পুরোনো খেলায় নতুন প্লেয়ার নয়, খেলার নিয়ম বদলাতে এসেছি: নাহিদ ইসলাম

বগুড়ার সাতমাথা মুক্তমঞ্চে আজ শনিবার (৫ জুলাই) দুপুর দেড়টায় অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) এক পথসভা। জুলাই পদযাত্রা শেষে আয়োজিত এ পথসভায় দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এক উজ্জীবিত

বক্তব্যে বলেন, “গণ-অভ্যুত্থানের পর আমরা বলেছি—নতুন বাংলাদেশ লাগবে, নতুন সিস্টেম লাগবে। পুরোনো খেলায় আমরা অংশগ্রহণ করব না। চাঁদাবাজির ও সন্ত্রাসের রাজনীতিতে আমরা নেই। আমরা পুরোনো খেলায় নতুন প্লেয়ার হতে আসিনি, আমরা খেলার নিয়ম বদলাতে এসেছি। রাজনীতির নিয়ম বদলাতে হবে। দেশের হাল ধরতে ভালো, গ্রহণযোগ্য ও তরুণ প্রজন্মকে রাজনীতিতে নিয়ে আসতে হবে।”

তিনি বলেন, “জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে টালবাহানা হচ্ছে। জুলাই ঘোষণাপত্র অবশ্যই সংবিধানে যুক্ত হবে। জুলাই কোনো আবেগের বিষয় নয়, জুলাইয়ের পথেই আগামীর বাংলাদেশ পরিচালিত হবে।”

নাহিদ ইসলাম তার বক্তব্যে বলেন, “মুজিববাদীরা পলাতক। তারা ভারতে পালিয়েছে, কারণ এটা কোনো বাংলাদেশি দল ছিল না, এটা ছিল ভারতীয় পার্টি। গণ-অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশ আর কোনো বিদেশি ইশারায় চলবে না। নির্বাচন, রাজনীতি—সবকিছু নির্ধারণ করবে বাংলাদেশের জনগণ।” তিনি আরও ঘোষণা দেন, “আগামী ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নতুন বাংলাদেশের শপথ হবে, ঘোষণা করা হবে জুলাই ঘোষণাপত্র।”

আওয়ামী লীগ সরকারের ১৬ বছরের শাসনামলে বগুড়ার প্রতি চরম অবহেলার অভিযোগ এনে নাহিদ ইসলাম বলেন, “বগুড়ার নাম শুনলেই চাকরি দেওয়া হতো না, সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হতো না, বরং মিথ্যা মামলায় হয়রানি করা হতো। অথচ এই বগুড়া একসময় বাংলার রাজধানী ছিল। পুণ্ড্র সভ্যতার সূচনা এখান থেকেই। শিক্ষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য আর জ্ঞানবিজ্ঞানের আঁতুড়ঘর ছিল বগুড়া।”

তিনি বলেন, “আমরা সেই পুরোনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে চাই, বগুড়ার উন্নয়নে কাজ করতে চাই। এনসিপি কোনো বৈষম্য চায় না। বগুড়াবাসীর ন্যায্য অধিকার আদায়ে লড়াই করবে। আমরা চাই, যার যা প্রাপ্য তা নিশ্চিত হোক। নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।”

নাহিদ ইসলাম বগুড়ার প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “বগুড়ার প্রশাসন নিরপেক্ষ আচরণ করছে না। এ জেলায় দলবাজ প্রশাসন ও পুলিশের কোনো স্থান হবে না। প্রশাসন, পুলিশ ও আদালতকে নিরপেক্ষ থাকতে হবে। যদি কেউ পুরোনো কায়দায় দলবাজ প্রশাসন চালাতে চায়, তাহলে তার পরিণতিও হবে ২০১৮ সালের ভোট ডাকাতির দায়ে অভিযুক্ত ডিসিদের মতো।”

