মধ্যরাতে নারী ফুটবল দলকে সংবর্ধনার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম

প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপ নিশ্চিত করে ইতিহাস সৃষ্টিকারী নারী ফুটবল টিমকে অভিনন্দন জানিয়েছেন সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম। একই সঙ্গে বরাবরের মতোই বাফুফের প্রহসনের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ও ফাঁকা বুলির নিন্দা জানিয়েছেন ফোরামটি।

আজ সোমবার (৭ জুলাই) সংবাদমাধ্যমে ফোরামের সভাপতি প্রকৌশলী শম্পা বসু এবং সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট দিলরুবা নূরীর পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নারী ফুটবল টিমকে অভিনন্দন ও বাফুফের প্রতি নিন্দা জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, নারী ফুটবল টিম বীরের বেশে দেশে প্রবেশ করেছে। বাফুফে রাত আড়াইটার সময় তাদের সংবর্ধনার আয়োজন করেছে। দেশের ফুটবলপ্রেমী মানুষ এই খেলোয়াড়দের বরণ করার আকাঙ্ক্ষায় ছিল, যা এই মধ্যরাতের আয়োজনের মধ্য দিয়ে ভণ্ডুল করে দেওয়া হলো এবং খেলোয়াড়দেরও মানুষের এই আবেগ থেকে বঞ্চিত করা হলো। তারা কারণ হিসেবে দেখিয়েছে ঋতুপর্ণা ও মনিকা ভোরেই ভুটানের উদ্দেশে রওনা হবেন। কয়দিন সময় নিয়ে জনসাধারণকে যুক্ত করেও তো এই আয়োজন করা যেত। শ্রান্ত ক্লান্ত খেলোয়াড়দের বিশ্রামের সময় দিয়ে, তড়িঘড়ি না করে আয়োজনকে উপভোগ্য করা যেত।

আরও বলা হয়, মধ্যরাতের এই অভূতপূর্ব সংবর্ধনা শেষ পর্যন্ত প্রহসনে পরিণত হয়েছে। কারণ, সেখানে ফুলের তোড়া আর কিছু ফাঁকা বুলি ছাড়া কোনো কিছু পরিলক্ষিত হয়নি। অথচ কত কিছু করার ছিল বাফুফের! ২০২৩ সালের মার্চে অর্থসংকটের অজুহাত দিয়ে মেয়েদের অলিম্পিক বাছাইয়ে পাঠানো হয়নি, যেটি হয়েছিল মিয়ানমারেই। এ বছর ৩০ জানুয়ারি কোচের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের সময় তারা বেতনের আওতায়ও ছিলেন না। বেতনও পেয়েছেন অনিয়মিতভাবে। এখনো শীর্ষ খেলোয়াড়দের বেতন মাত্র মাসে ৫৫ হাজার টাকা। গত সাফ জেতার পর মেয়েদের দেড় কোটি টাকা বোনাস দেওয়া হবে বলেছিল বাফুফে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তা দেওয়া হয়নি। এমনকি সরকারের কাছ থেকে একুশে পদকের সঙ্গে পাওয়া চার লাখ টাকা অর্থ পুরস্কার ও চারটি আন্তর্জাতিক ম্যাচের ম্যাচ ফি তাদের দেওয়া হয়নি। এবার জিতে আসা নারী টিমের জন্যও কোনো পুরস্কার নেই। খেলোয়াড়রা পুরস্কারের জন্য খেলে না, দেশের জন্য খেলে। কিন্তু বাফুফের তো দায়িত্ব তাদের উৎসাহিত করার। তাদের খেলার পরিবেশ সহজ করে দেওয়ার, তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য আরও খেলা আয়োজন করার, কোচিং প্রক্রিয়াকে আধুনিক করার, দক্ষতাসম্পন্ন বিভিন্ন ক্ষেত্রের কোচ নিয়োগের ব্যবস্থা করার, বেতন কাঠামো বৃদ্ধি করার, বকেয়া পরিশোধের উদ্যোগ নেওয়ার, প্রতিশ্রুত অর্থ পরিশোধ করার! অথচ তারা কিছু ফাঁকা বুলি আউড়ে দায়িত্ব শেষ করলেন।

