গত দুই দিন ধরে বিএনপি ও গণ অধিকার কর্মীদের মধ্যে টানটান উত্তেজনার মধ্যে শুক্রবার (১৩ জুন) সকাল ৮টা থেকে ১৫ জুন সকাল ৮টা পর্যন্ত গলাচিপা ও দশমিনায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।
শুক্রবার বিএনপি ও গণ অধিকার পরিষদের আলাদা আলাদা বিক্ষোভ মিছিলের ঘোষণা দেয়। পরিস্থিতি অবনতি হলে প্রশাসন কঠোর অবস্থায় চলে যায়। এর পর গলাচিপা উপজেলা বিএনপি তাদের ঘোষিত কর্মসূচি থেকে সরে আসে।
অন্যদিকে অবরুদ্ধ ও গলাচিপা-দশমিনায় গণ অধিকার পরিষদের অফিস ভাঙচুর ও হামলার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেন গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর।
এদিকে শনিবার (১৪ জুন) দুপুরে নুরুল হক নূর তার গ্রামে বাড়ি চরবিশ্বাস চলে যান। বিএনপি কর্মীরা বৃহস্পতিবার রাতে চরকাজল ও চরবিশ্বাস ইউনিয়নের দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর ও হামলা চালায়। শনিবার দুপুরে আহতদের দেখতে ও দলীয় কার্যালয় ঘুরে দেখেন নুরুল হক নুর।
এসময় তিনি বলেন, বিএনপি নেতা হাসান মামুনের সন্ত্রাসী বাহিনী চরকাজল ইউনিয়নে রবিবারের বাজারের গণ অধিকারের দলীয় কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। গলাচিপা-দশমিনায় গণ অধিকারের ১৭টি অফিস ভাঙচুর করেছে। দেশবাসীকে আমি দেখানোর জন্যই অফিসগুলো ভিজিট করছি।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- চরকাজল ইউনিয়ন গণ অধিকারের আহ্বায়ক আনিসুর রহমান দফাদার, গণ অধিকারের কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক খাইরুল আমিন, চরবিশ্বাস ইউনিয়নের আহ্বায়ক মুজাম্মেল হক সর্দার প্রমুখ।
এদিকে এ হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা অস্বীকার করেছে গলাচিপা উপাজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার মশিউর রহমান। তিনি বলেন, আমাদের কোনো কর্মী গণ অধিকার কার্যালয়ে হামলা চালায়নি। উল্টো উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য নুরুল হক নুরই দায়ী।
উল্লেখ্য, গত বুধবার (১১ জুন) গলাচিপা অফিসার্স ক্লাবে ছাত্র অধিকার পরিষদের নবগঠিত কমিটির পরিচিতি সভায় গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর তার বক্তব্যে বলেন, ভিপি নুরের জন্ম না হলে ২৪-এর গণ অভ্যুত্থান হতো না। ওই বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, বন্যাতলী-মাটিভাঙ্গা সড়কের কাজ বিএনপির ঠিকাদার না করে ফেলে রেখেছে।
যার কারণে মানুষের চলাচলে ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে। নুরের এমন বক্তব্যে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
এর প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার (১২ জুন) বিকালে গলাচিপা শহরে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল সাবেক ভিপি নুরের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। পরে ওই দিন রাত ৮টার দিকে গলাচিপা উপজেলার চরবিশ্বাস ইউনিয়নের বিএনপি কার্যালয় ও গণ অধিকারের পূর্ব নির্ধারিত সভা চলছিল। ওই সভাকে কেন্দ্র করে হাসান মামুন ও নুরের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় দলের নেতাকর্মীরা আহত হয়।
এসময় নুরের নেতাকর্মীরা বিএনপির অফিস ভাংচুর করে পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এর পর ওই রাতেই নুর উপজেলার বকুলবাড়িয়া ইউনিয়নে গণ অধিকার পরিষদের আহবায়ক মরহুম বাদল মাতবরের শোক সভায় অংশগ্রহণ করেন। চরবিশ্বাস ইউনিয়ন বিএনপি অফিস ভাঙচুরের খবর পেয়ে বকুলবাড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা নুরের বিরুদ্ধে মুহুর্মুহু স্লোগান দেয় এবং নুরকে রাত ২টা পর্যন্ত অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে নুরকে গলাচিপা শহরে নিয়ে আসে।
এ ঘটনার পর থেকেই শুক্রবার (১৩ জুন) সকাল ৮টা থেকে রবিবার (১৫ জুন) সকাল ৮টা পর্যন্ত উপজেলা প্রশাসন এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ১৪৪ ধারা জারি করেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসান বলেন, পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক আছে। আর কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
আরআর