‘বাংলাদেশে ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগ বলে কোনো রাজনৈতিক দল থাকবে না’

জনগণের বিরুদ্ধে যদি কোনো রাজনৈতিক দল অবস্থান নেয়, সেই দল অটোমেটিক বিলুপ্ত হয়ে যায় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামান রিপন।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ভুল রাজনীতি করেছে, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে, লুটপাট করেছে। জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। সুতরাং আওয়ামী লীগ বিলুপ্তির পথে চলে যাবে। বাংলাদেশে ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগ বলে কোনো রাজনৈতিক দল থাকবে না।

শুক্রবার (৪ জুলাই) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তৃণমূল নাগরিক আন্দোলন আয়োজিত ‘সারাদেশের বিভিন্ন স্তরে লুকিয়ে থাকা আওয়ামী দোসরদের গ্রেপ্তার এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ দ্রুত সৃষ্টি করার দাবিতে’ প্রতীকী তারুণ্য সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, এটা নিষিদ্ধ করা না করার বিষয় নয়। তাদের ভুলের রাজনীতির কারণে বাংলাদেশের মানুষ আর আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে সমর্থন করবে না। আওয়ামী লীগের রাজনীতি বাংলাদেশে ফিরে আসার কোনো সুযোগ নেই।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে আমরা বিজয় লাভ করেছিলাম ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট। যে আন্দোলনটা শুরু হয়েছিল ১৭ বছর আগেই। এই বিজয়ের মধ্যে আমাদের আকাঙ্ক্ষাগুলো ছিল মানুষ শোষণ-বঞ্চনা থেকে মুক্তি পাবে। এমপি, মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি যারা হবেন, তারা যেন নিজেদেরকে মোগল সম্রাট হিসেবে না ভাবেন- সেই ব্যবস্থার বিলুপ্তি ঘটবে। প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতিসহ সরকারি কর্মকর্তারা জবাবদিহিতার আওতায় আসবেন। সমস্ত কিছুর মধ্যে একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা থাকবে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হবে এবং সরকার জবাবদিহিতার মধ্যে থাকবে। রাষ্ট্র যখন গণতান্ত্রিক হয়, সরকার তখন জবাবদিহি করতে বাধ্য হয়।

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে কিছুদিন আগে একটা আন্দোলন হলো। সরকারি কর্মচারী-কর্মকর্তারা বললেন, তাদেরকে নাকি চাকরি থেকে বাদ দেওয়া যাবে না। কেন যাবে না? তিনি ঘুষ খাবেন, দুর্নীতি করবেন, ১৪ হাজার টাকা বেতনের কর্মচারী ঢাকা শহরে দুইটা বাড়ি বানিয়ে ফেলবেন, বিদেশে ছেলে-মেয়েকে পড়াবেন। এই ঘটনায় একজন মন্ত্রী হলে বলে রাজনীতিবিদরা চোর। আপনি যে মহাচোর, সেই কথাটা আপনাকে বলা যাবে না কেন? এই যে আপনারা অনেকেই মহাচোর, এই ব্যবস্থাটিকে জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে হবে।

বিএনপির এই নেতা বলেন, এই যে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে পরিবর্তনটি হয়েছে, এই পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আমরা সংস্কার চাই। এই মহাচোরদের আমাদেরকে আটকাতে হবে। কিভাবে আটকাবেন? বাংলাদেশে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন হয়েছে। আমার দলও অনেক সময় বলে না, ২০০৯ সালেও মহা ডিজাইন করে একটি নির্বাচন হয়েছে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতার পুনর্বাসিত করার জন্য। ২০০৮-০৯ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচন পরিকল্পনা করে হয়েছিল, বাংলাদেশটা যেন ভারতের একটি করদ রাজ্যে পরিণত হয়ে যায়। ভারতের কর্তৃত্ববাদ যেন প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই উদ্দেশ্যে ১/১১ সৃষ্টি হয়েছিল এবং সেই উদ্দেশ্য পূরণ করার জন্য ২০০৮-০৯ সালে যে নির্বাচন হয়েছিল, তার মাধ্যমে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার অবৈধ শাসন পাকাপোক্ত হয়েছে দীর্ঘ বছরের পর বছর। আজকে সেই অবস্থার বিলুপ্তি ঘটেছে।

