বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী জেলা বরগুনাকে ডেঙ্গুর ‘হটস্পট’ ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। বরগুনা সদর হাসপাতালের ডেঙ্গু রোগীদের চাপে পা ফেলার জায়গা নেই। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেগুলোতেও দিন দিন বাড়ছে রোগীর সংখ্যা।
বরগুনা সদর হাসপাতালে শয্যার অন্তত চারগুণ রোগী হাসপাতালে ভর্তি থাকায় সেখানকার সেবা নিয়ে উঠছে নানা অভিযোগ।
আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা বিবেচনায় শহরের বেশ কয়েকটি স্পট মশার আঁতুড়ঘর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে জেলার গুরুত্বপূর্ণ সেই আঁতুড়ঘরের মশা তাড়াতে বেশ কিছু কার্যক্রম হাতে নিয়ে অন্তত ৩০টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তারই অংশ হিসেবে বরগুনার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জল তরণীর আয়োজনে বিডি ক্লিনের সহযোগিতায় সোমবার সন্ধ্যায় মশা দমনে ধূপ থেরাপি শুরু করেছেন।
সোমবার (১৬ জুন) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে পৌর শহরের নাথপট্টি লোকে স্বেচ্ছাসেবীরা জড়ো হন।
সেখানে প্রতীকি মশারি ব্যবহারের মাধ্যমে ডেঙ্গুর আক্রমণ থেকে মুক্তির উপায় তুলে ধরা হয়।
অংশগ্রহণকারীরা হাতে হাতে বালতি ভর্তি ধূপ নিয়ে তাতে ধোঁয়া সৃষ্টির মাধ্যমে মশা তাড়ানোর কৌশল দেখান। একপর্যায়ে অংশগ্রহণকারীরা ধূপ নিয়ে পৌর এলাকার বাজার রোড, ব্রাঞ্চ রোড এবং সরকারি কলেজ রোড প্রদক্ষিণ করে। এভাবে জনসাধারনণকে সচেতন করে আবার নাথপট্টি লোকে জড়ো হন।
জল তরণীর পরিচালক পরিবেশকর্মী আরিফুর রহমান বলেন, বাড়ি বাড়ি গিয়ে মশার আঁতুড়ঘর চিহ্নিত করছেন। সেই আঁতুড়ঘর ধ্বংস করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। স্থানীয়রা যাতে তাদের বাড়ির আশপাশ নিয়মিত পরিষ্কারের পাশাপাশি মশা দমনে ধূপ জ্বেলে রাখেন, সে বিষয়ে সচেতন করা হচ্ছে। ধূপ থেরাপির ফলে মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে সাফল্য আসবে।
তিনি আরো বলেন, গত দুই মাস বরগুনাবাসীদের আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে মশা, তা এই ধূপ থেরাপির ফলে দূর হবে।
একইসঙ্গে কমে আসবে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। হ্রাস পাবে রোগী মৃত্যুর হার। ইতোমধ্যেই অন্তত ১০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
বিডি ক্লিন বরগুনার সমন্বয়ক নাঈম ইসলাম বলেন, পৌর শহরের কাঠপট্টি খাল, আমতলা খাল, ব্রাঞ্চ রোড, লাকুরতলা, মনষাতলী, থানাপাড়া, চনকলনী, কেজি স্কুল মশার আঁতুরঘর। এই স্পটগুলোতে জল তরণী ও বিডি
ক্লিনের কার্যক্রম অব্যহত থাকবে। ফলে মশার বিস্তার কমবে। একইসঙ্গে কমবে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যাও।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. রেজোয়ান আলম একমত প্রকাশ করে বলেন, ৫০টি শয্যায় মশারি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু হাতে গোনা কয়েকজন সেটি সবসময় ব্যবহার করছেন। তবে বেশির ভাগ রোগীর শয্যায় মশারি থাকলেও তারা দিনে তো দূরের কথা রাতেও সেটি ব্যবহার করেন না। শয্যার সঙ্গে অধিকাংশ রোগীর মশারি গুটানো থাকে।
তিনি আরো বলেন, নার্স থেকে শুরু করে চিকিৎসকরা সবসময় রোগী ও তাদের স্বজনদের সচেতন করে যাচ্ছেন। কিন্তু কিছুতেই তারা মশারি ব্যবহার করছেন না। এ বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু রোগীরা সচেতন নয়। বিষয়টা আরো কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে।
বরগুনা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আবুল ফাত্তাহ বলেন, রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)-এর ৬ সদস্যের প্রতিনিধি দল বরগুনায় অবস্থান করছেন সংক্রমণের কারণ অনুসন্ধানে। প্রতিনিধি দল ডেঙ্গু সংক্রমণের উৎস, পরিবেশ ও রোগ নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা পর্যালোচনা করছেন।
পিএ/টিএ