বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেছেন, ছাত্রদলই একমাত্র ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে এককভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। কিন্তু দেশের অন্য কোনো সংগঠন এমন দৃষ্টান্ত দেখাতে পারেনি। আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পরিষ্কার। যারা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে কথা বলে কিন্তু গোপনে তাদের পুনর্বাসনে লিপ্ত রয়েছে, তাদের বলতে চাই—এই ভূমিকা ছাত্রসমাজ মনে রাখবে। আমরা শুধু ছাত্রলীগের বিচার নয়, বাংলাদেশের যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা সরাসরি ফ্যাসিবাদের পক্ষে ছিলেন, আমরা তাদেরও বিচার চাই।
আজ সোমবার (২৩ জুন) ঢাকা কলেজের শহীদ আ.ন.ম নজীব উদ্দীন খান খুররম অডিটোরিয়ামে ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সদস্য সংগ্রহ ফরম পূরণ ও বিতরণ কর্মসূচির অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক পিয়াল হাসানের সভাপতিত্বে এবং সদস্যসচিব মিল্লাদ হোসেনের সঞ্চালনায় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ও কলেজ শাখার নেতৃবৃন্দ এই কর্মসূচিতে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন।
ছাত্রদল সভাপতি বলেন, জুলাই-আগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশে ছাত্রসমাজের প্রধান দাবি ছিল—বিগত ১৫ বছরে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের যে সকল সন্ত্রাসীরা সন্ত্রাসী রাজত্ব কায়েম করেছিল, সাধারণ শিক্ষার্থীদের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছিল, নারীদের সম্মানহানি ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় যারা জড়িত—তাদের বিচার করা ছিল সবচেয়ে প্রধান দাবি। বিশেষ করে এই জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা কলেজসহ সকল ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ যে বর্বর হামলা চালিয়েছিল, সেই সকল সন্ত্রাসীদের বিচারের দাবিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি পালন করেছে। কিন্তু যারা জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের ক্রেডিট চুরি করেছে, তারা কেউ ছাত্রলীগের বিচারের দাবিতে সোচ্চার নেই। আজকে ছাত্রলীগ দেশের বিভিন্ন জায়গায় মিছিল ও বোমাবাজি করার মতো দুঃসাহস দেখায় মাত্র এক বছরের বাস্তবতায়।
ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের অবদান নিয়ে সভাপতি বলেন, বিগত সাড়ে পনেরো বছরে ঢাকা কলেজ ছাত্রদল ছাত্ররাজনীতি ও শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে এবং করতে গিয়ে ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাস বারবার রক্তাক্ত হয়েছে। ঢাকা কলেজের বিভিন্ন নেতাকর্মীর ওপর হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করা হয়েছে এবং তাদের স্বাভাবিক শিক্ষা জীবন ব্যাহত হয়েছে। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে ঢাকা কলেজ ছাত্রদল সায়েন্সল্যাব, নীলক্ষেত মোড়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। জুলাই আন্দোলন চলাকালে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়, তখন এই এলাকায় আমাদের নির্দেশে ঢাকা কলেজ ছাত্রদল অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। সত্যিকার অর্থেই জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে শুধুমাত্র বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদ, ঢাবি ও ঢাকা কলেজ—সমগ্র দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা সর্বাগ্রে ভূমিকা পালন করেছিল।
ছাত্রসংসদ নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, আমরা ডাকসু, জাকসুসহ দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রসংসদ নির্বাচন চাই। সেখানে আমরা অবশ্যই অংশগ্রহণ করব। আমরা কীভাবে অংশগ্রহণ করব, সেটা আমাদের বিষয়। আমরা আমাদের মতো করে অংশগ্রহণ করব। কিন্তু একটি বিষয় স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই—যদি ছাত্রলীগের বিচার না হয় এবং শিক্ষকদের বিচারের আওতায় না আনা হয়, সেই আলোকে যদি ছাত্রসংসদ নির্বাচন পরিচালনা করা হয়, তবে এটি ইতিহাসে লেখা থাকবে ছাত্রলীগের পুনর্বাসনের ক্ষেত্র হিসেবে হয়তো এই ছাত্রসংসদ বিবেচিত হবে। যারা জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে গড়ে ওঠা ঐক্য বিনষ্ট করছে এবং যারা নিজের দল গঠনে ও নিজেদের স্বার্থে সময় অতিবাহিত করছে, তারা এককভাবে দায়ী। আমাদের ছাত্রলীগের পুনর্বাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকতে হবে।
ছাত্রদলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে রাকিব বলেন, আমাদের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য হলো—উৎপাদনশীল ও কর্মমুখী তরুণ সমাজ প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্রের সহায়ক ভূমিকা পালন করা, সার্টিফিকেটনির্ভর শিক্ষা থেকে কর্মমুখী শিক্ষায় অগ্রসর হওয়া, শিক্ষা খাতে বাজেট বৃদ্ধি ও ক্যাম্পাসগুলোতে গবেষণা খাতে বাজেট বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করা, নারী শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে মর্যাদা রক্ষার কথা মাথায় রেখে শিক্ষানীতি প্রণয়নে সহায়তা করা, ক্যাম্পাসগুলোতে ক্রীড়া কার্যকলাপ বৃদ্ধি, সুস্থ ধারার দেশীয় সংস্কৃতি বিকাশ, লাইব্রেরির মান ও সংখ্যা বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীসহ বাংলাদেশের সকল গোষ্ঠীকে নিয়ে একত্রে কাজ করা।
পিএ/টিকে