সরকারের চলা উচিত ধূমকেতুর গতিতে কিন্তু চলছে ৫০ মাইল স্পিডে : আবদুস সালাম

এই জামায়াতের জন্য কিন্তু আমাদেরকে অনেক সমালোচনা সহ্য করতে হয়েছে। সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টক শো অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে ইউনূস সরকারকে ধূমকেতুর গতিতে চলা উচিত ছিল বলেও মন্তব্য করেন।

অনুষ্ঠানের উপস্থাপিকা জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের করা একটি মন্তব্য তুলে ধরেন।

সেখানে নাহিদ ইসলাম বলেছিলেন, ‘যারা চাঁদাবাজির রাজনীতি করতে চায় তাদের বিদায় হবে হাসিনার মতো।’ উপস্থাপিকা এরপর বলেন, খুব সুস্পষ্টভাবে তিনি (নাহিদ) হয়তো বিএনপিকেই কথাটি বলেছেন।

উত্তরে আবদুস সালাম বলেন, ‘আমরাও তো তাই বলি। বিদায় হবে। আমরা কি জনগণের বাইরে নাকি? আর কারো কারো কথায় মনে হচ্ছে, দেশের মালিকানাটা তারা নিয়ে নিয়েছে।’

এরপর তিনি একই টক শোতে উপস্থিত গোলাম মাওলা রনির কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘তিনি কিন্তু সুন্দরভাবে একটা কথা বলেছেন। সেটা হচ্ছে, সরকারে কে কে আছে? রাষ্ট্রটা কে চালায়? পুরো দেশের মধ্যে বিএনপি, জামায়াত, অন্য কোনো দলে বা অন্য কোথাও কোনো অপরাধ নেই? অপরাধ যে করবে তার আবার দল কিসের? তার তো দল নেই, কোনো ধর্ম বা বর্ণ নেই্।’

তিনি আরও বলেন, ‘একটা জিনিস দেখেন, পাঁচ আগস্ট থেকে আট আগস্ট তারিখ পর্যন্ত কোনো সরকার ছিল না।

আগের সরকার মানে ফ্যাসিবাদী সরকার বলেছিল, এ রকম ঘটনা ঘটলে এক রাতে বা এক দিনে কয়েক লাখ লোক মারা যাবে এবং সেটাই হতো। কিন্তু আমাদের দেশনায়ক তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত ভূমিকা এবং তার এক নির্দেশের কারণে, বিএনপি এত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরেও, এত মারপিট, খুন, জখমের পরেও তা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।’

তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার পরে মওলানা ভাসানী পল্টন ময়দানে দাঁড়িয়ে বলছিলেন, মুজিব তোমার ছাত্রলীগ, যুবলীগ, লালবাহিনী, নীলবাহিনী থামাও। এরা দেশটাকে লুটেপুটে খেয়ে ফেলল। কিন্তু আওয়ামী লীগ বলেছিল, এত কষ্ট করছে, খাইলে কিছু খাইল। তাতে হইছে কী, শেখ মুজিবরাও খেয়েছে, সঙ্গে দেশও খেয়ে ফেলছে। এ জন্য বলছি পার্থক্যটা এখানেই।’

আবদুস সালাম বলেন, ‘এই জামায়াতের জন্য কিন্তু আমাদেরকে অনেক সমালোচনা সহ্য করতে হয়েছে। অনেক কিছু সহ্য করতে হয়েছে। সেই জামায়াতও তার (নাহিদ) সঙ্গে মানে একই সুরে সুর মিলাচ্ছে। রাজনৈতিকভাবে একটা জিনিস, যেটা বোঝা দরকার। আওয়ামী লীগ বা জামায়াত, বিএনপি বা এনসিপি অথবা ছাত্ররা কিন্তু বিএনপির প্রতিপক্ষ না, আমাদের প্রতিপক্ষ হলো ফ্যাসিবাদ। আমাদের প্রতিপক্ষ হলো আজকের আধিপত্যবাদী শক্তি।’

উপস্থাপিকা এনসিপির নাহিদ ইসলামের করা ওই মন্তব্যটি নিয়ে আবার প্রশ্ন করলে সালাম বলেন, ‘শেখ হাসিনাও একই ভাষায় বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের নামটাও জুড়ে দিত। বিএনপিকে রাজাকার শব্দ পর্যন্ত সহ্য করতে হইছে। দেশদ্রোহী, দেশ অপরাধী, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি পর্যন্ত আমাদেরকে শুনতে হইছে। কিন্তু রাজনীতির কারণে বিএনপি এসব কথায় মাইন্ড করে নাই।’
জামায়াত বিএনপির বিরুদ্ধে নানা কথা বলছে। উপস্থাপিকার এই কথার পরে সালাম বলেন, ‘জামায়াত ভুল করছে। এখনো সময় আছে মূল শত্রুটাকে টার্গেট করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা পাঁচ তারিখের পর থেকে বলে আসছি, ফ্যাসিবাদের মাথা বিদায় হইছে, কিন্তু ফ্যাসিবাদ তো রয়ে গেছে। ঘরের মধ্যে যদি সাপ নিয়ে বসবাস করেন, তা হলে তো সেই সাপ আপনাকে দংশন করবেই। আজ সেটাই হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই আজকে ফ্যাসিবাদের ষড়যন্ত্র তো বসে নেই। তিনি (হাসিনা) এখনো সীমান্তের ওপার থেকে বলতেছেন, আমি প্রধানমন্ত্রী, যেকোনো সময় টুস করে চলে আসব। এগুলো ষড়যন্ত্রের অংশ।’