তারা বলেন, সাফ জয়ের জোড়া সাফল্যের পরদিন বাফুফের সঙ্গে খেলোয়াড়দের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছিল। ৬ মাস পরে গিয়ে আবার নতুন চুক্তি করা হয়েছিল। এই ৬ মাস তাদের জীবন কিভাবে চলেছিল, এই চিন্তাটুকু কি বাফুফের করার প্রয়োজন ছিল না? তিন ধাপে সেই চুক্তি নবায়ন করলেও খেলোয়াড়দের স্বস্তি ফেরেনি। আগের চুক্তিতে যাদের বেতন ছিল ৫০ হাজার টাকা, ৬ মাস পর তা হয়েছে ৫৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ ৬ মাস বেতন না পাওয়া ১৩ জনের বেতন বেড়েছে মাত্র ৫ হাজার টাকা! চুক্তির শর্তে আবার আছে, কোনো ফুটবলার বিদেশে লিগ খেলতে গেলে তিনি কেন্দ্রীয় চুক্তি অনুযায়ী বেতন পাবেন না। নতুন চুক্তিতে খেলোয়াড়দের মধ্যে বৈষম্যের চিত্র প্রকট। সাফ দলের বাইরে থাকা তরুণ খেলোয়াড়দের বেতন মাসে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা বাড়লেও সাফজয়ী দলের বেতন বিশেষ বাড়েনি। কোচ বাটলারের অধীনে খেলতে না চাওয়া ১৮ জনের প্রতি সমর্থন আছে এমন খেলোয়াড়দের বেতন না বাড়া এবং সমর্থন নেই এমন খেলোয়াড়দের বেতন বেড়ে যাওয়ার মতো ঘটনা হতাশাই তৈরি করছে। পুরুষ ফুটবলারদের তুলনায় নারী ফুটবলারদের বেতন বৈষম্য প্রকট। এখন নারী ফুটবলারদের মধ্যে বেতন নিয়ে এমন বৈষম্য করাটা কি ন্যায্যসঙ্গত? দেশে গণঅভ্যুত্থান হয়েছে বৈষম্যহীন সমাজের জন্য। অথচ এরকম একটি প্রতিষ্ঠিত ক্ষেত্র এবং দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনা খেলোয়াড়দের সাথেই এমন বৈষম্য চলছে।

অবিলম্বে এ বৈষম্য ও প্রহসন বন্ধ করে খেলোয়াড়দের ন্যায্য বেতন ও সম্মানজনক কাজের পরিবেশ নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম।


পিএ/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
সীমানা পুনর্বহালের দাবিতে ঢাকা-পাবনা মহাসড়ক অবরোধ Sep 14, 2025
img
মেক্সিকোর ইউকাতানে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১৫ Sep 14, 2025
img

জুলাই অভ্যুত্থান

আশুলিয়ায় মরদেহ পোড়ানো মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ আজ Sep 14, 2025
img
আগারগাঁওয়ে পিকেএসএফ ভবন-২ উদ্বোধন করলেন প্রধান উপদেষ্টা Sep 14, 2025
img
ডাকসু নেতাদের মধ্য থেকে ৫ সিনেট সদস্য নির্বাচিত Sep 14, 2025
img
ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ ঘিরে দুবাই পুলিশের কড়া সতর্কবার্তা Sep 14, 2025
img
মেসির পেনাল্টি মিস, শার্লটের কাছে বড় হার মিয়ামির Sep 14, 2025
img
হ্যারি কেইনের জোড়া গোলে হামবুর্গকে উড়িয়ে দিল বায়ার্ন Sep 14, 2025
img
এখনো আমরা ডোর টু ডোর শিক্ষার্থীদের কাছে যাব: সাদিক কায়েম Sep 14, 2025
img
বিএনপি নির্বাচিত হলে দুই মাসে গ্যাস সুবিধা পাবে নাটোরবাসী: দুলু Sep 14, 2025
img
ফরিদা পারভীনের মৃত্যুতে শাকিব খানের শোকবার্তা Sep 14, 2025
img
ঢাকাসহ ৬ বিভাগে অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কতা Sep 14, 2025
img
নেপালে অন্তর্বর্তী সরকারের নতুন মন্ত্রিসভা গঠিত হবে জনতার ভোটে, ঘোষণা আজ Sep 14, 2025
img
রণবীর-দীপিকার বিচ্ছেদ নিয়ে নীতু কাপুরের মন্তব্য Sep 14, 2025
img
ভেঙে দেয়া পার্লামেন্ট পুনর্বহাল চায় নেপালের শীর্ষস্থানীয় আট দল Sep 14, 2025
img
জিম্মি চুক্তির পথে প্রধান বাধা নেতানিয়াহু Sep 14, 2025
img
লালনগানের রানী ফরিদা পারভীন: এক অনন্ত সুরের যাত্রী Sep 14, 2025
img
আজ থেকে চাকসুর মনোনয়ন ফরম বিতরণ শুরু Sep 14, 2025
img
জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিয়ে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক আজ Sep 14, 2025
img

ভাঙ্গায় মহাসড়ক অবরোধ

ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ Sep 14, 2025