বউ পেটানোর হার সবচেয়ে বেশি বরিশালে

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (BBS) এবং জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (UNFPA)-এর যৌথভাবে পরিচালিত ২০২৪ সালের এক জরিপে উঠে এসেছে নারীর প্রতি সহিংসতার একটি ভয়াবহ চিত্র।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অধিকাংশ নারী জীবনের কোনো না কোনো সময়ে তাদের স্বামী বা ঘনিষ্ঠ সঙ্গীর দ্বারা শারীরিক, মানসিক, যৌন কিংবা অর্থনৈতিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন।  

জরিপ অনুযায়ী, বরিশাল ও খুলনা বিভাগে নারীর প্রতি ঘরোয়া সহিংসতার হার সবচেয়ে বেশি। বরিশালে ৮২ শতাংশ এবং খুলনায় ৮১ শতাংশ নারী তাদের জীবনকালে স্বামী বা সঙ্গীর হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। অর্থাৎ প্রতি পাঁচ নারীর মধ্যে চারজনেরও বেশি এমন সহিংসতার অভিজ্ঞতা বয়ে বেড়াচ্ছেন, যা সমাজে নারীর মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিয়ে গভীর প্রশ্ন তোলে।

যেখানে ঘর হওয়ার কথা ছিল নিরাপত্তার আশ্রয়স্থল, ভালোবাসার পরিবেশ- সেই ঘরই পরিণত হয়েছে নীরব এক কারাগারে। যেখানে একজন নারী যিনি সমাজে মা, স্ত্রী, কর্মজীবী বা শিক্ষার্থী হিসেবে সম্মান পান, সেখানে ঘরে ফিরে তার সেই পরিচয়ের কোনো মর্যাদা থাকে না। বরং তিনি সহ্য করেন অব্যাহত নির্যাতন, যা অনেক সময় তাকে পরিণত করে চুপচাপ সহ্য করে যাওয়া এক ‘শিকারী’তে।

বরিশাল ও খুলনার পর চট্টগ্রামে ৭৬ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৭৫, রাজশাহীতে প্রায় ৭৫ এবং রংপুরে ৭৪ শতাংশ নারী ঘরোয়া সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এমনকি তুলনামূলকভাবে ‘কম’ সহিংসতার অঞ্চল হিসেবে বিবেচিত সিলেট ও ঢাকা বিভাগেও যথাক্রমে ৭৩ শতাংশ নারী এমন সহিংসতার শিকার। অর্থাৎ দেশের কোনো বিভাগেই এই হার ৭০ শতাংশের নিচে নামেনি।

জাতিসংঘের সংজ্ঞা অনুযায়ী, বাংলাদেশের নারীদের জীবদ্দশায় সহিংসতার গড় হার ৭০ শতাংশ। শুধু গত এক বছরেই ৪১ শতাংশ নারী এই নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তবে দেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বাস্তবতায় এই সংজ্ঞা কিছুটা সম্প্রসারিত করলে চিত্র আরও ভয়াবহ—জীবদ্দশায় ৭৬ শতাংশ নারী এবং গত বছরে ৪৯ শতাংশ নারী পারিবারিক সহিংসতার মুখোমুখি হয়েছেন।

প্রতিবেদনে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে- প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এলাকাগুলিতে নারীদের প্রতি সহিংসতার হার আরও বেশি। ঘরের ছাদ যেমন হারায়, তেমনি নারীর নিরাপত্তা, সম্মান ও মানবাধিকারও সংকটে পড়ে। দুর্যোগের সময় নারীদের লড়তে হয় কেবল প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সঙ্গে নয়, বরং ঘরের ভেতরের অমানবিকতা, দারিদ্র্যের চাপ, বাস্তুচ্যুতি এবং পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার বিরুদ্ধেও।

এমআর 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
‘নন ভায়োলেন্স’-এর বিশেষ গান দিয়ে ফের বড় পর্দায় ফিরছেন অভিনেত্রী শ্রিয়া Nov 12, 2025
img
ভারণাসি না সঞ্চারী?’- টলিউডের নতুন সিনেমার নাম নিয়ে কৌতূহল Nov 12, 2025
দিল্লি রেখে দিতে পারে টাইগার পেসার মুস্তাফিজুর রহমানকে Nov 12, 2025
সামাজিকমাধ্যমে আলোড়ন ফেললেন প্রভা Nov 12, 2025
খামারবাড়িতে পার্টি কম, কাজের আলোচনা বেশি Nov 12, 2025
ভোট হলে তোমাদের অস্তিত্ব থাকবে না, জামায়াতকে মির্জা ফখরুল Nov 12, 2025
চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিলেন বিএনপি নেতা জামান! Nov 12, 2025
সহিংসতার শঙ্কায় দেশের সব বিমানবন্দরে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি Nov 12, 2025
পালিয়ে থাকা নেতাদের কথায় হুজুগে ঝুঁকি নেবেন না Nov 12, 2025
১০ মিনিটে গোটা বিশ্বের সারাদিনের সর্বশেষ আলোচিত সব খবর Nov 12, 2025
img
ব্যর্থতা আমাকে চিনিয়েছে কে আমি : দেব Nov 12, 2025
জুলাই সনদ বাস্তবায়নে ৩-৪ দিনের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত: আইন উপদেষ্টা Nov 12, 2025
img
কোনো কিছুই নিখুঁত বা একতরফা হয় না : শুভশ্রী Nov 12, 2025
img
চট্টগ্রামের বাজারে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান, জরিমানা Nov 12, 2025
img
জবিতে সংঘর্ষের ঘটনায় ৪ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার Nov 12, 2025
img
বাংলাদেশে এসেছেন মুসলিম বিশ্বের প্রভাবশালী আলেম মুফতি ফজলুর রহমান Nov 12, 2025
img
মিয়ানমারের নির্বাচনে পর্যবেক্ষক না পাঠানোর সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের Nov 12, 2025
img
সৌম্য-মেহেদীর ব্যাটে খুলনার জয়, তানভির-মিশুর বোলিংয়ে বরিশালের সাফল্য Nov 12, 2025
img
ভোট পাওয়ার জন্য আওয়ামী তোষণের প্রতিযোগিতা চলছে: আসিফ মাহমুদ Nov 12, 2025
img
মোহাম্মদপুরে প্রিপারেটরি স্কুলে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ Nov 12, 2025