খুলনার ঐতিহাসিক শহীদ হাদিস পার্ক

বহু আন্দোলন সংগ্রামের সূতিকাগার খুলনার ঐতিহাসিক শহীদ হাদিস পার্ক। দৃষ্টিনন্দন এই পার্কে প্রাতঃভ্রমণ ও সান্ধ্যকালীন ভ্রমণ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড চলে।

বিনোদন পিপাসুদের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে এই পার্কটি। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে খুলনার সকল আন্দোলন-সংগ্রাম আবর্তিত হয়েছে শহীদ হাদিস পার্ককে ঘিরে। এ পার্কেই রয়েছে খুলনার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার।

খুলনা শহরের বাবুখান রোডে বাংলাদেশ ব্যাংকের খুলনা শাখার পশ্চিম পাশে এই পার্কটির অবস্থান। ঐতিহাসিক এই পার্কটি খুলনা শহরের অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি জায়গা। প্রতিদিন শত শত মানুষ এখানে বেড়াতে আসেন। মনোরম পরিবেশে মুক্ত বায়ু বুক ভরে নিতে এবং শরীর ও মন সতেজ করতে এই পার্কটির জুড়ি মেলা ভার। তাই খুলনার জনগণের কাছে সুপরিচিত একটি নাম এই শহীদ হাদিস পার্ক।

১৮৮৪ সালে খুলনা পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে শহরবাসীর বিনোদনের জন্য পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ‘খুলনা মিউনিসিপ্যাল পার্ক’ নামে এই পার্ক প্রতিষ্ঠা করে। ১৯২৫ সালের ১৬ জুন এই পার্কে মহাত্মা গান্ধী বক্তব্য রাখেন। তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে পার্কের নামকরণ করা হয় গান্ধী পার্ক। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর পার্কের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় জিন্নাহ পার্ক। এর পর আবার নামকরণ হয় খুলনা মিউনিসিপ্যাল পার্ক। পরে  সর্বশেষ ১৯৬৯ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি গণঅভ্যুত্থানের সময় আইয়ুব খান বিরোধী মিছিলে পুলিশ গুলিতে নিহত শহীদ শেখ হাদিসুর রহমান বাবুর নামে নামকরণ করা হয় ‘শহীদ হাদিস পার্ক’।

২০১১ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্পের আওতায় ঐতিহাসিক এই হাদিস পার্কের উন্নয়ন করা হয়। জিওবির তহবিল থেকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উদ্যোগে এ প্রকল্পের আওতায় পুকুরের পশ্চিম পাড়ে শহীদ মিনারসহ প্লাজা নির্মাণ করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় পার্কের চারদিকে আরসিসি বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ, পুকুরের চারপাশে রিটাইনিং আরসিসি ওয়াল ও রেলিং এবং ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়। পাবলিক টয়লেট নির্মাণ, ভূমি উন্নয়ন, নগর ভবনের সামনের দিকে পুকুরের মধ্যে ঝর্ণা নির্মাণ করা হয়। এছাড়া চমৎকার বৈদ্যুতিক কাজ এবং প্লানটেশন ও বিউটিফিকেশন সম্পন্ন করা হয়।

শহীদ হাদিস পার্কের উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকে তিনটি গেট রয়েছে। পশ্চিমের গেটের সামনের দিকে দৃষ্টিনন্দন শহীদ মিনার। একুশের শহীদদের স্মরণে এখানে খুলনার রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানসহ সর্বস্তরের মানুষ এই শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে থাকেন। শুধু একুশে ফেব্রুয়ারি নয়, বিভিন্ন ইস্যুতেও শহীদদের উদ্দেশ্য্ব এখানে শ্রদ্ধা জানানো হয়। সরকারি- বেসরকারি পর্যায়ে এই পার্কে নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। পার্কের অভ্যন্তরে স্বচ্ছ পানির বিশাল লেক, লেকের মাঝে মনোমুগ্ধকর পানির ফোয়ারা ও নানা রকমের মাছ রয়েছে। পুকুরের পাড়ে রেলিংয়ে দাঁড়িয়ে দর্শনার্থীরা ঝর্ণা ধারাসহ মাছের উথাল পাথাল দৃশ্য দেখেন। পার্কের উত্তর দিকে একটি কৃত্রিম টিলা রয়েছে। টিলায় উঠে অনেকেই নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখেন। পার্কের মধ্যে বসার জন্য কনক্রিটের বেঞ্চ রয়েছে। এখানে হাঁটার রাস্তার পাশেই রয়েছে অপরূপ সুন্দর ফুলের বাগান যা পুরো পার্কের পরিবেশে নিয়ে এসেছে সজিবতা ও বাড়তি সৌন্দর্য। পার্কটিতে রয়েছে এক পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। এই টাওয়ারের উপর থেকে এক নজরে খুলনা শহরটি দেখে নেয়া যায়। আর এখানে প্রবেশ একদম ফ্রি।

