বিএনপি ক্ষমতায় গেলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নেওয়া হবে: এ্যানী

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন দলটির যুগ্ম মহাসচিব শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী।

তিনি বলনে, দুর্নীতি, দুঃশাসন আমাদের সমাজ ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে দেশের প্রশাসনের লাল ফিতার দৌরাত্ম্য দেখে আসছি কম-বেশি। সমাজের কিছু ব্যক্তি অথবা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা এই ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়েছে বিধায় দুর্নীতি বেড়েছে। কিন্তু গত ১৭ বছরে দুর্নীতি ছিল আকাশচুম্বী। হাজার-হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে।

এটা যদি আমরা সবাই মিলে রোধ করতে না পারি তাহলে আজকে বাংলাদেশ যে খাদের কিনারায় চলে গেছে... এখান থেকে উদ্ধার হতে হলে দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে।

বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

এ্যানী বলেন, আমরা বিএনপির ৩১ দফায় উল্লেখ করেছি- দুর্নীতি বন্ধ করার জন্য কঠিন পদক্ষেপ নিতে হবে। দুর্নীতি দূর করতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা এখন থেকেই কাজ শুরু করেছি। এটা বিএনপির জন্য একটা কঠিন চ্যালেঞ্জ। এই কঠিন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি।

শুধু প্রশাসনে নয়, তার বাইরে যাতে কেউ দুর্নীতি করতে না পারে এবং তা নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ কঠিন ভূমিকা নেবে বিএনপি।

আগামী নির্বাচনে কারা বিএনপির মনোনয়নের জন্য উপযুক্ত হবেন, এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শহীদউদ্দিন এ্যানী বলেন, আমাদের দলের স্থায়ী কমিটি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং চেয়ারপারসনের পরামর্শ নিয়ে দল পরিচালিত হচ্ছে। তাদের কাছে অনুরোধ করেছি- সারা দেশে নিজস্ব জরিপের মধ্য দিয়ে যিনি সবচেয়ে জনপ্রিয়, এলাকায় নির্বাচন করার জন্য উপযোগী হবেন, দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা আছে, ত্যাগী...তাকে দল বাছাই করে নেবে।

আগে দুর্নীতি যা ছিল শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তা হাজারগুণ বেশি হয়েছিল বলে মন্তব্য করেন এ্যানী। তিনি আরও বলেন, তিনি ( শেখ হাসিনা) তার বাবার চাইতে কয়েক শতগুণ বেশি ফ্যাসিবাদী এবং কর্তৃত্ববাদী শাসন চালিয়েছেন। এরশাদের চাইতে কয়েকশত ডিগ্রি বেশি ফ্যাসিবাদ ছিলেন তিনি। আমরা এরশাদকে স্বৈরচার বলি, আর হাসিনাকে ফ্যাসিবাদী বলি।

তিনি আরও বলেন, পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের রাজনীতি দেখেন, তিনি উন্নয়ন এবং নিজস্ব কর্মসূচি দিয়ে রাজনীতি করেছেন। তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা করেছেন, তখন তার বয়স কত ছিল আর যখন মৃত্যুবরণ করেন তখন বয়স কত ছিল। ৭১ থেকে ৮১, এই ১০ বছরের মধ্যে মাত্র সাড়ে তিন বছর ক্ষমতা ছিলেন।...জিয়াউর রহমান এবং বেগম খালেদা জিয়ার রাজনীতির মধ্যে কোনো ফ্যাসিবাদী এবং কর্তৃত্ববাদী রাজনীতি ছিল কি না দেখেন? বিএনপি কখন ফ্যাসিবাদের ভূমিকায় ছিল না।

২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতা থাকাকালে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে বলে দাবি করেন শহীদউদ্দিন এ্যানী। তিনি বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশের ষড়যন্ত্র ছিল। পার্শ্ববর্তী দেশ খালেদা জিয়াকে টার্গেট করেছিল। তারা তারেক রহমানের রাজনীতিকে টার্গেট করেছিল। তার নামে নানান অপপ্রচার করেছে, হাওয়া ভবন দিয়ে তার রাজনৈতিক ভাবমূর্তি নষ্ট করতে চেয়েছিল। যাতে তারেক রহমান তার নিজস্ব চিন্তা-চেতনা দেখাতে না পারে।