রিপন বলেন, বাংলাদেশের ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে যে তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন হয়েছে, সেই নির্বাচনে আমলাতন্ত্র- ডিসি, এসপি, ইউএনওরা দিনের ভোট রাতে করতে সহায়তা করেছে, এখনো তারা প্রশাসনের বিভিন্ন বড় বড় পদে বসে আছে। তারা অনেকেই প্রমোশনের জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন। আগে তাদের আচরণের জবাবদিহি করতে হবে। জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে হবে। প্রশাসনের মধ্যে আওয়ামী লীগের যেসব লোক ঘাপটি মেরে আছে, বিগত তিনটি নির্বাচনে যারা বিতর্কিত কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে শেখ হাসিনাকে সাহায্য করেছে, তাদেরকে চাকরি থেকে বিতাড়িত করতে হবে এবং আইনের আওতায় আনতে হবে। বাংলাদেশের বহু লোক আছে, বেকার যুবক রয়েছে, চাকরির লোকের কোনো সমস্যা নেই। আওয়ামী লীগপন্থি লোকগুলোকে প্রশাসন এবং সচিবালয় থেকে বিদায় করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

আয়োজক সংগঠনের সভাপতি মফিজুর রহমান লিটনের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বুলু, রহিমা শিকদার প্রমুখ।

এসএন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
দাওয়াত না পাওয়ায় মাদ্রাসার অনুষ্ঠানের খাবার খেয়ে নষ্ট করে দিলেন বিএনপি নেতাকর্মীরা Sep 15, 2025
img
সেলেনা গোমেজের নতুন গান ‘সিঙ্গেল সুন’ আসছে শিগগিরই! Sep 15, 2025
img
ভিসি স্যারের প্রতি আমার সম্মান বর্তমানেও আছে ভবিষ্যতেও থাকবে: সাহস Sep 15, 2025
img
অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে ‘দৃষ্টিকটু’ পোশাক, ক্ষোভ প্রকাশ করলেন মুক্তি Sep 15, 2025
img
সাকিবের পরিবর্তে দলে যুক্ত হলেন স্কটল্যান্ডের কারি! Sep 15, 2025
img
প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়ে সিনেমা শেখাতে চান আমির Sep 15, 2025
img
শেখ হাসিনার মামলায় আর দু’একজনের সাক্ষ্য নেয়া হবে: চিফ প্রসিকিউটর Sep 15, 2025
img
মধ্যপ্রাচ্যে যাচ্ছে ১১ হাজার টন ইলিশ Sep 15, 2025
img
আওয়ামী লীগ আর হিন্দুস্তান একই পথের সাথী: জয়নুল আবদিন ফারুক Sep 15, 2025
“মানুষ সচেতন না হলে, পাসপোর্ট অফিসের দালাল থামবে না!” Sep 15, 2025
img
আপেলের সঙ্গে কমলার তুলনা, ‘সাইয়ারা’ প্রসঙ্গে আমিশা পাটেল Sep 15, 2025
img
পদোন্নতি পাওয়া পুলিশের ৬২ কর্মকর্তাকে একযোগে পদায়ন Sep 15, 2025
img
আ. লীগ ফিরে এলে তোমাদের হাড্ডিও খুঁজে পাওয়া যাবে না : ইলিয়াস Sep 15, 2025
img
শপথ নিলেন নেপালে সুশীলা কার্কির ৩ মন্ত্রী Sep 15, 2025
img
আজানের শব্দে কবর থেকে নড়ে উঠলো নবজাতক, পরিবার পলাতক Sep 15, 2025
img
ইতালিতে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার শিকার হন সোহা আলি খান Sep 15, 2025
নবুওয়াতের আগে নবীজির ব্যক্তিত্ব | ইসলামিক জ্ঞান Sep 15, 2025
নবীজির বিয়ের ঘটনা | ইসলামিক জ্ঞান Sep 15, 2025
এবার আইটেম গানে ধরা দেবেন সামিরা খান মাহি Sep 15, 2025
পাকিস্তানের দিকে ফিরেও তাকালেন না ভারতীয় ক্রিকেটাররা Sep 15, 2025