ইরান-ইসরাইল যুদ্ধের কারণে হরমুজ প্রণালী বন্ধের হুমকির মুখে থাকলেও আগামী ৪৫ দিন বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের কোনো সংকট হবে না। এ মুহূর্তে ৩২ দিনের ডিজেল এবং ফার্নেস অয়েল, ১২ থেকে ১৫ দিনের অকটেন-পেট্রল ও জেট ফুয়েলসহ অন্যান্য জ্বালানি তেলের মজুত গড়ে তুলেছে বাংলাদেশ।
চলতি মাসে বন্দরে ভিড়বে তেলবাহী আরও কয়েকটি জাহাজ। তবে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে তেলের দাম বাড়ার শঙ্কায় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির ইঙ্গিত দিলেও ইরান তা অস্বীকার করেছে।
ইরানের ওপর ইসরাইলের বর্বরোচিত হামলায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পুরো মধ্যপ্রাচ্য। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ইরানে মার্কিন হামলাকে ঘিরে নতুন উত্তেজনা। জবাবে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে ইরানও।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, ‘ইরান ও ইসরাইল পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে। এই যুদ্ধবিরতি একপর্যায়ে চলমান সংঘাতকে অবসানের পথে নিয়ে যাবে।’
এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলে, শঙ্কা কমবে হরমুজ প্রণালী বন্ধ হওয়ার। এতে স্বাভাবিক থাকবে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল। তবে ট্রাম্পের এই ঘোষণাকে আঞ্চলিক উত্তেজনার মধ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে দেখা হলেও এখনো পর্যন্ত কোনো যুদ্ধবিরতির চুক্তি হয়নি জানিয়ে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেছেন, ইসরাইল অবৈধ হামলা বন্ধ করলে তেহরানেরও হামলা চালিয়ে নেয়ার আর ইচ্ছা নেই।
আর এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য আসেনি ইসরাইলের কাছ থেকেও। তাই হরমুজ প্রণালী নিয়ে চলমান উত্তেজনা নিয়ে শঙ্কা থেকেই যায়।
এ অবস্থায় বহুল আলোচিত এবং আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ নৌরুট হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেয়ার প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে ইরান। যাতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে জ্বালানি তেলের সংকট সৃষ্টির শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
তবে আগে থেকেই বাংলাদেশ পর্যাপ্ত জ্বালানি তেলের মজুত রাখায় কিছুটা চিন্তামুক্ত বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। বিশেষ করে সৌদি আরব থেকে মাসে এক লাখ মেট্রিক টন ক্রুড অয়েল আনতে হয় বাংলাদেশকে। এক্ষেত্রে হরমুজ প্রণালী বন্ধ হয়ে গেলেও বিকল্প হিসেবে রয়েছে আরব আমিরাতের ফুজিয়ারা বন্দর।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো. আমিন উল আহসান বলেন, মাঝে মাঝে আমিরাতের ফুজিয়ারা বন্দর থেকেও লোড হয় আমদানি করা ক্রুড অয়েল। তাই হরমুজ প্রণালী বন্ধ হলেও এই বন্দরটি ব্যবহার করা যাবে।
বাংলাদেশের ক্রুড অয়েল সৌদি আরব এবং এলএনজি ও এলপিজি কাতার থেকে হরমুজ প্রণালী হলেও আসলেও এক্ষেত্রে পরিশোধিত জ্বালানি তেল হিসেবে পরিচিত অকটেন-পেট্রোল-ডিজেল-ফার্নেস অয়েল এবং জেট ফুয়েল আমদানি হয় দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশ ইন্দোনেশিয়া-মালেয়শিয়া-থাইল্যান্ড এবং সিঙ্গাপুর থেকে। তাই ক্রুড অয়েল অন্যান্য গ্যাস জাতীয় জ্বালানি আমদানিতে বিকল্প দেশ খোঁজার পরামর্শ চট্টগ্রাম নৌ বাণিজ্য অধিদফতর প্রিন্সিপাল অফিসার (রুটিন চার্জ) ক্যাপ্টেন এসএম জালাল ইউ গাজীর।
তিনি বলেন, হরমুজ প্রণালী বন্ধ হলে সৌদি আরব তাদের বিকল্প রেখেছে। তারা রেড সি দিয়ে রফতানি করতে পারে। তবে কাতারের গ্যাসের ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা হতে পারে। সেজন্য এখনই বিকল্প উৎস খোঁজা শুরু করা দরকার।
বিপিসির তথ্য অনুযায়ী, এই মুহূর্তে বাংলাদেশে ৩২ দিনের মজুত হিসাবে ৩ লাখ ৭২ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল, ১২ দিনের ১২ হাজার মেট্রিক টন অকটেন, ১৩ দিনের ১৬ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন পেট্রোল, ৩১ দিনের ৫১ হাজার মেট্রিক টন জেট ফুয়েল এবং ২৯ দিনের ৫১ হাজার মেট্রিক টন ফার্নেস অয়েল মজুত রয়েছে।
তবে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো. আমিন উল আহসান বলেন, যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে জাহাজ ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার শঙ্কা রয়েছে।
বিপিসি বলছে, আগামী একমাসের মধ্যে জ্বালানি তেলবাহী আরও অন্তত ৯টি জাহাজ ভিড়বে চট্টগ্রাম বন্দরে। যার মধ্যে রয়েছে ২৭ হাজার মেট্রিকটন অকটেন, ২৫ হাজার মেট্রিক টন ফার্নেস অয়েল, ১ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল ও ১০ হাজার মেট্রিক টন জেট ফুয়েল।
বছরে বাংলাদেশে ১৫ লাখ মেট্রিক টন ক্রুড অয়েল এবং ৪৫ লাখ মেট্রিক টন পরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদা রয়েছে। এক্ষেত্রে সংকট এড়ানোর পাশাপাশি মজুত অটুট রাখতে জ্বালানি তেল ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়ার কোনো বিকল্প দেখছেন না সংশ্লিষ্টরা। মেঘনা পেট্রোলিয়ামের সাবেক মহাব্যবস্থাপক আকতার কামাল বলে, জ্বালানি তেল ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। বর্তমানে ৪৫ দিন মজুতের সক্ষমতা রয়েছে। এটি আরও বাড়াতে হবে।
আরএম/এসএন