সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ ডিজিটাল প্লাটফর্মে ছড়িয়ে পড়া কুমিল্লা ধর্ষণকাণ্ডের ভুক্তোভোগীর বিবস্ত্র ভিডিও, ছবি চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণ করতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ভুক্তোভোগীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের স্বরাষ্ট্র সচিব ও পুলিশের মহাপরিদর্শকে (আইজিপি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রবিবার এ সংক্রান্ত এক রিট আবেদনে প্রাথমিক শুনানির পর বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি সৈয়দ জাহেদ মনসুরের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এই আদেশ দেন। ভুক্তোভোগীর নাম-পরিচয়, গোপণীয়তা, ভিডিও ও ছবি প্রচার-প্রকাশ করা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।
স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, আইজপি, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার, কুমিল্লার পুলিশ সুপার, তথ্য সচিব, বিটিআরসি এবং কুমিল্লার মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
গত ২৬ জুন রাতে কুমিল্লার মুরাদনগরে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। পরে ভুক্তোভোগীর বিবস্ত্র ভিডিও, ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অনেক গণমাধ্যমও ভুক্তোভোগীর নাম-পরিচয় উল্লেখ করে খবর প্রকাশ করে।
এই ধর্ষণকাণ্ড নিয়ে মূল ধারার কয়কটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর-প্রতিবেদন যুক্ত করে রবিবার হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মীর নূরুন্নবী উজ্জ্বল। আদালতে রিটের পক্ষে তিনি নিজেই শুনানি করেন। আদেশের পর এই আইনজীবী দেশের একটি গণমাধ্যমকে বলেন, “রিটে এই ধর্ষণকাণ্ডের বিচারিক অনুসন্ধানের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছিল। যেহেতু মামলা হয়েছে, তদন্ত চলছে তাই আদালত আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তদন্তের অগ্রগতি জানিয়ে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।”
আগামী ১৪ জুলাই বিষয়টি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় রাখা হবে বলে জানান এই আইনজীবী।
রবিবার কুমিল্লা জেলা পুলিশের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) রাতে মুরাদনগরে একটি গ্রামে এক প্রবাসীর স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে ফজর আলী নামে এক ব্যক্তি আটক ও পিটুনির শিকার হয়। পরে ফজর সেখান থেকে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলে কিছু ব্যক্তি ভুক্তভোগীর ভিডিও ধারণ করে সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেয়। পরে মুরাদনগর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ‘আইনানুগ ব্যবস্থা’ গ্রহণ করে।
মুরাদনগর থানার ওসি জাহিদুর রহমান জানিয়েছেন, ফজর আলীকে আসামি করে শুক্রবার মামলা করেছেন এক হিন্দু নারী। বাদীর মেডিকেল পরীক্ষা করা হয়েছে।
মামলায় বলা হয়েছে, সপ্তাহ দুয়েক আগে ওই নারী বাবার বাড়ি বেড়াতে আসেন। বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) রাত ১১টার পর ওই নারীর বাবা-মা বাড়ির বাইরে যান। তখন ফজর আলী বাড়িতে প্রবেশ করে তাঁকে ধর্ষণ করেন। পরে স্থানীয়রা এসে ফজর আলীকে ধরে মারধর করে এবং কেউ কেউ ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেয়।
মামলার বাদীর ভাষ্য, টাকা ধার নেওয়া নিয়ে ফজর আলীর সঙ্গে তাঁদের পরিবারের পরিচয় ঘটে। এ সূত্র ধরেই ফজর আলী বাড়িতে ঢুকে।
ধর্ষণ মামলার মূল আসামি ফজর আলীকে গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়েছে পুলিশ। শনিবার ভোরে ঢাকার সায়েদাবাদ এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানান কুমিল্লার পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ খান। আর নির্যাতনের ঘটনার ভিডিও ধারণ ও ফেইসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে কুমিল্লার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে অনিক, সুমন, রমজান ও বাবু নামের চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
আরআর/টিকে/টিএ