জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আয়োজিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় শুরু হওয়া সংলাপে যাচ্ছে না জামায়াতে ইসলামী।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের মুলতবি অধিবেশনে সংলাপ শুরু হলেও জামায়াতের কোনো প্রতিনিধিদল যোগ দেয়নি। দলীয় সিদ্ধান্তেই আজকে সংলাপে জামায়াতে ইসলামী অংশ নেয়নি বলে জানা গেছে।
দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের দেশের একটি গণমাধ্যমকে জানান, মঙ্গলবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের মুলতবি অধিবেশনে সংলাপ শুরু হলেও অংশ নেয়নি জামায়াতে ইসলামীর কোনো প্রতিনিধিদল।
অংশগ্রহণ করা হবে কিনা তা আগামীকাল বুধবার (১৮ জুন) দলীয়ভাবে জানানো হবে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপের শুরু থেকেই নেতৃত্ব দিয়ে আসছিল জামায়াত ইসলামের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তিনি আগামীকাল বিষয়টি জানাবেন।
লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠককে সাধুবাদ জানানো হলেও জামায়াত যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণাকে ইতিবাচক হিসেবে নেয়নি। বরং একটি দলের সঙ্গে বৈঠক-যৌথ প্রেস ব্রিফিংকে প্রধান উপদেষ্টার নিরপেক্ষতা-সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছে জামায়াত।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের এক বৈঠক সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গত ১৪ জুন (শনিবার) সকালে জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়।
এরপরই এক বিবৃতিতে জামায়াতে ইসলামী জানায়, লন্ডনে বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতি বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির ব্যত্যয়।
ওইদিন দলটির কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগ সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে জামায়াতে ইসলামী জানায়, “১৩ জুন লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মাদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এটাকে খুবই স্বাভাবিক মনে করে। ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে পৃথক পৃথকভাবে এবং যৌথভাবে বৈঠক করেছেন।
তিনি বিগত ৬ জুন জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেন। তার এই ঘোষণার পর লন্ডনে সফরকালে একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিদেশে যৌথ প্রেস ব্রিফিং এবং বৈঠকের বিষয় সম্পর্কে যৌথ বিবৃতি দেওয়া বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির ব্যত্যয় বলে আমরা মনে করি। এর মাধ্যমে তিনি একটি দলের প্রতি বিশেষ অনুরাগ প্রকাশ করেছেন, যা তার নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন করেছে।
আমরা মনে করি দেশে ফিরে এসে প্রধান উপদেষ্টার অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে এব্যাপারে তার অভিমত প্রকাশ করাই সমীচীন ছিল।
জামায়াতে ইসলামী মনে করে, সরকারপ্রধান হিসেবে কোনো একটি দলের সাথে যৌথ প্রেস ব্রিফিং নৈতিকভাবে কিছুতেই যথার্থ নয়। প্রধান উপদেষ্টা একটি দলের সঙ্গে বৈঠকের পর যৌথ প্রেস ব্রিফিং করায় আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হওয়ার বিষয়ে জনগণের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। যেখানে বাংলাদেশে অনেকগুলো রাজনৈতিক দল সক্রিয়ভাবে বিদ্যমান, সেখানে শুধু কোনো একটি দলের সঙ্গে আলাপ করে দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সঠিক বলে বিবেচিত হতে পারে না।
আমরা আশা করি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিরপেক্ষ থেকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করবেন এবং বিচার ও সংস্কারের ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত করবেন।
আরআর/এসএন