানো গল্প। নির্বাচন হতোই। হচ্ছেই। কিন্তু এই পশ্চাৎপদ ও মৌলিক পরিবর্তন-বিরোধী বুদ্ধিজীবী সমাজ বিএনপিকে একটা ঐতিহাসিক সুযোগ থেকে দূরে সরিয়ে রাখছে। এদের কারণে বিএনপি ইতিহাসের ডাকটা ধরতে পারছে না। এর ফলে সবচেয়ে বড় ক্ষতির শিকার হবে বিএনপি নিজেই। আর এসব বুদ্ধিজীবী খুব দ্রুতই ভোল পাল্টে ফেলবেন।’
সারোয়ার তুষার বলেন, ‘মৌলিক সংস্কার তথা রাষ্ট্রের স্বৈরতান্ত্রিক ভিত্তিকে নির্মূল করে একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অধীন সংসদ নির্বাচনের প্রশ্নে সম্মত হয়ে বিএনপি ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকতে পারত। কিন্তু সে পথে না গিয়ে রক্ষণশীল বুদ্ধিজীবীদের খপ্পরে পড়া বিএনপি এই গণ-অভ্যুত্থানকে স্রেফ একটা ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়ে সংকুচিত করতে চাচ্ছে। সংস্কার হয়ে নির্বাচন হলে বিএনপির কোনো ক্ষতি হতো না; দেশের লাভ হতো।
সংস্কারহীন নির্বাচনের ফলে দেশের ক্ষতির পাশাপাশি বিএনপির জন্যও তা আত্মঘাতী হতে যাচ্ছে। আজকে দুধের মাছি ওই সব বুদ্ধিজীবীকে তেল চুকচুকে কথাই বিএনপির কানে শ্রুতিমধুর লাগবে জানি। আমাদের কথা তিতা মনে হবে। কিন্তু ইতিহাসের শোধ বড় নির্মম হয়।’
এসএম/টিকে