যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক নিয়ে গাত্রদাহ হওয়া উচিত ছিল না। তিনি যদি দেশে থাকতেন তাহলে দেশেই তার সঙ্গে বৈঠক হতো বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি।
রবিবার (১৫ জুন) রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার পরিপূর্ণ সুস্থতা ও দলের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামালের আশু রোগমুক্তি কামনায় মাহফিলের আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী ওলামা দল।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, গত ১৩ তারিখে প্রধান উপদেষ্টা ও তারেক রহমানের বৈঠক বলে দেয়, সেখানে আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পরামর্শ ছিল। বৈঠকটি সুন্দরভাবে হয়েছে। যৌথ বিবৃতিতে বাংলাদেশের কথা, জনগণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
লন্ডনে যে বৈঠক হয়েছে, আমি মনে করি এটা নিয়ে গাত্রদাহ হওয়া উচিত ছিল না।
এটা নিয়ে বক্তব্য দিব তারও প্রয়োজন ছিল না। কেন, কোন প্রেক্ষাপটে তারেক রহমান দেশের বাইরে? প্রফেসর ড. ইউনূস যখন দায়িত্ব নিয়েছেন তখন জাতিসংঘে গিয়েছিলেন। সেখানে জুলাই আগস্ট এর আন্দোলনে যারা নেতৃত্ব দিয়েছিল তাদের প্রশংসা করেছেন। এবং আন্দোলন সংগ্রামে যে তারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন, সে কথাটি ব্যক্ত করেছেন।
আমরা দেশে বসে এর কোনো প্রতিবাদ করি নাই। আন্দোলন সংগ্রাম আমরাও করেছি। গত ১৫-১৬ বছর আমাদের ত্যাগ স্বীকার, আমাদের কষ্ট, শ্রম-ঘাম, নেতা-কর্মীরা গুম হয়েছে, শহীদ হয়েছে, নির্যাতিত হয়েছে। আমরা জেলে ছিলাম, মামলা খেয়ে আমরা বাসাবাড়িতে থাকতে পারি নাই।
আমরা অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করেও এই আন্দোলন থেকে সরে যাই নাই।
আমরা আন্দোলনের সঙ্গে ছিলাম বীর দর্পে। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বেই ছিলাম তারেক রহমানের নেতৃত্বে ছিলাম। তার নির্দেশনায় ছিলাম।
তাহলে কোন প্রেক্ষাপটে তিনি দেশের বাইরে আছেন? এটাও তো বলার কোনো প্রয়োজন নাই। তাহলে একটা বৈঠক দেশের বাইরে হয়েছে, এটার জন্য কেনো কৌশলী হয়ে এত কথা বলতে হবে? কারণ আমরা তো আন্দোলন করেছি একটা টার্গেটে পৌঁছাতে। সবাই মিলে আন্দোলন করেছি।
সবাই মিলে আন্দোলন করেছি ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে, সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার জন্য। আগামীর বাংলাদেশকে নতুনভাবে নির্মাণ করার জন্য।
বিএনপির এই নেতা বলেন, জামায়াতের আমির সাহেব ও আমরা একসঙ্গে জেলে ছিলাম। কাশিমপুরে একসঙ্গে জেল খেটেছিলাম দীর্ঘদিন। আমরা তার সঙ্গে সার্বক্ষণিক কথাবার্তা বলেছি, আন্দোলন সংগ্রামের কথা বলেছি। জেলখানায় একসঙ্গে খেয়েছি, নামাজ পড়েছি। ২৮ তারিখে আমরা সবাই জেলে ছিলাম। তখন অনেকেই বাইরে ছিলেন। তখন আমরা জেলখানায় বসে প্রতিনিয়ত দেখেছি আন্দোলনে কার ভূমিকা কি ছিল।
জামাতের আমির সাহেব যখন বলেন, ‘ওই বৈঠকে একটা দলের প্রতি অনুরাগ ছিল।’ জামায়াতের নেতৃবৃন্দের সাথে প্রধান উপদেষ্টা কয়েকবার বৈঠকে বসেছেন। এককভাবে বৈঠক করেছেন। সকল রাজনৈতিক দল নিয়েও বৈঠক করেছেন। সেখানে তো আমরা কোনো কথা বলি নাই।
বাংলাদেশের এমন একটা প্রেক্ষাপটে বৃহত্তর জনগোষ্ঠী, বাংলাদেশের মানুষের গণতন্ত্র, সংস্কার, বিচার, নির্বাচন সবকিছুর সঙ্গেই এই বৈঠক জড়িত।
দেশের ভিতরে যেমন বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ ছিল, দেশের বাইরেও বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সেই বৈঠকগুলোতে তারেক রহমান সাহেব থাকতে পারেন নাই। তারেক রহমান যদি দেশে থাকতেন তাহলে দেশেই তো তার সঙ্গে বৈঠক হতো। তাহলে এই বৈঠক নিয়ে, কেউ-কেউ দ্বিমত পোষণ করবেন, এটা গণতন্ত্রের জন্য শোভা পায় না।
ওলামা দলের আহ্বায়ক মাও. কাজী মো. সেলিমের সভাপতিত্বে সদস্য সচিব মাও. আবুল হোসেনের সঞ্চালনায় এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-ধর্মবিষয়ক সম্পদক এ টি এম আব্দুল বারি ড্যানী প্রমূখ।
আরএম/টিএ