পথসভায় উপস্থিত ছিলেন দলের সদস্যসচিব আখতার হোসেন, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, নাহিদা সারওয়ার এবং কেন্দ্রীয় যুগ্ম মুখ্য সংগঠক সাকিব মাহদী।

এর আগে শনিবার সকাল ১১টায় বগুড়ার পর্যটন মোটেলে শহীদ পরিবারের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এনসিপির নেতারা। সেখানে নাহিদ ইসলাম বলেন, “বিচার, সংস্কার; তারপর নির্বাচন।”

পথসভায় সাধারণ মানুষের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। কেউ কৌতূহলবশত, কেউবা সরাসরি বক্তব্য শুনতে এসেছেন। তারা জানান, জুলাই আন্দোলন থেকেই তরুণদের কার্যক্রমে মুগ্ধ হয়ে পড়েছেন। দল গঠনের পর থেকে এনসিপির সমর্থক হিসেবে কর্মসূচিতে এসেছেন তারা। তবে নতুনদের এই দলের কেউ যাতে স্রোতে গা না ভাসায়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে বলেও অভিমত তাদের।

কেএন/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
অস্ত্রোপচারের পর বিশ্রামে দীপিকা কক্কর, মানতে হচ্ছে কড়া নিয়ম Jul 06, 2025
img
আজ পবিত্র আশুরা Jul 06, 2025
img
বিচার, সংস্কার এবং নতুন সংবিধানই হচ্ছে আমাদের প্রধান দাবি : নাহিদ ইসলাম Jul 06, 2025
img
প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক উৎসবমুখর নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় বিএনপি : প্রিন্স Jul 06, 2025
img
পিআরের বিরোধিতা করতে গিয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদ রাজনৈতিক শিষ্টাচার ভেঙেছেন : মারুফ Jul 06, 2025
img
‘বোলাররাই মার খায়, তুই পারবি’, তানভিরকে বলেছিলেন মিরাজ Jul 06, 2025
img
পাহাড়ি মেলার মাধ্যমে আমরা ঐতিহ্যকে তুলে ধরেছি : উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা Jul 06, 2025
img
ইসলামি দলগুলোর কথার সঙ্গে কাজের কোনো মিল নাই : বিএনপি নেতা হারুন Jul 06, 2025
img
সারজিসের বন্ধুর বাসা থেকে তিন বস্তা টাকা উদ্ধারের দাবিটি ভুয়া Jul 06, 2025
img
বিশ্বাস ছিল যে ২৪৮ রান আমরা ডিফেন্ড করতে পারব : মিরাজ Jul 06, 2025
img
আরব্য রজনীর রূপে নেটিজেনদের নজর কাড়লেন টিনা দত্ত Jul 06, 2025
img
সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যেতে হবে : আমিনুল হক Jul 06, 2025
img
আমার মনে হয়, ইলিয়াস আলীকে ভারতের কোনো একটি কারাগারে রাখা হয়েছে : এম এ মালেক Jul 05, 2025
img
দীর্ঘ বিরতির পর সিরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করছে ব্রিটেন Jul 05, 2025
img
শ্রীলঙ্কাকে হারানোর দিনে ৫ উইকেট নিয়ে ম্যান অব দ্যা ম্যাচ তানভীর Jul 05, 2025
img
তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে সিরিজে ফিরল টাইগাররা Jul 05, 2025
img
বাংলাদেশে পুশইনের জন্য বিশেষ বিমানে ২০০ জনকে সীমান্তে আনল ভারত Jul 05, 2025
img
ইরান থেকে সরে গেলেন জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষকরা Jul 05, 2025
img
ফারিন খানের পোস্ট ঘিরে জল্পনা, কী ইঙ্গিত দিলেন অভিনেত্রী? Jul 05, 2025
img
টলিউডের প্রিয় ‘এজেন্ট সাই’ আবারো ফিরছে বড় পর্দায় Jul 05, 2025