জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহর ফেসবুক পোস্ট-এর সূত্র ধরে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ঘুষ দাবির কথিত অভিযোগ তোলা চার প্রতারককে গ্রেফতার করা হয়েছে।
রোববার (২৯ জুন) তাদের গ্রেফতারের তথ্য নিশ্চিত করলেন দুদক মহাপরিচালক আক্তার হোসেন।
গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিরা হলেন পিরোজপুরের মো. সেলিম (৪০), বাগেরহাটের মো. তরিকুল ইসলাম (৪০), ঢাকার মো. আতিক (৩৮), নোয়াখালীর মো. আব্দুল হাই সোহাগ (৩৫)।
এ বিষয়ে আক্তার হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গত ২৪ জুন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহর দেওয়া একটি পোস্ট দুদকের নজরে আসে। পোস্টটি আমলে নিয়ে বিষয়টি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। এ উদ্দেশ্যে পুলিশ সুপার পদমর্যাদার এক পরিচালকের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়। এরপর র্যাব ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতায় গত রাতে প্রতারক চক্রটিকে শনাক্ত করে চক্রের মূলহোতা মোহাম্মদ সেলিমসহ মোট চারজনকে গ্রেফতার করা হয়।
তিনি বলেন, গ্রেফতারের সময় আসামিদের কাছ থেকে একটি সনি ডিজিটাল এইচডি ক্যামেরা, বুম মাইক্রোফোন, সেলফি স্টিক, দুটি পাসপোর্ট, সমকাল পত্রিকার একটি আইডি কার্ড, সমকাল, এশিয়ান টিভি ও এফসি টিভিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভিজিটিং কার্ড (যেগুলোতে সোহাগ পাটোয়ারী নাম ব্যবহার করা হয়েছিল), সোনালী ব্যাংকের একটি চেক বই, ছয়টি মোবাইল ফোন এবং ১৩টি সিমকার্ড উদ্ধার করা হয়।
দুদকের ডিজি আরও জানান, প্রতারকচক্রটি দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের দুদকের চেয়ারম্যান, মহাপরিচালক বা কর্মকর্তার পরিচয়ে পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন মামলার নিষ্পত্তির নামে প্রতারণা করে আসছিল। তাদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। চক্রটি গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে দুদকের নজরে আসে। তারা একটি নির্দিষ্ট ফেসবুক গ্রুপ খুলে এবং মহাপরিচালকের ব্যক্তিগত ছবি ব্যবহার করে প্রতারণা চালিয়ে আসছিল। সেই সময় থেকেই চক্রটিকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে কাজ চলছিল।
সংবাদ সম্মেলনে দুদকের অপর মহাপরিচালক (প্রশিক্ষণ ও তথ্য প্রযুক্তি) আবদুল্লাহ-আল-জাহিদ এ বিষয়ে আরও বলেন, আমরা পুলিশ, র্যাব, এনটিএমসি এবং অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় প্রতারকদের শনাক্ত করেছি। প্রতিটি অপরাধের একটি নির্দিষ্ট প্যাটার্ন থাকে—তারা যে মোবাইল নম্বর ও ডিভাইস ব্যবহার করেছে, সেগুলোর আইএমইআই নম্বর ট্র্যাক করে অবস্থান শনাক্ত করা হয়েছে। সন্দেহভাজনদের অতীত কর্মকাণ্ড ও চলমান অবস্থান বিশ্লেষণ করে আমরা নিশ্চিত হয়েছি, তারাই এই অপরাধে জড়িত। এ ধরনের প্রতারক চক্র সাধারণত নীরবে কাজ করে, কিন্তু বিপদ বুঝলে দ্রুত স্থান পরিবর্তন করে। সেসব গতিবিধি থেকেই আমরা তাদের শনাক্ত করেছি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের তদন্তে দুদকের কোনো কর্মকর্তা জড়িত থাকার প্রমাণ মেলেনি। তবে পুলিশের তদন্তে যদি কোনো নাম উঠে আসে, দুদক অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে। তদন্ত সম্পূর্ণভাবে পুলিশের হাতে, দুদক এতে হস্তক্ষেপ করে না।
গত ২৪ জুন হাসনাত আবদুল্লাহ তার ফেসবুক পোস্টে, ‘স্বাধীন বাংলাদেশে দুদকের চা খাওয়ার বিল ১ লাখ টাকা’ শিরোনামে একটি স্ট্যাটাস দেন এবং এর সঙ্গে একটি অডিও যুক্ত করেন। রাত ১০টার দিকে দেওয়া ওই স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন- ‘আপনার নামে দুর্নীতির কোনো অভিযোগ না থাকলেও সেটার ক্লিয়ারেন্স নিতে আপনাকে ১ লাখ টাকা দিতে হবে। সম্প্রতি মাহমুদা মিতুর কাছে থেকে এই টাকা চাওয়া হয়েছে দুদকের ডিজি আকতার আর তার ডিডি পরিচয়ে। মাহমুদা মিতুকে বলা হয় আপনি একজন ডাক্তার, আপনার তো টাকা পয়সার অভাব থাকার কথা নয়, আপনি এক লাখ টাকা দিয়ে ক্লিয়ারেন্স নিয়ে যান।’
বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) মো. আকতারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহর পোস্ট কমিশনের দৃষ্টি গোচর হয়েছে।
পোস্টটিতে তিনি যাচাই-বাছাই ছাড়াই দুর্নীতি দমন কমিশনের মহাপরিচালকসহ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মানহানিকর বক্তব্য প্রদান করেন। পরে পুরো বিষয়টি আমলে নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করা হয়।
আরআর/টিকে/টিএ