সালাম বলেন, ‘রাষ্ট্রের দায়িত্ব অপরাধ যে করবে তাকে রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলার আওতায় নিতে হবে। সেটা তারা কেন নেয় না? আমার দায়িত্বটা আমি ঠিকই পালন করছি। তারেক রহমান তার দায়িত্বটা ঠিকই পালন করছেন, কিন্তু সরকার তার দায়িত্ব নিয়ে উদাসীন। এই উদাসীনতার পেছনে কোনো রাজনীতি আছে কি না, কোনো ষড়যন্ত্র আছে কি না সেটা খুঁজে দেখতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই সরকারকে তো ধূমকেতুর গতিতে চলা উচিত ছিল। কিন্তু দেখা যাচ্ছে তার গতি খুব স্লো। সরকারের স্পিড ২০০ বা ৩০০ মাইল হওয়া দরকার, সেটা ৫০ মাইল স্পিডে চলছে। এই সরকারের পক্ষে অনেক কঠিন কাজ করা সম্ভব ছিল। কারণ তারা তো আর নির্বাচনে যাবে না।’

তিনি বলেন, ‘কিন্তু তাদের (সরকার) তাদের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, এই কাজটা করা যাবে না, জনপ্রিয়তা কমে যাবে। আবার জনপ্রিয়তা বাড়ানোর জন্য এই কাজগুলো তাদের করতে হবে বা দেখাইতে হবে।’
 
কেএন/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
সেনাপ্রধানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করলেন মালদ্বীপ ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোর্স প্রধান Sep 14, 2025
img
শিল্পীদের এত পাপী ভাববেন না : কনকচাঁপা Sep 14, 2025
জাকসু নির্বাচনে বিজয়ীদের অভিনন্দন ডাকসু জিএস এস এম ফরহাদের Sep 14, 2025
img
জেন-জি বিক্ষোভে হওয়া সহিংসতাকে অপরাধমূলক কাজ বললেন সুশীলা কার্কি, তদন্তের ঘোষণা Sep 14, 2025
img
ফেব্রুয়ারির পর চলে যেতে হবে, মানুষের জন্য কিছু করে যেতে চাই: অর্থ উপদেষ্টা Sep 14, 2025
img
প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টার অনুষ্ঠানের স্ক্রিনে ভেসে উঠলো শেখ হাসিনা ও শেখ মুজিবের ছবি Sep 14, 2025
img

শামসুজ্জামান দুদু

নির্বাচনে বিএনপি জয়ী হলে পাচার করা টাকা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে Sep 14, 2025
img
শুল্ক ইস্যুতে আলোচনা করতে ঢাকায় আসছে মার্কিন প্রতিনিধিদল Sep 14, 2025
img
মালয়েশিয়ায় বিশ্বকাপের প্রস্তুতি বাংলাদেশের! Sep 14, 2025
img
বাংলাদেশিদের জন্য চীনা ভিসা আবেদনে নতুন নিয়ম চালু Sep 14, 2025
img
বাগেরহাটে টানা সোম-মঙ্গল-বুধবার হরতাল Sep 14, 2025
শিবির প্যানেল থেকে যেভাবে ডাকসুর নেত্রী হলেন জুমা! Sep 14, 2025
img
মালয়েশিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু ইসির Sep 14, 2025
img
ওড়না ছাড়া ছাত্রীকে দেখতে চান শিক্ষক, কলেজ গেটে ঝুলছে স্ক্রিনশট Sep 14, 2025
img
বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করতে চায় লাটভিয়া Sep 14, 2025
img
পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার চেষ্টা করছে সরকার : অ্যাটর্নি জেনারেল Sep 14, 2025
img
দুর্নীতির মামলায় স্ত্রীসহ ছাগলকাণ্ডের মতিউর রহমান রিমান্ডে Sep 14, 2025
img
আমি শিবের ভক্ত, বিষ গিলে ফেলব: মোদি Sep 14, 2025
img
রাকসুর ভোট গণনা ওএমআর মেশিনেই হবে: প্রধান নির্বাচন কমিশনার Sep 14, 2025
img
ভারতের বিপক্ষে যে একাদশ নিয়ে নামতে পারে পাকিস্তান Sep 14, 2025