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উন্নয়নে কী ধরনের উদ্যোগ নেবে, জানতে চাইলে এ্যানী বলেন, বিদেশে আমাদের বন্ধু থাকবে, প্রভু থাকবে না। জিয়াউর রহমান সার্ক গঠন করেছিলেন। আমাদের পার্শ্ববর্তী ৭টি দেশ মিলে এটা একটা অ্যাসোসিয়েশন। যেকোনো সমস্যার আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সুন্দর সমাধান হয়ে যায়। কিন্তু বিগত আওয়ামী লীগ সরকার সার্ককে পুরোপুরি অকার্যকর করে দিয়েছে। তারা একটা দেশকে প্রাধান্য দিয়েছে। আশা করছি, ভবিষ্যতে সার্ক পুরোপুরি কার্যকরভাবে সক্রিয় হবে। সেজন্য আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের যে পররাষ্ট্রনীতি, সেখানে চায়নার জন্য একটা পররাষ্ট্রনীতি থাকবে, আমেরিকার জন্য একটা, যুক্তরাজ্যের জন্য আরেকটা এবং পার্শ্ববর্তী দেশের জন্য আলাদা পররাষ্ট্রনীতি থাকবে।

সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই যুগ্ম মহাসচিব বলেন, তারেক রহমান খুব শিগগিরই দেশে ফিরবেন। তার ফেরার জন্য লন্ডন ও বাংলাদেশে প্রস্তুতিও চলছে। তাকে বরণ করে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।

মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি আবু সালেহ আঁকন, সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল, সহ সভাপতি গাজী আনোয়ার, যুগ্ম সম্পাদক নাদিয়া শারমিন, কার্যনির্বাহী সদস্য মো. জুনায়েদ হোসাইন (জুনায়েদ শিশির)।

কেএন/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক পুনর্বিন্যাস পর্যায়ে আছে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা Jun 26, 2025
img
ছুটি নিয়ে সুখবর পেলেন সরকারি চাকরিজীবীরা Jun 26, 2025
img
নির্বাচনসামগ্রী কেনা শেষ হবে সেপ্টেম্বরের মধ্যে, জানাল ইসি Jun 26, 2025
img
শেখ হাসিনার পতন ন্যায়ের কাছে অন্যায়ের পতন : কাদের সিদ্দিকী Jun 26, 2025
img
বৈশ্বিক শান্তি সূচকে ৩৩ ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ Jun 26, 2025
img
গণঅভ্যুত্থান দিবসসমূহ পালনের লক্ষ্যে গঠিত ৩৬ সদস্যের জাতীয় কমিটি নিয়ে প্রজ্ঞাপন Jun 26, 2025
img
সাবেক মেয়র আইভী রিমান্ড শেষে কারাগারে Jun 26, 2025
img
‘ভারতীয় কম, পাকিস্তানি বেশি’—জোহরানকে নিয়ে মন্তব্য কঙ্গনার Jun 26, 2025
img
এনসিপি সব আসনে প্রার্থীই দিতে পারবে না : মান্না Jun 26, 2025
img
যুবলীগ নেতা পেলেন জুলাই যোদ্ধার স্বাস্থ্য কার্ড Jun 26, 2025
img
আল্লাহর রহমতে শেখ হাসিনার পতন হয়েছে : কাদের সিদ্দিকী Jun 26, 2025
img
শাহরুখ খানের পাসপোর্ট দেখে চমকে যান অনেকেই! Jun 26, 2025
img
৩ নির্বাচনের অভিযোগ তদন্তে সুপারিশ প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে Jun 26, 2025
img
কিছু হওয়ার আগেই হার্দিকের সঙ্গে সম্পর্কটা ভেঙে যায় : এষা Jun 26, 2025
img
ঋণ নবায়নের আগে সীমাতিরিক্ত অর্থ শোধ বাধ্যতামূলক Jun 26, 2025
img
খুলনায় পুলিশ কমিশনারের পদত্যাগ দাবি করে কেএমপি ঘেরাও Jun 26, 2025
img
অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হলো ফল উৎসব ২০২৫ Jun 26, 2025
img
চট্টগ্রামে করোনা আইসোলেশন সেন্টার ও অ্যান্টিজেন পরীক্ষা কেন্দ্র চালু Jun 26, 2025
img
রংপুর মেডিকেলে ১ জনের করোনা শনাক্ত Jun 26, 2025
img
মিরপুরে চালু হলো অনার্স বোর্ড Jun 26, 2025