গাজায় গণহত্যা চালাতে ‘ক্ষুধা’কে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে ইসরায়েল: অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় গণহত্যা চালানোর জন্য মানুষকে অনাহারে রাখাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে ইসরায়েল। এমন মন্তব্যই করেছে যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

এছাড়া গাজায় শিশুদের জন্য পরিস্থিতি খুব ভয়াবহ বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল এখনও সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে ‘ক্ষুধা’কে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে, যা ফিলিস্তিনিদের ওপর চলমান গণহত্যার অংশ।

লন্ডনভিত্তিক এই সংগঠনটি বলেছে, গাজার পরিস্থিতি এখনো ভয়াবহ, বিশেষ করে শিশুদের জন্য। টানা বোমাবর্ষণ, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি, খাদ্য, পানি ও ওষুধের সংকট — সব মিলিয়ে মানবিক বিপর্যয় চরমে।
অ্যামনেস্টির সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাগনেস কালামার্ড বলেছেন, “ইসরায়েল যে জীবনধারণের মৌলিক চাহিদাগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে ধ্বংস করছে — তা আসলে শারীরিকভাবে ধ্বংস করে ফেলার এক কৌশল”। তার ভাষায়, এই অবস্থা গণহত্যার সংজ্ঞার মধ্যেই পড়ে।

অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সহায়তা নিতে গিয়ে শত শত ফিলিস্তিনি নিহত বা আহত হয়েছেন — কখনও ত্রাণ বিতরণ পয়েন্টে, কখনও সাহায্যের খোঁজে যাওয়ার পথেই। তাদের ভাষায়, “ইসরায়েলের পরিচালিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) ত্রাণ ব্যবস্থা প্রকৃতপক্ষে একটা ফাঁদে পরিণত হয়েছে। ক্ষুধার্ত মানুষ সেই ফাঁদে পড়ে প্রাণ হারাচ্ছেন।”

প্রতিদিন শত শত সাহায্যবাহী ট্রাক গাজার বাইরে অপেক্ষা করলেও ইসরায়েলের অনুমতি না মেলায় সেগুলো ঢুকতে পারছে না।

এদিকে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধের পর এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৬৬ শিশু অপুষ্টিজনিত কারণে মারা গেছে বলে জানিয়েছে অ্যামনেস্টি। আরও বহু শিশু অসুখে ভুগে মারা গেছে, যেগুলো প্রতিরোধযোগ্য ছিল যদি সেখানে খাবার ও ওষুধ থাকত।

উদাহরণ হিসেবে ৪ মাস বয়সী জিনান ইসকাফি নামে এক শিশুর মৃত্যুর তথ্য তুলে ধরা হয়। ছোট্ট এই শিশুটি দুধের অভাবে অত্যন্ত পানিশূন্যতা ও অপুষ্টিতে মারা যায়। গাজা শহর ও খান ইউনিসের হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিন যে শিশুরা স্বাস্থ্য পরীক্ষায় আসছে, তাদের প্রায় ১৫ শতাংশের মধ্যে গুরুতর বা মাঝারি অপুষ্টির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।

চিকিৎসকেরা বলছেন, “প্রাথমিক চিকিৎসার পরেও অনেক শিশু আবার অসুস্থ হয়ে ফিরছে, কারণ ক্যাম্পের পরিস্থিতি আরও খারাপ।”

এছাড়া চিকিৎসকরাও বিপদে রয়েছেন। নিজেরাই বাস্তুহারা ও অপুষ্টিতে ভোগা অনেক চিকিৎসক তাদের অসহায়ত্বের কথা জানিয়েছেন। অ্যামনেস্টি বলেছে, “আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় শুধু ইসরায়েলের গণহত্যা থামাতেই ব্যর্থ নয়, বরং তারা এই ধ্বংসযজ্ঞ চলতে দিচ্ছে।”

সংস্থাটি জোর দিয়ে বলেছে, ইসরায়েলের জন্য সব ধরনের সামরিক সহায়তা বন্ধ করতে হবে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িতদের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং যেসব ইসরায়েলি কর্মকর্তা অপরাধের সঙ্গে জড়িত, তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে।

এসএন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
৯৭ মিলিয়ন ডলার মানিলন্ডারিং মামলায় বেক্সিমকো গ্রুপের ২৮ জন অভিযুক্ত Nov 09, 2025
img
মানুষের পারিবারিক সিদ্ধান্তও নির্বাচনের জন্য আটকে আছে : আমীর খসরু Nov 09, 2025
নকলের অভিযোগে আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ঢালিউড কিং Nov 09, 2025
৫২২ ঘণ্টা হলেও কিছু করার নেই: ইসি সচিব Nov 09, 2025
img
বিএনপির মৃত্যুঘণ্টা বেজে গেছে : নাসীরুদ্দিন পাটোয়ারী Nov 09, 2025
img
অসুস্থ হয়ে পড়ায় হাসপাতালে নেওয়া হলো তারেক রহমানকে Nov 09, 2025
img
এখন পর্যন্ত কোনো দলের সঙ্গে গণঅধিকারের জোটের সিদ্ধান্ত হয়নি: নুর Nov 09, 2025
img
এবারের নির্বাচনে বিএনপিকে ছায়াশক্তির সঙ্গে লড়াই করতে হবে : টুকু Nov 09, 2025
img
ইরার হাত ধরেই মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তি পেলেন বিজয় Nov 09, 2025
img
আম তারেক বলাটা আদতে তার মাথার মুকুট : জাহেদ উর রহমান Nov 09, 2025
img
হঠাৎ অসুস্থতায় সিসিইউতে ফারুক, হার্টে রিং Nov 09, 2025
img
সোমবার দেশে আসছেন হামজা চৌধুরী, পরের দিন শমিত সোম Nov 09, 2025
img
পাকিস্তানের স্কোয়াড থেকে বাদ দেওয়া হলো হাসানকে Nov 09, 2025
img
সারাদেশে তাপমাত্রা কমার পূর্বাভাস Nov 09, 2025
img
স্বাধীনতার পর দেশে আওয়ামী লীগ বাকশাল ও স্বৈরশাসন চালু করেছিল: মঈন খান Nov 09, 2025
img
আগামী নির্বাচন আমাদের জন্য মাইলফলক হতে যাচ্ছে : সিইসি Nov 09, 2025
img
তারেকের দলকে নিবন্ধন না দিয়ে ইসি তার নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে : জাহেদ উর রহমান Nov 09, 2025
বিবিসি ‘প্রোপাগান্ডা মেশিন’: ট্রাম্পের প্রেস সেক্রেটারি Nov 09, 2025
img
বিএনপি নিজেরাই গোল খেয়ে এখন বেদনা নিয়ে ঘুরছে : আখতার Nov 09, 2025
img
মুসলিম শ্রমিকদের জন্য নিজ বাড়িতে নামাজের জায়গা করে দিলেন কোরিয়ান তরুণ Nov 09, 2025