যাওয়ার উপায়:

খুলনা শহর থেকে রিকশা অথবা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় চড়ে সহজেই পৌঁছে যেতে পারবেন শহীদ হাদিস পার্কে।

ঢাকা থেকে সরাসরি সড়কপথে খুলনায় যেতে পারবেন। ঢাকা ও খুলনার মধ্যে চলাচলকারী বাসগুলোর মধ্যে রয়েছে- হানিফ এন্টারপ্রাইজ, গ্রিন লাইন, ঈগল পরিবহন ইত্যাদি। ভাড়া শ্রেণিভেদে ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা।

এছাড়া রেলযোগেও খুলনা যাওয়া যায়। এজন্য ঢাকা থেকে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ও চিত্রা এক্সপ্রেস নামে দুটি আন্তঃনগর ট্রেন রয়েছে।

 থাকার সুবিধা:

থাকার জন্য খুলনায় রয়েছে বেশ কিছু আবাসিক হোটেল। তাদের মধ্যে কয়েকটি হলো-

সিএসএস রেস্ট হাউজ (০৪১-৭২২৩৫৫)

হোটেল ক্যাসেল সালাম (০৪১-৭৩০৭২৫)

হোটেল রয়্যাল ইন্টারন্যাশনাল (০৪১-৮১৩০৬৭-৯) প্ল্যাটিনাম জুট মিলস লিমিটেড রেস্ট হাউজ (০৪১-৭৬২৩৩৫)

এলজিইডি রেস্ট হাউজ (০৪১৭২৩১৮৩)।

 

টাইমস/এইচইউ/এসআই

Share this news on:

সর্বশেষ

img
সার্ক ছাড়িয়ে নতুন জোটে চীন-পাকিস্তান, যুক্ত আছে বাংলাদেশও Jun 30, 2025
img
স্থলবন্দরগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ঘাটতি রয়েছে: নৌপরিবহন উপদেষ্টা Jun 30, 2025
img
'আমাদের উদ্দেশ্য ছিল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা', ম্যাচ শেষে বললেন মেসি Jun 30, 2025
img
দলে নেই সাবিনা, তবু ওয়েবসাইটে অধিনায়ক Jun 30, 2025
img
পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবির আড়ালে ষড়যন্ত্র রয়েছে: এ্যানি Jun 30, 2025
img
কাঠগড়ায় হাসিমুখে তুহিন, মমতাজের নীরবতা Jun 30, 2025
img
চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায় ৩ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকা: এনবিআর চেয়ারম্যান Jun 30, 2025
img
শিশুশিল্পী থেকে হলিউড আইকন জোহানসন Jun 30, 2025
img
হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে অভিনেত্রী শাওনের মা Jun 30, 2025
img
লাইভ স্ট্রিমিংয়ে নতুন নিয়ম আনছে ইউটিউব, কার্যকর ২২ জুলাই Jun 30, 2025
img
'ড. ইউনূসের জায়গায় অন্য কেউ সরকারপ্রধান হলে ৩ মাসও টিকতে পারতো না' Jun 30, 2025
img
সাতক্ষীরায় আটক আওয়ামী লীগ নেতা হারুন অর রশিদ Jun 30, 2025
img
‘মেট্রো ইন দিনো’ মুক্তির আগেই ট্রোলের শিকার, জবাবে সারার স্পষ্ট বার্তা Jun 30, 2025
img
মঙ্গলবার ব্যাংক হলিডে, লেনদেন বন্ধ Jun 30, 2025
img
‘মেসি হারেনি, হেরেছে মায়ামি ও ফুটবল’, ৪ গোলে বিধ্বস্তের পর বললেন ইব্রাহিমোভিচ Jun 30, 2025
img
সবার সামনে অপরাধীর শাস্তি হোক, দাবি সোহমের Jun 30, 2025
img
দুই দিনের অচলাবস্থার পর চট্টগ্রাম বন্দর পুরোদমে সচল Jun 30, 2025
img
এলজিআরডি সাথে গানও রাইখা দেন : তুষার Jun 30, 2025
img
৫০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করল দুদক Jun 30, 2025
নবীজি কেন মদিনায় হিজরত করেছিলেন Jun 30, 2025