জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয়কর অনুবিভাগের রাজস্ব পর্যালোচনা সভায় সরাসরি ও ভার্চুয়ালি দেওয়ার কথা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। তবে আজ রবিবার আয়োজিত এই সভায় ভার্চুয়ালি যোগ দেওয়া আইডিতে যুক্তরাষ্ট্রের ধনকুবের ইলন মাস্ক, তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতি, মায়ের দোয়া স্যানিটারিসহ বিভিন্ন নাম দেখা গেছে।
মূলত সভায় বেশি লোকের উপস্থিতি দেখাতেই এমনটা করা হয়েছে বলে মনে করছেন আয়কর কর্মকর্তারা। সভায় এমন আরো অনেক আইডি থেকে সভায় যোগ দেওয়া হয়েছে, যাদের বাস্তবে কোনো অস্তিত্ব নেই।
আইডিতে স্যামসাং ফোনের বিভিন্ন মডেলের নাম, বিভিন্ন সালের নাম ও নানা ধরনের সংখ্যা দিয়ে সভায় অংশগ্রহণ করতে দেখা গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘অধ্যাদেশ বাতিলসহ চারটি দাবিতে এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিল। সরকারি আশ্বাসে কর্মসূচি স্থগিত করা হলেও চেয়ারম্যানকে অপসারণ বিষয়ে কোনো কথা বলা হয়নি। এরপর চেয়ারম্যানকে অসহযোগিতার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সশরীরে ঢাকার বিভিন্ন কমিশনার সভায় অংশ নিলেও মাঠ পর্যায়ে অসন্তোষ আছে। তাই জুমে বেশি উপস্থিতি দেখাতেই এমনটা করা হয়েছে।’
তারা আরো বলেন, ‘পরে দেখা গেছে মিটিংয়ে ইলন মাস্কও উপস্থিত! চার শর বেশি অংশগ্রহণকারীর সিংহ ভাগই ভুয়া। তাদের আয়কর বিভাগের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই।’
সভায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মে মাস পর্যন্ত আয়কর খাতে আদায়ের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। জানা গেছে, অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৮০৫ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে এ সময়ে আদায় হয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ১৯৬ কোটি টাকা।
গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৪ দশমিক ৩০ শতাংশ। অন্যদিকে অর্থবছরের মে মাসে আদায় হয়েছে মাত্র ১০ হাজার ১৩০ কোটি টাকা।
সভায় এনবিআর চেয়ারম্যান অর্থবছর শেষ হওয়ার আগে শেষ ১৫ দিনে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ের নির্দেশনা দেন।
সভা সূত্রে জানা গেছে, প্রতি মাসে অনুষ্ঠিত রাজস্ব পর্যালোচনা সভায় রাজস্ব আদায় কম হলেই কর্মকর্তাদের প্রতি কঠোরতা দেখাতেন চেয়ারম্যান। তবে এবারের সভায় রাজস্ব আদায়ে ধস হলেও নমনীয় আচরণ করেছেন তিনি।
এনবিআর কর্মকর্তারা বলেন, ‘চেয়ারম্যানকে অপসারণ না করা পর্যন্ত তাকে অসহযোগিতা করা হবে। তিনি প্রথমে এনবিআরে আসতে সেনাবাহিনী-পুলিশ ব্যবহার করেছেন। কর্মকর্তারাও তার কথা শুনছেন না। তিনিও কিছু বলতে পারছেন না। সামগ্রিকভাবে চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়েছে। এমন অবস্থায় তাকে দায়িত্বে রাখা রাজস্ব খাতের জন্য ভালো হবে না।’
সামগ্রিক বিষয়ে জানতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানকে ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
পিএ/টিএ